টিন আর ত্রিপল দিয়ে ঘেরা উদ্যান। বাইরে টানানো হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম আকরামদের ছবি। প্রবেশ ফটকে লেখা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘নতুন বিজয় মেলা’। তবে ভেতরের ঢুকতেই দেখা গেল বাণিজ্যিক মেলার আবহ। পুরো উদ্যানজুড়েই জুতা, কাপড়, ব্যাগ—এসবের দোকান। এক কোণে ছোট্ট একটি স্থানে ঠাঁই হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছবি। আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যানে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেল।

সবুজে ঘেরা উদ্যানটিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে বিজয় মেলা শুরু হয় ৮ আগস্ট। ‘ছাত্রসমাজ চট্টগ্রাম মহানগর’ এর ব্যানারে আয়োজন করা হচ্ছে ১৫ দিনব্যাপী এ মেলার। এর আয়োজক নগর যুবদল নেতা আলিফ উদ্দিন ও তাঁর অনুসারীরা। তিনি নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভেঙে দেওয়ার পর নগর যুবদলের নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি।

১৯৭৯ সালে ব্যস্ততম ২ নম্বর গেটে গাছগাছালিতে ভরা দুই একর জায়গায় বিপ্লব উদ্যান গড়ে তোলা হয়। এরপর নানা সময়ে এটিতে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। মেলার আয়োজকদের দাবি, সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে জায়গা ব্যবহারে অনুমতি নিয়েছেন। মেলার অনুমতি নিয়েছে পুলিশের কাছ থেকেও। এদিকে উদ্যানে এভাবে মেলার অনুমতি দেওয়ার সমালোচনা করে এই উদ্যোগ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা।

এসব তোয়াক্কা না করে মেলার আয়োজন পুরোদমে চলছে। এ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইন ও ছাপা কাগজে ‘চট্টগ্রামে উদ্যানে যুবদল নেতার বিজয় মেলা, অনুমতি দিল সিটি করপোরেশন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সে সময় সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেছিলেন, জুলাই-আগস্টের ছবি প্রদর্শন করবে বলায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর মাঠে এক মাস পর কাজ শুরু হবে। এখন ফাঁকা, তাই দুই সপ্তাহের মেলা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

মেলায় পাটপণ্য ও কার্পেটের একটি দোকান। আজ আজ বিকেল সাড়ে চারটায় চট্টগ্রামের দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জয় ম ল য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলনকারীদের ফাঁসি দিতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা

আন্দোলনকারীদের ফাঁসি দিতে চেয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তাঁর এই বক্তব্যের সপক্ষে শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের টেলিফোন কথোপকথন (অডিও রেকর্ডের লিখিত রূপ) তুলে ধরেন।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গতকাল সোমবার সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর। তাঁর বক্তব্যে ওই অডিও রেকর্ডের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে অডিও রেকর্ডে কী আছে, তা ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান তিনি।

শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে মাকসুদ কামালের কথা হয়েছিল গত বছরের ১৪ জুলাই। ওই কথোপকথনের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, সেদিন মাকসুদ কামাল বলেছেন, ‘প্রত্যেক হল থেকে তো ছেলেমেয়েরা তালা ভেঙে বের হয়ে গেছে। এখন তারা রাজু ভাস্কর্যে, চার–পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে জমা হইছে। মল চত্বরে জমা হয়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে আমার বাসাও অ্যাটাক (আক্রমণ) করতে পারে।’

এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমার বাসা প্রটেকশনের (সুরক্ষার) কথা বলে দিছি।’ তখন মাকসুদ কামাল বলেন, ‘জি জি।’ এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে একবার করছে...।’

পরে মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ওই রকম একটা প্রস্তুতি...লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হইছে।’

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হলে হবে না, আমি পুলিশ এবং বিডিআর হয়ে বিজিবি আর...বলছি খুব অ্যালার্ট (সতর্ক) থাকতে এবং তারা রাজাকার হইতে চাইছে তো, তাদের সবাই রাজাকার। কী আশ্চর্য কোন দেশে বসবাস করি।’

জবাবে মাকসুদ কামাল বলেন, ‘জি জি…বলতেছে আমরা সবাই রাজাকার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তো রাজাকারের তো ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও তাই করব। একটাও ছাড়ব না, আমি বলে দিছি। এই এত দিন ধরে আমরা কিন্তু বলিনি, ধৈর্য ধরছি, তারা আবার বাড়ছে।’

এরপর মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বেশি বেড়ে গেছে এবং অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত...। আপা একটু ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাটা আরেকটু বাড়ানো...। আর আমার বাসার ওইখানেও...।’

তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্যাম্পাসের...ব্যবস্থা করছি, সমস্ত ক্যাম্পাসে…বিজিবি, র‍্যাব এবং পুলিশ—সব রকম ব্যবস্থা হইছে। তোমার বাসার ভেতরে লোক রাখতে বলছি। ভেতরে কিছু রাখা আছে...এত বাড়াবাড়ি ভালো না।’

‘বহিষ্কার করব ইউনিভার্সিটি থেকে’

শেখ হাসিনা ও মাকসুদ কামালের কথোপকথনের পুরোটাই সূচনা বক্তব্যে পাঠ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেদিন মাকসুদ কামাল আরও বলেছিলেন, ‘বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের ছেলেদেরকে মেরেছে। আরও দু–একটা হলে একই কাজ করেছে। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে সাদ্দাম (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি), ইনান (নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক), শয়ন (নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি) ওরা আমার বাসায় ছিল সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদেরকে আমি ডেকে নিয়ে আসছি, ওরাও আসছে। ওদের সাথে বসে ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলা করতে করতেই হাজার হাজার ছেলেমেয়ে একত্র হয়ে গেছে।’

এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোন দেশে বাস করি আমরা। এদেরকে বাড়তে বাড়তে তো...রাজাকারদের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, সবগুলাকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না।’

তখন মাকসুদ কামাল বলেন, ‘হ্যাঁ, এবার এই ঝামেলাটা যাক, এরপরে আমিও নিজে ধরে ধরে যারা এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, মেইন যারা আছে, এদের বহিষ্কার করব ইউনিভার্সিটি থেকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব এইগুলাকে বাইর করে দিতে হবে...আমি বলে দিচ্ছি আজকে সহ্য করার পরে অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে...কারণ ইংল্যান্ডে এ রকম ছাত্ররাজনীতির জন্য মাঠে নামল, কতগুলি মেরে ফেলায় দিল না?’

জবাবে মাকসুদ কামাল বলেন, ‘জি জি জি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই অ্যাকশন না নেওয়া ছাড়া উপায় নাই। আমরা এত বেশি সহনশীলতা দেখাই আজ এত দূর পর্যন্ত আসছে।’

এরপর মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এটা তো...আমরাও তো সহনশীলতা...আমি ছাত্রলীগকে বলছি যে তোমরা কোনো ধরনের ইয়ে করতে যাইও না। যেহেতু আদালতের বিষয়, আদালত নিষ্পত্তি করবে।’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘না, এ আদালত হবে না, আবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিছে।’

তখন মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আবার রাষ্ট্রপতিকে কেউ এই রকম বলে যে ২৪ ঘণ্টার রাষ্ট্রপতিকে কেউ আলটিমেটাম দেয় একটা দেশে।’

এরপর শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছে...বেয়াদবির একটা সীমা থাকে…!’

মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আপা, আমি আপনাকে যদি অন্য কোনো খারাপের দিকে যায়, আমি আবার একটু জানাব। কিন্তু রাতের বেলা জানাব না, হয়তোবা আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টার মধ্যে হলে জানাব।’

তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো অসুবিধা নাই...আমি আমি সব সময়ই ফ্রি।’

মাকসুদ কামাল বলেন, ‘জি জি জি, স্লামুআলাইকুম।’

‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ’

শেখ হাসিনা ও মাকসুদ কামালের কথোপকথনের বিষয়টি তুলে ধরার পর চিফ প্রসিকিউটর তাঁর সূচনা বক্তব্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমানের বেতার বার্তাও (পুলিশের ওয়্যারলেসে দেওয়া) হুবহু পড়ে শোনান। তিনি বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই বেতার বার্তায় হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমাদের সকল অফিসার যে যেখানে আছেন ডিউটি করছেন আমাদের নিজের জীবন–সম্পদ রক্ষা, অফিস–আদালত রক্ষা, জনগণের জীবন–সম্পদ রক্ষা করার জন্য আপনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। আমি বারবার...বলেছি, নির্দেশ দিয়েছি, আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছি যেখানে যেমন সিচুয়েশন (পরিস্থিতি) সেভাবে...আপনারা করবেন আপনারা নিলিং পজিশনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে আপনারা গুলি করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেন, ওভার।’

‘হত্যার নির্দেশ’

ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুল এলাকায় ৪০-৪৫ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় বলে সূচনা বক্তব্যে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডিএমপির তৎকালীন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল ও শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন সুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট করে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী তৎকালীন কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলামের গুলিতে চানখাঁরপুল ও আশপাশের এলাকায় ছয়জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যার নির্দেশের অডিও ক্লিপস উদ্ধার করা হয়েছে। সেই নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করে কনস্টেবল শেখ শফিক মোহাম্মদ গত বছরের ১৮ জুলাই ডিএমপি কন্ট্রোল রুমে একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন।

সূচনা বক্তব্যে তাজুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে শেষ হাসিনার এক টেলিফোন কথোপকথনের মাধ্যমে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও লেথাল উইপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করে নির্বিচার গুলির আদেশ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা যে আগে থেকেই ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন তা জানা যায় গত বছরের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামালের সঙ্গে তাঁর টেলিফোন কথোপকথনের মাধ্যমে। এই মামলা (গত বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়) গড়ে উঠেছে এক সুদৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য ভিত্তির ওপর, যা হলো প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

চানখাঁরপুলের মামলায় আট আসামির সবাই পুলিশের সাবেক সদস্য। তাঁদের মধ্যে হাবিবুর রহমান, সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, শাহ্ আলম ও ইমরুল পলাতক। গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আছেন আরশাদ হোসেন, সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল। কারাগার থেকে গতকাল তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

‘শহীদি মর্যাদায়’ দাফন

সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে চানখাঁরপুলের মামলায় গতকাল আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো দুটি মামলার। আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হওয়া অন্য মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি তিনজন। বাকি দুজন হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। অবশ্য সাবেক আইজিপি এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হয়েছেন। তিনি এখনো ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেননি। তবে ট্রাইব্যুনালের সামনে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে চানখাঁরপুলের মামলার বিচার হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

চানখাঁরপুর এলাকায় গত বছরের ৫ আগস্ট গুলিতে যে ছয়জন শহীদ হয়েছেন, তাঁদের একজন শিক্ষার্থী শাহারিয়ার খান আনাস (১৭)। তার বাবা সাহরিয়ার খান চানখাঁরপুলের এ মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে গতকাল ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। শহীদ আনাস হত্যাকাণ্ডের জন্য ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরসহ আট আসামিকে দায়ী করেন তিনি।

জবানবন্দিতে সাহরিয়ার খান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে তাঁর ছেলে আনাস একটি চিঠি লিখে আন্দোলনে যান।

ওই চিঠি সূচনা বক্তব্যে পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর। চিঠির এক জায়গায় আনাস লিখেছিল, ‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হোলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো।’

ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে আনাসের বাবা বলেন, সেদিন (৫ আগস্ট) বেলা আনুমানিক দেড়টার দিকে একটি ফোন পেয়ে তিনি মিটফোর্ড হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে ছেলের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান।

জবানবন্দির পর সাহরিয়ার খানকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আবুল হাসান, সাদ্দাম হোসেন, জিয়াউর রশিদ ও কুতুব উদ্দিন। জেরার সময় সাহরিয়ার খান বলেন, তাঁর ছেলের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। গোসল ছাড়াই ‘শহীদি মর্যাদায়’ রক্তাক্ত কাপড়ে আনাসের দাফন করা হয় বলে জানান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ