মামলা পরিচালনায় সম্পৃক্তদের হুমকি দিয়েছেন শেখ হাসিনা
Published: 11th, August 2025 GMT
মামলা পরিচালনায় সম্পৃক্ত প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও আদালতের কর্মচারীদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে করা মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়টি এসেছে। এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বিচারপতি মো.
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ও বুলবুলের কথোপকথন একটি অডিও গত বছরের অক্টোবরে ভার্চ্যুয়াল জগতে ছড়িয়ে পড়ে। এই অডিও সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় দুজনের কথোপকথন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি নয়।
গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। এ মামলার আরেক আসামি বুলবুলও পলাতক।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে শেখ হাসিনা ও বুলবুলের কথোপকথন (ফাঁস হওয়া অডিও) তুলে ধরা হয়েছে। এর এক জায়গায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সব তালিকা করো আর অফিসারদের বলো আমরা তালিকা পাঠাচ্ছি নেত্রীর কাছে। উনি চাইছেন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’ শেখ হাসিনার এই কথার পর বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী, জি আসসালামু আলাইকুম।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাকরি সামনেও করতে হবে, এটা ভুলে যায় না যেন। এক মাঘে শীত যায় না।’
এই অংশ (কথোপকথন) সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ না করে কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছেন হাসিনা। তবে ধারণা করা যায়, শেখ হাসিনা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের (প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন।
বুলবুলের সঙ্গে কথোপকথনের মাঝামাঝি সময়ে শেখ হাসিনা কী বলেছেন, সেটিও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। তোমরা তালিকা করো। ধরো অন্তত ২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। আর এক মামলার যে শাস্তি আর সোয়া ২০০ মামলায় সেই শাস্তি, তাই না? তো ঠিক আছে, সেই শাস্তি নেব কিন্তু তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।’
রায়ে বলা হয়েছে, বুলবুলের কাছে শেখ হাসিনা ২২৭ জনকে হত্যার দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করেছেন। সে জন্য বুলবুলকে তিনি ২২৭ জনের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছেন।
‘সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়’
অডিওতে শেখ হাসিনাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘একটা কথা আমি বলি, তোমাদের কার বাড়ি পোড়াইছে কে?’ তখন বুলবুল বলেন, ‘ওই ওরাই নেত্রী, সবাই, জামাত-বিএনপি সকলেই।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের বাড়িঘর নাই?’ বুলবুল বলেন, ‘আছে নেত্রী।’ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘরবাড়ি নাই।’ বুলবুল বলেন, ‘জি, আছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়?’ বুলবুল বলেন, ‘জি না, না নেত্রী, জি।’ এরপর শেখ হাসিনা, ‘আমাদের ঘরবাড়ি নাই, তাদেরও ঘরবাড়ি থাকবে না।’
কথোপকথনের এই বিষয়টি তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, এসব বলে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে বুলবুলকে উসকে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা ও বুলবুলের কথোপকথনের ওই অডিওর ফরেনসিক পরীক্ষার বাইরেও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বিষয়টির তদন্ত করেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই তদন্ত সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, গাইবান্ধার সাংবাদিক সুমন মিয়া ফাঁস হওয়া ওই অডিও প্রথমে পান। অডিওর কথোপকথনটি স্থানীয় সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বুলবুল। তদন্তে আরও উঠে আসে, ‘এ টিম’ নামের একটি গ্রুপের (অনলাইনভিত্তিক) মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে ও জুমে আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) গোপন সভা হতো। গত বছরের ২৫ অক্টোবর সে রকম একটি সভায় শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।
ট্রাইব্যুনালে তিন মামলা বিচারাধীন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা একটি মামলার এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর একটিতে আওয়ামী লীগের গত দেড় দশকের শাসনামলে গুম–খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায়ও শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত তদন ত সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
মামলা পরিচালনায় সম্পৃক্তদের হুমকি দিয়েছেন শেখ হাসিনা
মামলা পরিচালনায় সম্পৃক্ত প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও আদালতের কর্মচারীদের ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে করা মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়টি এসেছে। এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গত ২ জুলাই এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গতকাল রোববার ট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ও বুলবুলের কথোপকথন একটি অডিও গত বছরের অক্টোবরে ভার্চ্যুয়াল জগতে ছড়িয়ে পড়ে। এই অডিও সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় দুজনের কথোপকথন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি নয়।
গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। এ মামলার আরেক আসামি বুলবুলও পলাতক।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে শেখ হাসিনা ও বুলবুলের কথোপকথন (ফাঁস হওয়া অডিও) তুলে ধরা হয়েছে। এর এক জায়গায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সব তালিকা করো আর অফিসারদের বলো আমরা তালিকা পাঠাচ্ছি নেত্রীর কাছে। উনি চাইছেন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’ শেখ হাসিনার এই কথার পর বুলবুল বলেন, ‘জি নেত্রী, জি আসসালামু আলাইকুম।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাকরি সামনেও করতে হবে, এটা ভুলে যায় না যেন। এক মাঘে শীত যায় না।’
এই অংশ (কথোপকথন) সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ না করে কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়েছেন হাসিনা। তবে ধারণা করা যায়, শেখ হাসিনা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের (প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য) ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন।
বুলবুলের সঙ্গে কথোপকথনের মাঝামাঝি সময়ে শেখ হাসিনা কী বলেছেন, সেটিও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমার তো সারা বাংলাদেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। তোমরা তালিকা করো। ধরো অন্তত ২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। আর এক মামলার যে শাস্তি আর সোয়া ২০০ মামলায় সেই শাস্তি, তাই না? তো ঠিক আছে, সেই শাস্তি নেব কিন্তু তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেব। এটা যেন মাথায় থাকে।’
রায়ে বলা হয়েছে, বুলবুলের কাছে শেখ হাসিনা ২২৭ জনকে হত্যার দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করেছেন। সে জন্য বুলবুলকে তিনি ২২৭ জনের একটি তালিকা তৈরি করতে বলেছেন।
‘সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়’
অডিওতে শেখ হাসিনাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘একটা কথা আমি বলি, তোমাদের কার বাড়ি পোড়াইছে কে?’ তখন বুলবুল বলেন, ‘ওই ওরাই নেত্রী, সবাই, জামাত-বিএনপি সকলেই।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের বাড়িঘর নাই?’ বুলবুল বলেন, ‘আছে নেত্রী।’ হাসিনা বলেন, ‘তাদের ঘরবাড়ি নাই।’ বুলবুল বলেন, ‘জি, আছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে, সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়?’ বুলবুল বলেন, ‘জি না, না নেত্রী, জি।’ এরপর শেখ হাসিনা, ‘আমাদের ঘরবাড়ি নাই, তাদেরও ঘরবাড়ি থাকবে না।’
কথোপকথনের এই বিষয়টি তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, এসব বলে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে বুলবুলকে উসকে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা ও বুলবুলের কথোপকথনের ওই অডিওর ফরেনসিক পরীক্ষার বাইরেও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বিষয়টির তদন্ত করেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই তদন্ত সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, গাইবান্ধার সাংবাদিক সুমন মিয়া ফাঁস হওয়া ওই অডিও প্রথমে পান। অডিওর কথোপকথনটি স্থানীয় সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বুলবুল। তদন্তে আরও উঠে আসে, ‘এ টিম’ নামের একটি গ্রুপের (অনলাইনভিত্তিক) মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে ও জুমে আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) গোপন সভা হতো। গত বছরের ২৫ অক্টোবর সে রকম একটি সভায় শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।
ট্রাইব্যুনালে তিন মামলা বিচারাধীন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা একটি মামলার এখন সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর একটিতে আওয়ামী লীগের গত দেড় দশকের শাসনামলে গুম–খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায়ও শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।