লালমনিরহাটে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
Published: 11th, August 2025 GMT
লালমনিরহাট সদর উপজেলায় হেলাল হোসেন (৪৫) নামের এক সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার তিনি বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে থানায় মামলাটি করেন।
হেলাল হোসেন স্থানীয় সাপ্তাহিক ‘আলোর মনি’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পূর্বশত্রুতার জেরে উপজেলার মহেন্দ্রনগরের মকড়া ঢঢগাছ গ্রামে তাঁর ওপর হামলা হয়। এ সময় তাঁর মা শামসুন্নাহার বেগমও আহত হন। তাঁরা দুজন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে পুলিশ জুয়ার আসর থেকে স্থানীয় আবদুল আজিজকে আটক করে। পরে মুচলেকা দিয়ে তিনি ছাড়া পান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আজিজের পরিবার হেলালকে দায়ী করে হুমকি দিতে থাকে। হেলাল চলতি বছরের ১ মে এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গত শনিবার রাতে পেশাগত কাজে শহরে যাওয়ার পথে একই এলাকার মকবুল হোসেন, তাঁর ছেলে সোহরাব ও আবদুল আজিজ এবং তাঁদের স্বজনেরা হেলালকে আটকে লাঠি ও রড দিয়ে মারধর করেন এবং শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালান। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা হয়। চিৎকার শুনে তাঁর মা এগিয়ে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। স্থানীয় লোকজন মা-ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরন্নবী বলেন, মামলার পরই প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হেলাল হোসেন বলেন, ‘২০১২ সালেও সংবাদ প্রকাশের জেরে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছিলাম। এবার গ্রামের বাড়ির এলাকায় হামলার শিকার হলাম। আমি দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সেই ‘সুপারম্যান’ এখন ট্রাম্পপন্থী অভিবাসন এজেন্ট
লাল–নীল পোশাকে আকাশে উড়ে আসছেন তিনি, দিনে শান্ত স্বভাবের একজন সাংবাদিক, রাতে তিনি নায়ক— দুর্বল মানুষের রক্ষক, অন্যায়ের শত্রু। নব্বইয়ের দশকে টেলিভিশনের পর্দায় ‘লুইস অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান’–এ এই সুপারহিরো হয়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেতা ডিন কেইন। তিন দশক আগের সেই জনপ্রিয় সুপারম্যান এখন আর আকাশে ওড়েন না, হাতে নেই অপরাধ দমনের কাল্পনিক শক্তি। তবে নিজের ভাষায় তিনি এখনো ‘ন্যায়ের পক্ষে’। আর সেই ন্যায় রক্ষার নতুন মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বহুল বিতর্কিত সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। খবর ইউএনবি
৬ আগস্ট ফক্স নিউজের উপস্থাপক জেসি ওয়াটারসের টকশোতে হাজির হয়েই চমকে দেন ৫৯ বছর বয়সী ডিন কেইন।
তিনি জানান, শিগগিরই আইসিইতে একজন অনারারি এজেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। আগে থেকেই তিনি একজন রিজার্ভ পুলিশ অফিসার এবং ডেপুটি শেরিফ ছিলেন। ‘আমি আইসিই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা আমাকে দলে নিতে রাজি হয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, আইসিই সঠিক কাজ করছে’ বলেন কেইন।
এই ঘোষণা আসছে এমন একসময়, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করেছেন। আইসিইর বাজেট বেড়েছে ৭৫ বিলিয়ন ডলার, লক্ষ্য ২০২৯ সালের মধ্যে ১০ হাজার নতুন এজেন্ট নিয়োগ। ট্রাম্পের বিখ্যাত ‘বিগ বিউটিফুল ওয়াল’ প্রকল্প থেকেই এসেছে এই বরাদ্দ।
ডিন কেইন প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের গণনির্বাসন পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। তাঁর যুক্তি, ‘আমাদের দেশে নিয়মকানুন আছে। সবাইকে চাইলেই ঢুকতে দেওয়া যায় না। হ্যাঁ, সুপারম্যান অবশ্যই এক ‘এলিয়েন’ কিন্তু গল্পের ভেতরে তার আগমনও একপ্রকার শৃঙ্খলার মধ্যে।’
কেইনের এই মন্তব্য ঘিরে অনেকেই তর্ক তুলেছেন, কারণ সাম্প্রতিক সুপারম্যান চলচ্চিত্রে চরিত্রটিকে একজন অভিবাসী হিসেবে সহানুভূতিপূর্ণভাবে দেখানো হয়েছে। কেইন অবশ্য মনে করেন, রাজনৈতিক বার্তা নয়; বরং ‘আইনের শাসন’ই হওয়া উচিত মূল বার্তা।
সমালোচনার ঝড়
এই ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কৌতুক অভিনেত্রী মার্গারেট চো সরাসরি বলেন, ‘তোমার নিজের পরিবার–ইতিহাসে জাপানি ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা আছে, তবু কেন এমন সংস্থায় যোগ দিচ্ছ?’ টকশো ‘দ্য ভিউ’র সহ–উপস্থাপক আনা নাভারো পর্যন্ত তাঁর শারীরিক গঠন নিয়ে বিদ্রূপ করেন—যা আবার অন্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, আইসিই প্রায়ই আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে অভিযান চালায়। অনিবন্ধিত অভিবাসী তো বটেই, কখনো কখনো বৈধ বাসিন্দা ও নাগরিকদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। এসব অভিযানের ভিডিও ধারণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নজিরও রয়েছে।
সুপারম্যান থেকে এজেন্ট—যাত্রার প্রেক্ষাপট
ডিন কেইন ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত টেরি হ্যাচারের বিপরীতে ‘লুইস অ্যান্ড ক্লার্ক: দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান’–এ সুপারম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেন। তত দিনে তিনি আমেরিকান পপ কালচারের অংশ হয়ে যান। এরপর অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রিয়্যালিটি শো, রাজনৈতিক বক্তব্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।
আগে বলা হয়েছে, এখন তাঁর নতুন পরিচয়—আইসিইর ‘অনারারি এজেন্ট’। নিজের ভাষায়, ‘আশা করি, আমার মতো অনেকে এগিয়ে আসবেন এবং এই দেশকে রক্ষায় সাহায্য করবেন।’
বিতর্কের শেষ নেই
কেইনের এই সিদ্ধান্ত তাঁর ক্যারিয়ারের আরেকটি আলোচিত অধ্যায় হয়তো, তবে এর প্রভাব দুই মেরুতেই স্পষ্ট। সমর্থকেরা তাঁকে দেশপ্রেমী বলছেন, আর সমালোচকেরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ তাঁর সুপারম্যান ইমেজের সঙ্গে বেমানান।
তবে ডিন কেইনের কাছে এই বিতর্কের মূল্য নেই বললেই চলে। তাঁর চোখে, আকাশে উড়তে না পারলেও ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠা’ই আসল শক্তি, যা তিনি এবার বাস্তবের মাটিতেই প্রয়োগ করতে চাইছেন।