ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের গর্তে বারবার আটকা পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি। এতে মহাসড়কের দুই পাশে দেখা দেয় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট। সরাইল উপজেলার বেড়তলা থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় ও কুট্টাপাড় মোড় হয়ে বাড়িউড়া পর্যন্ত এ যানজট দেখা দেয়। ভোগান্তিতে পড়েন যানবাহনের যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের পশ্চিম অংশে ঢাকা থেকে সিলেটগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাক গর্তে পড়ে আটকে যায়। এর পর থেকে যানজট শুরু হয়। ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ রেকার দিকে ট্রাকটি উদ্ধার করে। এরপর বেলা তিনটা পর্যন্ত চারটি ট্রাক গর্তে পড়ে আটকে যায়। বেলা তিনটার পর গর্তে আটকা পড়ে পণ্যবাহী একটি লরি। এতে বিকেল চারটা পর্যন্ত যানজট সরাইল উপজেলার বেড়তলা থেকে শুরু হয়ে বাড়িউড়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বিকেল চারটার পর যানজট কমতে থাকে।

সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ ৭-৮ বছর ধরে ধীরগতিতে চলছে। কাজটি করছে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। নানা কারণে একাধিকবার কাজ বন্ধও হয়েছে। মহাসড়কের একপাশের কাজ প্রায় শেষ হলেও বিভিন্ন স্থানে গর্তের কারণে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আজ সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের চারপাশে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে থেমে যাচ্ছে। এ ছাড়া গোলচত্বরের পূর্ব পাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য নির্মিত বাইপাস সড়কটি বেদখল হয়ে পড়েছে। গোলচত্বরের তিন পাশে রয়েছে তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এতে গোলচত্বরের তিন–চতুর্থাংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সিলেট থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক সেলিম মিয়া বেলা তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আইলে আমাদের কাম শেষ। তেলের হিসাব ঠিক থাকে না। যা আই করি, এইখানে অর্ধেক শেষ অইয়া যায়।’

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চারটি ট্রাক ও একটি লরি গর্তে আটকা পড়ে। এগুলো আমরা রেকার দিয়ে উদ্ধার করেছি। বিশ্বরোড মোড়ে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিন আগে আমরা ১০ হাজার ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করেছিলাম। পরদিন এগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। স্থায়ীভাবে গর্ত ভরাট না করা হলে যানজট থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন ব্যাপার।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কে ধস 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় একটি সড়ক ধসে পড়েছে। ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কের দুরবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছেন চার ইউনিয়নের ১৪ গ্রামের মানুষ। তাদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন তারা।

শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল-কৈজুরি আঞ্চলিক সড়কের জয়পুর ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন খালের ওপর নবনির্মিত সেতুর দুই পাশে এ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। 

আরো পড়ুন:

বেইলি ব্রিজের পাটাতন খুলে নদীতে, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

দূরপাল্লার বাস বন্ধে ভোগান্তিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রীরা

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৮ মাস আগে ১ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডাস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা ও কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় ৬ লাখ ৩০ হাজার ৯১৬ টাকা ব্যয়ে সেতুর সংযোগ (সিসিকরণ) সড়ক নির্মাণ করা হয়। গত সপ্তাহে পাঁচিল-কৈজুরি আঞ্চলিক সংযোগ সড়কটি ধসে পড়ে।  

সড়কে চলাচলকারীদের অভিযোগ, নিম্নমানের কাজ এবং নিয়ম অনুযায়ী রড ছাড়াই নিম্নমানের পুরনো ইট ও লোকাল বালু ব্যবহার করে নামমাত্র গাইড ওয়াল দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে নির্মাণের এক মাস না যেতেই বৃষ্টিতে সড়কটি ভেঙে মানুষ ও যানবাহনের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবিতে গত শুক্রবার মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ উপস্থিত ছিলেন।

জয়পুরা গ্রামের নাসির উদ্দিন, কল্পনা বেগম ও আবু তাহের জানান, শিডিউল অনুযায়ী সংযোগ সড়কের পাইলিং ঠিকভাবে করা হয়নি। পুকুরে পানি থাকা সত্ত্বেও দায়সারাভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাত্র এক মাস আগে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করায় কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তা ভেঙে পড়েছে। এই সড়ক দিয়ে এখন যানবাহন তো দূরের কথা, পথচারীরাও চলাচল করতে পারছেন না।

স্থানীয় শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ, নীরব হোসেন ও আখিঁ খাতুন বলেন, অনেক কষ্ট করে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয় তাদের। রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় সবাই খুশি হয়েছিল। সংযোগ সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় স্কুল-কলেজে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিন শেখ ও আব্দুল আলিম জানান, সেতুটি নির্মাণের সময় ঠিকাদারকে শিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়েছি। ঠিকাদার সঠিক নিয়মে কাজ করেনি। পানির মধ্যে ৫০ ফুট পাইলিং না করে ২০ ফুটের কম পাইলিং করে সেতু নির্মাণ করেন তিনি। নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংযোগ সড়ক তৈরি করায় তা এক মাসের মাথায় ধসে পড়েছে। সঠিক তদারকি না থাকায় (পিআইও) অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে এসব অনিয়ম হয়েছে।

এক মাসের মাথায় সড়কটি ধসে পড়ার কারণ জানতে চাইলে প্রকল্পের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান আলী বলেন, ‍“নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। বিলও উত্তোলন হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে। এতে আমার কিছু করার নেই।”

শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল কালাম আজাদ বলেন, “আগের পিআইওর সময় সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমার সময়ে নির্মাণ করা সংযোগ সড়কটি বৃষ্টির কারণে ভেঙে গেছে। নতুন বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।”

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে গাইড ওয়ালের পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ সড়কটি ধসে পড়েছে। ঠিকাদারকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করে দেওয়া হবে।”

ঢাকা/অদিত্য/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সড়কে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, হুমকিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশ
  • ফতুল্লার পোস্ট অফিস-শিবু মার্কেট সড়ক সংস্কারে রিয়াদ চৌধুরী
  • শাহজাদপুরে নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কে ধস