অনেকেই শুধু পরিচিত ব্যক্তি, বন্ধু আর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফেসবুক ব্যবহার করেন। তবে এখন সাধারণ যেকোনো ব্যবহারকারীও ফেসবুকে আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। এর জন্য কোনো পেজ খোলারও প্রয়োজন নেই। এই পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের আগ্রহও আছে। তবে অনেকেই ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি নিয়ে শুরুতেই কিছু ভুল করে বসেন। আবার কনটেন্ট মনিটাইজেশন নিয়ে অনেকের কাছে সঠিক তথ্য থাকে না। ফেসবুক থেকে আয়ের খুঁটিনাটি তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যাক।
আগে ফেসবুক থেকে আয় করার জন্য অনুসারী, ভিউসহ নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হতো, তবেই মনিটাইজেশন প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল। তবে এখন নিয়ম বদলে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে ফেসবুকের কনটেন্ট নির্মাতা মুন্সী এনায়েত জানান, আগে শুধু পেজ থেকে ভিউ ও অনুসারীর নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরণ করার পর ফেসবুক মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আয় করা যেত। তবে এখন ফেসবুক পেজ ছাড়াও ব্যক্তিগত আইডি থেকে আয় করা সম্ভব। এ জন্য অবশ্যই ব্যক্তিগত আইডিকে প্রোফেশনাল মোডে রূপান্তর করতে হবে। ফেসবুক পেজ খোলার পর বা ব্যক্তিগত আইডিকে প্রোফেশনাল মোডে রূপান্তর করলেই যে আয় করার সুযোগ মিলবে বিষয়টি এমন নয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মনিটাইজেশনের জন্য ফেসবুক থেকে ইনভাইটেশন পাওয়ার পরই কেবল আয় করার সুযোগ মেলে। সাধারণত ফেসবুক নোটিফিকেশন ও ই–মেইলের মাধ্যমে এই মনিটাইজেশন ইনভাইটেশন পাওয়া যায়। এরপর সেখানে নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করে মনিটাইজেশন চালু করা যায়। তবে ফেসবুক থেকে আয়ের বিষয়ে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে নতুন কিছু নিয়ম ও শর্ত যুক্ত হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রোফেশনাল মোড চালুর পদ্ধতিব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টকে প্রফেশনাল মোডে রূপান্তরের জন্য প্রথমে স্মার্টফোন থেকে ফেসবুক অ্যাপে প্রবেশ করে অ্যাকাউন্ট লগইন করতে হবে। এরপর প্রোফাইল পেজে যেতে হবে। প্রোফাইল পেজে ওপরের দিকে থাকা তিনটি ডট মেনুতে ট্যাপ করতে হবে। প্রদর্শিত অপশন থেকে টার্ন অন প্রফেশনাল মোড এ ট্যাপ করতে হবে। পরের পেজে টার্ন অন বাটনে প্রেস করতে হবে। পরের পেজে নিচে থাকা কনটিনিউ বাটনে প্রেস করলেই ব্যক্তিগত আইডি প্রোফেশনাল মোডে রূপান্তর হয়ে যাবে।
কোন ধরনের কনটেন্ট থেকে আয় করা যায়ফেসবুকের নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন সব ধরনের কনটেন্ট থেকেই আয় করার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মুন্সী এনায়েত জানান, ফেসবুক স্টোরিজ, সাধারণ টেক্সট পোস্ট, রিলস ভিডিও ও ছবিসহ সব কনটেন্ট থেকেই আয় করা যায়। এখন স্টার মনিটাইজেশন নিয়ে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর আগ্রহ রয়েছে। অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও স্টার চেয়ে থাকেন। স্টার মূলত একটা গিফট প্রোগ্রাম, যেখানে কোনো নির্মাতাকে তাঁর অনুসরণকারীরা স্টারের মাধ্যমে গিফট দেওয়ার সুযোগ পান। রিলস ভিডিওতে এখনো ইন স্ট্রিম বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আয়ের অংশ ভাগাভাগি করে নেয় ফেসবুক। আর ছবি, সাধারণ টেক্সট পোস্ট ও স্টোরিজের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। সাধারণত ছবি, টেক্সট পোস্ট ও স্টোরিজের ক্ষেত্রে ফিডে প্রতি চারটি কনটেন্ট দেখার পর একটি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। এই প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের আয় নির্মাতার সঙ্গে ভাগাভাগি করে ফেসবুক।
আরও পড়ুনফেসবুক পেজ সফল করতে...২১ জানুয়ারি ২০২৩ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য যুক্তের পদ্ধতি
মনিটাইজেশন পাওয়ার পর পে–আউট অপশন থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যোগ করা যায়। যে অ্যাকাউন্ট যোগ করা হবে, সেই অ্যাকাউন্টেই উপার্জিত অর্থ জমা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত দেশের যেকোনো ব্যাংক পে–আউট অপশন থেকে যোগ করা যাবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যোগ করার সুযোগ থাকলেও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এখনো যোগ করার সুযোগ নেই।
আয়ের অর্থ উত্তোলনের পদ্ধতিফেসবুক থেকে উপার্জিত অর্থ তোলার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হয়। রায়হানিজম ট্রাভেল অ্যান্ড ফুড পেজের স্বত্বাধিকারী ও কনটেন্ট নির্মাতাদের মীর রায়হান জানান, মনিটাইজেশন চালুর পর আপলোড করা প্রতিটি কনটেন্ট থেকে সামান্য করে অর্থ জমা হতে থাকে। কোনো কনটেন্ট থেকে হয়তো ১ ডলার আবার কোনো কনটেন্ট থেকে হয়তো ২০ থেকে ৩০ ডলারও জমা হয়। কিন্তু উপার্জিত টাকা তোলার জন্য অন্তত ১০০ ডলার জমা হতে হবে। ১০০ ডলার জমা হওয়ার পরই কেবল সে অর্থ তোলা যায়। পে–আউটে যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট যোগ করার সুযোগ থাকলেও কিছু বাড়তি সতর্কতা মানতে হবে। অনেক ব্যাংকে ফেসবুক থেকে উপার্জিত অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর তাই অ্যাকাউন্টের তথ্য যুক্ত করার আগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কোন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা তুললে ঝামেলা কম হবে, সে বিষয়ে পরিচিত কনটেন্ট নির্মাতাদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুনফেসবুক বিপণন শিখে ছাত্রজীবনেই উদ্যোক্তা শাহেদ, মাসে আয় দেড় লাখ টাকা২৮ নভেম্বর ২০২৩ফেসবুকের পেমেন্ট মডেলফেসবুকের মনিটাইজেশন পাওয়ার পর বিভিন্ন মেট্রিক্সের ওপর ভিত্তি করে একজন নির্মাতা টাকা পেয়ে থাকেন। সিপিএম বা কস্ট পার থাউজেন্ড ইমপ্রেশনস, সিপিসি বা কস্ট পার ক্লিক এবং সিটিআর বা ক্লিক থ্রু রেট এসব মেট্রিক্স মেনে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের আয়ের অংশ ভাগাভাগি করে ফেসবুক।
মনিটাইজেশনের পর প্রয়োজনীয় টুলমনিটাইজেশন পাওয়ার পর অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত দুটি টুল ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে প্রোফেশনাল ড্যাশবোর্ড এবং ফেসবুক পেজের ক্ষেত্রে মেটা বিজনেস স্যুইটস ব্যবহার করা হয়। প্রোফেশনাল ড্যাশবোর্ডের তুলনায় মেটা বিজনেস স্যুইটসে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা থাকে। মেটা বিজনেস স্যুইটস ব্যবহার করে একটি পেজ চালানোর জন্য একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া যায়। তবে প্রোফেশনাল মোডের ব্যক্তিগত আইডিতে একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুনফেসবুক থেকেই শুরু দুই বন্ধুর কেক তৈরির উদ্যোগ, এখন ৪টি দোকানে বিক্রি মাসে ১৬ লাখ টাকা৩০ জানুয়ারি ২০২৫কনটেন্ট আপলোডপ্রতিদিন নিয়মিত বিরতিতে কনটেন্ট আপলোড করলে ফেসবুক থেকে ভালো আয় করার সুযোগ তৈরি হয়। এ বিষয়ে মীর রায়হান জানান, প্রতিদিন ফেসবুকে স্টোরিজ থেকে শুরু করে ভিডিও এমন ৫ থেকে ৭ ধরনের কনটেন্ট দেওয়া উচিত। এর ফলে দর্শকের সঙ্গে যুক্ততা বাড়বে। পাশাপাশি কোন সময়ে কনটেন্ট আপলোড করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত শুক্রবার সকালে এবং অন্যান্য দিনের সন্ধ্যার পরের সময়কে কনটেন্ট আপলোডের জন্য পিক আওয়ার ধরা হয়। আবার রোজার সময় অনেকে সাহরির সময়েও ভালো ভিউ পেয়েছেন।
কোন ধরনের কনটেন্ট থেকে বেশি আয় করা যায়ফেসবুকে আপলোড করা সব কনটেন্ট থেকেই যেহেতু আয় করার সুযোগ রয়েছে, তাই প্রশ্ন উঠতে পারে কোন ধরনের কনটেন্ট থেকে বেশি আয় করা যায়। মুন্সী এনায়েতের জানান, অন্যান্য কনটেন্টের তুলনায় স্টোরিজে আয় বেশি হয়। রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট যদি বিবেচনা করা হয় তবে সব থেকে বেশি আয় করার সুযোগ রয়েছে স্টোরিজে। কারণ, একটি ছবি তোলা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও তৈরির পেছনে সময় ও অর্থের বিনিয়োগের তারতম্য থাকে। ধরা যাক, একই সংখ্যক দর্শক দেখেছেন এমন স্টোরিজ থেকে ২ ডলার এসেছে আর ভিডিও থেকে আয় হয়েছে ৩ ডলার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আরওআই বেশি স্টোরিজের। তবে স্টোরিজে আয় বেশি বলে অন্য কনটেন্ট কম আপলোড করলে তা পেজ বা অ্যাকাউন্টের গ্রোথে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই নিয়মিতভাবে ছবি, টেক্সট, স্টোরিজ ও রিলস ভিডিও দিয়ে দর্শকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুনফেসবুকে কেনাকাটায় ‘ইনবক্সে আসেন’ বার্তায় ক্রেতা বাড়ে না কমে২৫ আগস্ট ২০২৪আয়ের সুযোগ যে কারণে বন্ধ হতে পারেফেসবুকের মনিটাইজেশনের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এগুলো অনুসরণ করে না চললে আয়ের সুযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মুন্সী এনায়েত জানান, অন্যের ভিডিও চুরি করে আপলোড করলে, অশ্লীল কোনো আধেয় দিলে, হিংসা, ঘৃণা, বর্ণবাদ, নৃশংস কনটেন্ট আপলোড করলে আয়ের সুযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মীর রায়হান জানান, মিউজিক এবং ল্যাংগুয়েজ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অন্যের মিউজিক ব্যবহার করলে সেখানে কপিরাইটের জন্য অ্যাকাউন্টে স্ট্রাইক পাওয়ার শঙ্কা থাকে। এ জন্য ফেসবুকের নির্দিষ্ট মিউজিক লাইব্রেরি থেকে মিউজিক নামিয়ে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার ইউটিউবের মিউজিক লাইব্রেরি থেকে নামানো মিউজিক ফেসবুক কনটেন্ট এ যুক্ত করলে কপিরাইট নিয়ে সমস্যা হতে পারে। ল্যাংগুয়েজ নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। মজার ছলে আমরা অনেক ধরনের শব্দ কমেন্ট সেকশন বা পোস্টে ব্যবহার করি। কিন্তু ফেসবুকের অ্যালগরিদম সেগুলোকে হেট স্পিচ হিসেবে বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে স্ট্রাইক দিতে পারে।
ফেসবুক পেজ নাকি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, কোনটি ভালোমুন্সী এনায়েত জানান, যদি কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে কেউ পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান তবে কখনোই আইডিকে প্রোফেশনাল মোডে রূপান্তর করা উচিত নয়। কারণ, আইডির রিচ একটি নির্দিষ্ট পরিসরে হয় কিন্তু পেজের রিচের কোনো সীমাবদ্ধতা নাই। খুব অল্প কিছু আইডিতে ভালো রিচ আছে। চেষ্টা করতে হবে পেজ নিয়ে কাজ করতে। ফেসবুক থেকে আয় করার জন্য অবশ্যই একটি নিশ বেছে নিতে হবে এবং সেই নিশ স্পেসিফিক প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট প্রকাশ করতে হবে। এভাবে অডিয়েন্সের কাছে একটি সলিড পরিচয় তৈরি হবে। ফেসবুকে সহজ করে কনটেন্ট প্রকাশ করতে হবে। অল্প কথায় কী বলতে চান, তা জানাতে হবে। হালকা মেজাজের কনটেন্ট, কৌতুক, হাস্যরসাত্মক কনটেন্টের ভিউ সাধারণত বেশি হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধরন র কনট ন ট থ ক কনট ন ট আপল ড এন য় ত জ ন ন অ য ক উন ট র ব যবহ র কর আপল ড করল ফ সব ক থ ক ফ সব ক প জ ফ সব ক র র জন য অ উপ র জ ত র প ন তর স ধ রণত
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।