নরসিংদীতে হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক ১২ ঘণ্টা পর উদ্ধার, নারী গ্রেপ্তার
Published: 11th, August 2025 GMT
নরসিংদী শহরের ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরির ১২ ঘণ্টা পর ঘটনায় জড়িত এক নারীকে গ্রেপ্তার ও নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রায়পুরা উপজেলার মরজাল এলাকা থেকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার ও নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। এর আগে গতকাল বেলা দুইটার দিকে হাসপাতালের কেবিন থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটে। চুরি হওয়া ওই নবজাতক নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের বাড়ৈআলগী এলাকার মো.
গ্রেপ্তার ওই নারীর নাম ফাতেমা বেগম (৪০)। তিনি শিবপুর উপজেলার কুমারটেক এলাকার সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী।
পুলিশ ও নবজাতকের পরিবার বলছে, গত শনিবার দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা মিথিলা আক্তার নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন। এ সময় স্বজনেরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। হাসপাতালটির কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের পরামর্শ দেন। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় এক দালাল তাঁদের কম খরচে অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে পার্শ্ববর্তী ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার হাসপাতালে নেন। রাত আটটার দিকে ওই হাসপাতালে মিথিলা আক্তার ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। পরে মা ও নবজাতককে একটি কেবিনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
গতকাল বেলা ১১টায় অভিযুক্ত ফাতেমা বেগম ওই হাসপাতালে আসেন। তিনি ওই কেবিনে গিয়ে নবজাতকের স্বজনদের বলেন, তাঁর এক স্বজনের এই হাসপাতালেই সিজার হবে, তিনি একটু আগে চলে এসেছেন। কিছুক্ষণ তাঁদের কেবিনে বসেন ওই নারী। বেলা দুইটার দিকে সুযোগ পেয়ে তিনি নবজাতককে কোলে নিয়ে পালিয়ে যান।
খবর পেয়ে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ওই হাসপাতালে গিয়ে চুরি হওয়া নবজাতকের পরিবারের সদস্য ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। পরে ঘটনাস্থল ও আশপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ওই নারীকে শনাক্ত করা হয়। এরপরই অভিযানে নামে পুলিশ। দিবাগত রাত দুইটার দিকে রায়পুরার মরজালের একটি বাড়ি থেকে ওই নারীকে আটক ও নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, ওই নারী নিজেকে রোগীর আত্মীয় পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি বেশ অনেকটা সময় তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন, শিশুটিও তাঁর কোলে ছিল। চুরি করে পালানোর পর জানা যায়, তিনি তাঁদের আত্মীয় নন।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানিয়েছেন, তাঁদের পরিবারে কোনো ছেলেসন্তান নেই। স্বামী তাঁকে নানাভাবে চাপ দিচ্ছিলেন। তাই তিনি নবজাতক চুরি করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও নবজ তকক দ ইট র দ ক ওই ন র
এছাড়াও পড়ুন:
হেমিংয়ের দম ফেলার ফুরসত নেই
স্রেফ চুক্তিতে সই করার অপেক্ষায় ছিলেন টনি হেমিং। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি শেষ করেই কাজে নেমে যান অস্ট্রেলিয়ান কিউরেটর। এর আগেও বাংলাদেশে কাজ করতে এসেছিলেন। কিন্তু পারেননি। বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দেন। এবার মাস প্রতি ৮ হাজার ডলার দিয়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সম্পর্কে সবটাই জানেন তিনি। এখানে চাওয়ার সঙ্গেই সব মিলে যায়। অথচ দেশের ক্রিকেটের প্রধানতম মাঠের বেহাল দশা। সমালোচনা করে মিরপুর শের-ই-বাংলার উইকেটকে কেউ কেউ ‘ধানক্ষেত’ বলে। এই ‘ধানক্ষেতের’ সমালোচনা তা-ও সহ্য করার মতো। কিন্তু এবার হেমিং আবিস্কার করেছেন মিরপুরের পুঁই শাকের বাগান! এ-ও বিশ্বাসযোগ্য।
জাতীয় দৈনিকে খবর বেরিয়েছে, স্টেডিয়ামের উইকেটগুলো ঘুরে দেখার পর আউটারের পিচ দেখার সময় হেমিংয়ের চোখ পড়ে পাশে থাকা একটি পুঁইশাকের বাগানে। প্রধান মাঠকর্মী রকির কাছে তিনি মজা করেই জানতে চান বিশ্বের অন্য কোনো স্টেডিয়ামে পিচের পাশে সবজির চাষ হয় কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তর ছিল না কারও কাছে।
আসলেও কী এমন কিছু আছে কিনা সেই বিষয়ে খোঁজ চালায় রাইজিংবিডি। গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহমুব আনাম অস্বীকার করেন এমন কিছুর। গ্রাউন্ডস কমিটির আব্দুল বাতেন অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হলেন না। তবে একাধিক গ্রাউন্ডসকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় পুঁই শাক নয় একটু আলাদা ধরণের শাকপাতা দেখেছেন হেমিং। যা নিয়ে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে তার। গ্রাউন্ডম্যানরাই তাকে বলেছেন, এটা পুঁইশাক।
তবে শাক যেটাই হোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটের পাশে এমন কিছু আছে তা আগে শোনা যায়নি কখনোই। এদিকে বিসিবির একাডেমি মাঠের পূর্ব পাশে শেষ দুইটি উইকেট একেবারে অকেজো। সেখানে পেপে, কলা গাছ মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। যা ভালোভাবে নেননি হেমিং।
মিরপুর মাঠ নিয়ে হেমিংয়ের মূল্যায়ন অনেকটা এমন, ‘‘এখানে সবটাই পাল্টে ফেলতে হবে।’’ তার সঙ্গে গত দুদিন যারা মাঠ ঘুরেছেন তাদেরকেই বলেছেন এমন কথা। তবে রাতারাতি তো পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়। এজন্য বিসিবির কাছে সময় চেয়েছেন। মিরপুরে সামনে খেলা দিতেও মানা করেছেন।
মাঠের মাটি, ঘাস, বীজ, যতটা পারছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। গ্রাউন্ডের পানি নিষ্কাষণে কোনো সমস্যা নেই। বৃষ্টি হলে পানি জমলেও দ্রুতই মাঠ খেলার উপযোগী করা যায়। যতটুকু জানা গেছে, হেমিং এখনই আউটফিল্ডের কাজ ধরবেন না। তার মূল চাওয়া, মিরপুরের ২২ গজে রান ফেরানো। অন্তত স্পোর্টিং উইকেটের ব্যবস্থা করা। এজন্য উইকেটে শুরুর সময়টা দিতে চান।
গামিনি ডি সিলভা ২০১০ সাল থেকে মিরপুরের দায়িত্বে। বাংলাদেশের অনেক সাফল্যের জন্য তার বানানো উইকেট প্রশংসিত হলেও সেসব আড়াল হয়ে গেছে ব্যর্থতার স্তুপে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের জন্য এই উইকেট বিশেষ কিছু কখনোই উপহার দিতে পারেননি। তাইতো সে-কালের সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাস বলতে বাধ্য হন, মিরপুরের উইকেটে লাগাতার খেললে ক্যারিয়ার আগেই শেষ হয়ে যেত।
গতকালের মতো আজও হেমিং ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন মিরপুরে। মূল মাঠ, একাডেমি মাঠ, আউটডোর মাঠ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করেছেন। মাঠ, আউটফিল্ড, মাঠের সীমানা পেরিয়ে দেয়াল পর্যন্ত যেসব খালি জায়গা পরে থাকে সেসব দেখেছেন। মাঠের পাশে থাকা পিচ কাভার, উইকেট কাভারগুলো সরিয়ে পানি ফেলেছেন। যেগুলোতে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে।
হেমিংয়ের প্রোফাইল তার পক্ষে কথা বলছে। ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান পিচ কিউরেটরদের একজন এই হেমিং। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন টার্ফ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। তিনি একজন মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শকও। তার কাজের অভিজ্ঞতা ব্যাপক ও বিস্তৃত। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি দীর্ঘদিন। পার্থের এখনকার মূল টেস্ট ভেন্যু অপ্টাস স্টেডিয়ামে তিনি ছিলেন অ্যারেনা ম্যানেজার।
দুবাইয়ে আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি ও দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিনি ছিলেন প্রধান কিউরেটর। ওমান ক্রিকেট একাডেমিতে ছিলেন আইসিসি পিচ পরামর্শক। আইসিসি ক্রিকেট একাডেমিতে কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক প্রেজেন্টার ও এডুকেটর হিসেবেও। এমনকি ফুটবলের মাঠ নিয়েও কাজ করার অভিজ্ঞতা তার আছে সৌদি আরবের রিয়াদে কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়ামের অ্যারেনা ম্যানেজার হিসেবে।
বিশেষজ্ঞ এই কিউরেটরকে বিসিবি এবার হেড অব টার্ফ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। মিরপুর মাঠ দিয়ে কাজ শুরু করা হেমিংয়ের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দেশের সব ক্রিকেট মাঠকে আরো সুন্দর করে তোলা।
ঢাকা/ইয়াসিন