পণ্যবাহী ট্রাক গর্তে আটকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, ভোগান্তি
Published: 11th, August 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের গর্তে বারবার আটকা পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি। এতে মহাসড়কের দুই পাশে দেখা দেয় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট। সরাইল উপজেলার বেড়তলা থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় ও কুট্টাপাড় মোড় হয়ে বাড়িউড়া পর্যন্ত এ যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়েন যানবাহনের যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের পশ্চিম অংশে ঢাকা থেকে সিলেটগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাক গর্তে পড়ে আটকে যায়। এর পর থেকে যানজট শুরু হয়। ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ রেকার দিকে ট্রাকটি উদ্ধার করে। এরপর বেলা তিনটা পর্যন্ত চারটি ট্রাক গর্তে পড়ে আটকে যায়। বেলা তিনটার পর গর্তে আটকা পড়ে পণ্যবাহী একটি লরি। এতে বিকেল চারটা পর্যন্ত যানজট সরাইল উপজেলার বেড়তলা থেকে শুরু হয়ে বাড়িউড়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বিকেল চারটার পর যানজট কমতে থাকে।
সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ ৭-৮ বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে। কাজটি করছে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। নানা কারণে একাধিকবার কাজ বন্ধও হয়েছে। মহাসড়কের একপাশের কাজ প্রায় শেষ হলেও বিভিন্ন স্থানে গর্তের কারণে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
আজ সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের চারপাশে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে থেমে যাচ্ছে। এ ছাড়া গোলচত্বরের পূর্ব পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য নির্মিত বাইপাস সড়কটি বেদখল হয়ে পড়েছে। গোলচত্বরের তিন পাশে রয়েছে তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এতে গোলচত্বরের তিন–চতুর্থাংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সিলেট থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক সেলিম মিয়া বেলা তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আইলে আমাদের কাম শেষ। তেলের হিসাব ঠিক থাকে না। যা আই করি, এইখানে অর্ধেক শেষ অইয়া যায়।’
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
‘সোনায় মোড়ানো’ সড়ক দেখতে কেন আসছেন দর্শনার্থীরা(আগামীকাল সোমবার সকাল নয়টায় তুলবেন)
কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা এখন দর্শনার্থীদের পদভারে মুখর। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে নির্মিত হচ্ছে দেশের গভীর সমুদ্রবন্দর। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক। সড়কটি নির্মাণ করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় করা হয়েছে ৪৩৭ কোটি টাকা। বিপুল এই নির্মাণ ব্যয়ের কারণে সড়কটিকে ‘সোনায় মোড়ানো’ বলে মন্তব্য করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা। মহেশখালীতে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা একবার এই সড়কে আসেন। ছবি তোলেন, ভিডিও ধারণ করেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক শ দর্শনার্থী সড়কের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। কেউ কেউ আড্ডা-গল্পে সময় পার করছেন। তবে বেশির ভাগ দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান ফটকে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য রাজঘাট অংশে কুহেলীয়া নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ৮৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু। সেতু থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত সম্প্রসারিত দুই লেনের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কে পথচারীদের হাঁটার রাস্তা ও একাধিক সেতু-কালভার্ট রয়েছে। পুরো সড়কটি দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে।
সন্ধ্যায় সড়কের দুই পাশ এবং সেতুতে বাতি জ্বলে উঠলে সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপটির চেহারা পাল্টে যায়। আলোকিত এই সড়কের সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।
লাভ-ক্ষতির হিসাবদেশে এত দিন সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক ছিল ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সম্প্রসারিত এক্সপ্রেসওয়ে। সওজের অধীনে ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় করা হয় ১১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০১ কোটি টাকা। আর মাতারবাড়ী সড়ক প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের দ্বিগুণের বেশি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, জমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং সমুদ্র উপকূলের দুর্গম এলাকা হওয়ায় সড়কটি নির্মাণে ব্যয়ও বেড়েছে।
মাতারবাড়ী সড়কে কথা হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মহেশখালী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, কুহেলীয়া নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন সেতু এবং সড়ক পেয়ে মাতারবাড়ীর কিছু মানুষ লাভবান হলেও অনেকে হতাশ। কারণ, সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে কুহেলীয়া নদী ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। পলি ও বর্জ্য জমে নদীর অন্তত ১০ কিলোমিটার ভরাট হয়ে গেছে। তাতে মাতারবাড়ীর অন্তত এক হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। মাতারবাড়ীর পশ্চিম পাশে সমুদ্র উপকূলে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ মেগা প্রকল্প নির্মাণ করে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিলেও পূর্ব-দক্ষিণ ও উত্তর পাশে ২০-২৫ হাজার মানুষ প্লাবনের ঝুঁকিতে (ভাঙা বেড়িবাঁধ) পড়েছে। কুহেলীয়া নদীর তীর ভরাট করে সড়ক নির্মাণ বন্ধ রাখতে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করেছিল। কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি।
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনের সড়কে বেড়াতে আসা একটি পরিবার সেলফি তুলছেন