কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের ষাইটপাড়ায় (বেড়িবাঁধের পাশে) মোস্তফা বেগমের বাড়ি। গ্রামটির পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগর। গত জুলাই মাসে কয়েক দফা জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ২ আগস্টের জলোচ্ছ্বাসে মোস্তফা বেগমের ঘর সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এরপর দুই মেয়ে-এক ছেলে নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। নতুন করে ঘর নির্মাণ করার মতো জমি আর সামর্থ্য কোনোটাই নেই তাঁর।

মোস্তফা বেগম (৫৫) বলেন, তাঁর স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন। মাসখানেক ধরে স্বামীর খোঁজ নেই। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসে আক্ষেপ করেন। ভাবেন, সাগর কেন তার সব কেড়ে নিল।

১৯৯০ সালে মোস্তফা বেগমের বাড়ি ছিল বঙ্গোপসাগরের দেড় কিলোমিটার গভীরে। সেখানে এখন জাহাজ নোঙর করে। ৪০ শতকের বসতভিটাতে ছিল ২০-২৫টি নারকেলগাছ, কয়েকটি আম ও কাঁঠালগাছ। ছিল গরু-ছাগল হাঁস মুরগির খামার। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে পুরো গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে সাগরে তলিয়ে যায়। এরপর মোস্তফা ষাইটপাড়ায় এসে ঘর নির্মাণ করেন। গত দুই দশকে তিনবার স্থান পরিবর্তন করতে হয় তাঁকে। আক্ষেপের সুরে মোস্তফা বেগম বলেন, ৯১–এর ঘূর্ণিঝড়ের পর ৩৪ বছর পার হয়েছে। এখনো সেই ঝড় আর ঢেউয়ের ভয়ে থাকেন তিনি।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একাধিক লঘু ও নিম্নচাপের প্রভাব এবং উচ্চ জোয়ারের ধাক্কায় আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের তাবলেরচর, কাহারপাড়া, ষাইটপাড়া, বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, হায়দারপাড়া, তেলিপাড়া, আনিছের ডেইল গ্রামে পশ্চিম পাশে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ( পাউবো) সাড়ে ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েক শ ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। জোয়ারের ধাক্কায় বিলীন হয়েছে ৩০টির বেশি বসতবাড়ি। অধিকাংশ ঘর বাঁশ-কাঠ, পলিথিনের ছাউনিযুক্ত। লোনাপানিতে ডুবে আছে শত শত একরের ফসলি জমি, লবণ মাঠ।

কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মীর কাশেম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে ইউনিয়নের হাজি মফজল ও মৌলভিপাড়াতে বিলীন ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। তাতে জলবায়ু উদ্বাস্তু ৪৫০টি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসতি করছেন। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য এই ওয়ার্ডে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রও নেই।

পাউবোর দেওয়া তথ্যমতে, সাম্প্রতিক উচ্চ জোয়ারের ধাক্কায় উপজেলার আলী আকবরডেইল, কৈয়ারবিল, দক্ষিণ ধুরুং ও উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ২০-২৫টি অংশে প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। বিলীনের ঝুঁকিতে আছে আরও ছয়-সাত কিলোমিটার। দ্বীপ উপজেলার চার দিকে বেড়িবাঁধ আছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। পাকিস্তান আমনে নির্মিত বাঁধগুলো উচ্চতা ১০-১২ ফুট।

পাউবো কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো.

জামাল মুর্শিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা যেমন বেড়েছে, তেমনি ঘনঘন দুর্যোগও দেখা দিচ্ছে। গত জুলাই মাসেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে পাঁচটি লঘু ও নিম্নচাপ। সঙ্গে ভারী বর্ষণ। সব মিলিয়ে উচ্চ জোয়ারে বেড়িবাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে এখন পাঁচটি ভাঙা অংশে (বেড়িবাঁধে) বালুভর্তি জিও টিউব ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সাগর শান্ত হলে আলী আকবর ডেইল ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের সাড়ে ছয় কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ (সুপার ডাইক) নির্মাণের চেষ্টা চলছে।

ভাঙন বাড়ছে

উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৮৭২ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত পাঁচটি বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়ার চারপাশের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে অন্তত ২০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছিল। মৃত্যু হয় অন্তত ২৫ হাজার মানুষের।

একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক ও রাজাখালী নামের দুটি মৌজা মানচিত্র থেকে মুছে গেছে। এই দুটি মৌজার অন্তত ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজার শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি খাসজমি, চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, মিরসরাই, রাউজান, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এলাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে।

খুদিয়ারটেক ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগমও পরিবার নিয়ে থাকেন তাবলের চরে। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের শেষ দিকেও খুদিয়ারটেকে ৪০ হাজার মানুষের বসতি ছিল। এখন কেউ নেই। এই ওয়ার্ডের অন্তত ৩ হাজার একর ভূমি সাগরে বিলীন হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান ও কুতুবদিয়ার বাসিন্দা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কয়েক দশক আগে কুতুবদিয়ার আয়তন ছিল প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার। সাগরে বিলীন হতে হতে এখন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটারে ঠেকেছে। বর্তমান লোকসংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার। টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে আরও এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। গত তিন দশকে ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে দ্বীপ ছেড়েছে। জমি কমছে। জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিক মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরও বাড়বে।

পাউবো সূত্র জানায়, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই এবং ফেনী থেকে নোয়াখালীর রহমতখালী পর্যন্ত ৬৪২ কিলোমিটার উপকূল সুরক্ষায় সুপার ডাইক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। জলবায়ু তহবিলের ৮০ হাজার ১৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ না হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সুপার ডাইক প্রকল্পের কুতুবদিয়া অংশে পড়েছে ৬৩ কিলোমিটার।

পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কুতুবদিয়াতে ৪০ কিলোমিটারের সুপার ডাইক বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০ মিটার উচ্চতায় প্রস্তাবিত সুপার ডাইকের ওপরে দুই লেনের সড়ক, দুই দিকের ঢালুতে সিসি ব্লক বসানোর কথা ছিল। কিন্তু তহবিল সংগ্রহ না হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল ন হয় প রকল প জলব য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙছে সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া, ৩৪ বছরেও হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের ষাইটপাড়ায় (বেড়িবাঁধের পাশে) মোস্তফা বেগমের বাড়ি। গ্রামটির পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগর। গত জুলাই মাসে কয়েক দফা জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ২ আগস্টের জলোচ্ছ্বাসে মোস্তফা বেগমের ঘর সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এরপর দুই মেয়ে-এক ছেলে নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। নতুন করে ঘর নির্মাণ করার মতো জমি আর সামর্থ্য কোনোটাই নেই তাঁর।

মোস্তফা বেগম (৫৫) বলেন, তাঁর স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন। মাসখানেক ধরে স্বামীর খোঁজ নেই। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসে আক্ষেপ করেন। ভাবেন, সাগর কেন তার সব কেড়ে নিল।

১৯৯০ সালে মোস্তফা বেগমের বাড়ি ছিল বঙ্গোপসাগরের দেড় কিলোমিটার গভীরে। সেখানে এখন জাহাজ নোঙর করে। ৪০ শতকের বসতভিটাতে ছিল ২০-২৫টি নারকেলগাছ, কয়েকটি আম ও কাঁঠালগাছ। ছিল গরু-ছাগল হাঁস মুরগির খামার। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে পুরো গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে সাগরে তলিয়ে যায়। এরপর মোস্তফা ষাইটপাড়ায় এসে ঘর নির্মাণ করেন। গত দুই দশকে তিনবার স্থান পরিবর্তন করতে হয় তাঁকে। আক্ষেপের সুরে মোস্তফা বেগম বলেন, ৯১–এর ঘূর্ণিঝড়ের পর ৩৪ বছর পার হয়েছে। এখনো সেই ঝড় আর ঢেউয়ের ভয়ে থাকেন তিনি।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একাধিক লঘু ও নিম্নচাপের প্রভাব এবং উচ্চ জোয়ারের ধাক্কায় আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের তাবলেরচর, কাহারপাড়া, ষাইটপাড়া, বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, হায়দারপাড়া, তেলিপাড়া, আনিছের ডেইল গ্রামে পশ্চিম পাশে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ( পাউবো) সাড়ে ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েক শ ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। জোয়ারের ধাক্কায় বিলীন হয়েছে ৩০টির বেশি বসতবাড়ি। অধিকাংশ ঘর বাঁশ-কাঠ, পলিথিনের ছাউনিযুক্ত। লোনাপানিতে ডুবে আছে শত শত একরের ফসলি জমি, লবণ মাঠ।

কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মীর কাশেম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে ইউনিয়নের হাজি মফজল ও মৌলভিপাড়াতে বিলীন ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। তাতে জলবায়ু উদ্বাস্তু ৪৫০টি পরিবার ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসতি করছেন। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য এই ওয়ার্ডে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রও নেই।

পাউবোর দেওয়া তথ্যমতে, সাম্প্রতিক উচ্চ জোয়ারের ধাক্কায় উপজেলার আলী আকবরডেইল, কৈয়ারবিল, দক্ষিণ ধুরুং ও উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ২০-২৫টি অংশে প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। বিলীনের ঝুঁকিতে আছে আরও ছয়-সাত কিলোমিটার। দ্বীপ উপজেলার চার দিকে বেড়িবাঁধ আছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। পাকিস্তান আমনে নির্মিত বাঁধগুলো উচ্চতা ১০-১২ ফুট।

পাউবো কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা যেমন বেড়েছে, তেমনি ঘনঘন দুর্যোগও দেখা দিচ্ছে। গত জুলাই মাসেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে পাঁচটি লঘু ও নিম্নচাপ। সঙ্গে ভারী বর্ষণ। সব মিলিয়ে উচ্চ জোয়ারে বেড়িবাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে এখন পাঁচটি ভাঙা অংশে (বেড়িবাঁধে) বালুভর্তি জিও টিউব ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সাগর শান্ত হলে আলী আকবর ডেইল ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের সাড়ে ছয় কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ (সুপার ডাইক) নির্মাণের চেষ্টা চলছে।

ভাঙন বাড়ছে

উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৮৭২ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত পাঁচটি বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়ার চারপাশের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে অন্তত ২০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছিল। মৃত্যু হয় অন্তত ২৫ হাজার মানুষের।

একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক ও রাজাখালী নামের দুটি মৌজা মানচিত্র থেকে মুছে গেছে। এই দুটি মৌজার অন্তত ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজার শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি খাসজমি, চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, মিরসরাই, রাউজান, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এলাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে।

খুদিয়ারটেক ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগমও পরিবার নিয়ে থাকেন তাবলের চরে। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের শেষ দিকেও খুদিয়ারটেকে ৪০ হাজার মানুষের বসতি ছিল। এখন কেউ নেই। এই ওয়ার্ডের অন্তত ৩ হাজার একর ভূমি সাগরে বিলীন হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের প্রধান ও কুতুবদিয়ার বাসিন্দা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কয়েক দশক আগে কুতুবদিয়ার আয়তন ছিল প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার। সাগরে বিলীন হতে হতে এখন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটারে ঠেকেছে। বর্তমান লোকসংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার। টেকসই বেড়িবাঁধ না হলে আরও এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। গত তিন দশকে ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে দ্বীপ ছেড়েছে। জমি কমছে। জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিক মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সংকট আরও বাড়বে।

পাউবো সূত্র জানায়, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই এবং ফেনী থেকে নোয়াখালীর রহমতখালী পর্যন্ত ৬৪২ কিলোমিটার উপকূল সুরক্ষায় সুপার ডাইক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। জলবায়ু তহবিলের ৮০ হাজার ১৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ না হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সুপার ডাইক প্রকল্পের কুতুবদিয়া অংশে পড়েছে ৬৩ কিলোমিটার।

পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কুতুবদিয়াতে ৪০ কিলোমিটারের সুপার ডাইক বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০ মিটার উচ্চতায় প্রস্তাবিত সুপার ডাইকের ওপরে দুই লেনের সড়ক, দুই দিকের ঢালুতে সিসি ব্লক বসানোর কথা ছিল। কিন্তু তহবিল সংগ্রহ না হওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ