যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের তিন দিন বাকি। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামানো নিয়ে এ বৈঠক হলেও ইউক্রেনকে সেখানে যুক্ত করা হচ্ছে না। এতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধের অবসান অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে।

ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী শুক্রবার। বিষয়টি ঘোষণা দিয়ে ৮ আগস্ট ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, দুই পক্ষের ‘ভালোর জন্য কিছু অঞ্চল হাতবদল’ করা লাগতে পারে। এ বৈঠক নিয়ে আপত্তির মুখে সম্প্রতি রয়টার্সকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, পুতিন–জেলেনস্কির সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পথ খোলা রেখেছেন ট্রাম্প। তবে আপাতত শুধু রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক হবে।

ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে এ বৈঠকে নেওয়া কোনো পরিকল্পনা কার্যকর হবে না বলে শনিবার জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। একই মত ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাসের। গতকাল রোববার তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনো চুক্তিতে অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যুক্ত করতে হবে। কারণ, এটি ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়।’

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য নয় ইউক্রেন। তারপরও দেশটির প্রতি সমর্থন জানিয়ে জোটের প্রধান মার্ক রুত্তে রোববার এবিসি নিউজকে বলেছেন, শুক্রবারের বৈঠক অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে। পাশাপাশি এটাও স্বীকার করতে হবে যে ইউক্রেনকে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। নিজেদের ভূরাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দেশটি।

ইউরোপীয় মিত্রদের এই সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলেনস্কি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে রোববার তিনি লিখেছেন, ‘যুদ্ধের সমাপ্তি অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে। আর আজ যারা ইউক্রেন ও আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’ এর আগে শনিবার ইউক্রেনে প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ।

বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ অঞ্চল রাশিয়ার দখলে রয়েছে। ট্রাম্প যে অঞ্চল ‘হাতবদলের’ কথা বলেছেন, তাতে ইউক্রেনকে অঞ্চলগুলোর কিছু অংশের দাবি ছাড়তে হতে পারে। ক্রেমলিনপন্থী বিশ্লেষক সের্গেই মারকভের ভাষ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের কাছে রাশিয়া ১ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ছেড়ে দিতে পারে। আর ইউক্রেনের কাছ থেকে ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার গ্রহণ করতে পারে।

পুতিন–ট্রাম্প বৈঠক থেকে ইউক্রেনের জন্য ভালো কিছু আশা করছেন না স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট অ্যান্ড্রুজের অধ্যাপক ফিলিপস পি ও’ব্রেইন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আলাস্কা বৈঠক থেকে আমরা যেটি দেখতে পাব, তা একপ্রকার নিশ্চিতভাবেই ইউক্রেন ও ইউরোপের জন্য বিপর্যয়কর হবে। ফলে এটি গ্রহণ করা না করা নিয়ে ইউক্রেনকে উভয়সংকটে পড়তে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ও ইউর প ইউক র ন র ইউর প র ইউর প য় বল ছ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে আমন্ত্রণ পেতে পারেন জেলেনস্কি: এনবিসি নিউজ

ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ বৈঠকে থাকছেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ নিয়ে সমালোচনা চলছে।

ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ১৫ আগস্ট-যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে। গতকাল শনিবার হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলাস্কায় পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন ট্রাম্প। তবে পুতিনের অনুরোধে এখন শুধু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের (ট্রাম্প-পুতিন) পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তবে শনিবারই মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ আগস্ট আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে হোয়াইট হাউস। বৈঠকটির বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন একজন ব্যক্তি এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে, জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি চূড়ান্ত নয়। সম্ভাবনার পর্যায়ে রয়েছে।

ইউক্রেনের শান্তি ফেরানোর সিদ্ধান্ত কিয়েভকে ছাড়া নেওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কি। জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপের পর আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশগুলোর নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তাই এ সংকট সমাধানে তারাও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠকের বিষয়টি গত শুক্রবার জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, দুই পক্ষের (রাশিয়া-ইউক্রেন) ভালোর জন্য কিছু ভূখণ্ড হাতবদল করা লাগতে পারে। ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত হিসেবে ইউক্রেনকে এসব ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দেওয়া লাগতে পারে-এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন ট্রাম্প।

ইউক্রেনের স্বার্থ রক্ষায় ইউরোপের গুরুত্ব

ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ড মস্কোর হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে শনিবার প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররাও মনে করেন, এমন শর্ত রাশিয়াকে ‘আগ্রাসনে’ উৎসাহিত করবে। এদিন ফ্রান্স, ইতালি, জার্মান, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান বিবৃতি দিয়ে ভূখণ্ড ‘হাতবদলের’ বিরোধিতা করেছেন।

বিবৃতিতে ইউরোপের নেতারা বলেন, ‘শক্তি খাটিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পরিবর্তন করা যাবে না’—এমন নীতির বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন তাঁরা। যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করা উচিত বর্তমান যে সীমান্ত রয়েছে, সেটি মাথায় রেখে। শুধু যুদ্ধবিরতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের শত্রুতা থামানোর বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইউরোপের নেতারা বলেন, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ও রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখা জরুরি। আর কূটনৈতিকভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা সমাধানের সময় কিয়েভ ও ইউরোপের নিরাপত্তার স্বার্থের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তাঁরা এ-ও বলেন, ইউক্রেনে শান্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে হতে পারে না।

আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিন বৈঠক আলাস্কায় কেন, জেলেনস্কি কি থাকছেন০৯ আগস্ট ২০২৫

ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা নিয়ে শনিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ঘণ্টাব্যাপী ওই আলোচনায় যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। তবে বৈঠকে ইউরোপের স্বার্থ রক্ষায় ল্যামি যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা কী প্রস্তাব দিয়েছেন, তা উল্লেখ করেনি হোয়াইট হাউস।

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধের ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁরা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে বের করার। একই সঙ্গে জেলেনস্কির প্রতি অটল সমর্থন জারি রাখার কথা বলেছেন দুই নেতা।

বার্লিনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের গবেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেন, যুদ্ধ থামাতে বর্তমানে যে প্রচেষ্টা চলছে, তা ‘কমবেশি বাস্তবসম্মত’ প্রথম কোনো উদ্যোগ। তবে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলে তা বাস্তবায়নের বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁর। কারণ, যেসব শর্তের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো ইউক্রেনের জন্য বিপর্যয়কর বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন:

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিয়েভের পাশে ইউরোপের নেতারা
  • ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে আমন্ত্রণ পেতে পারেন জেলেনস্কি: এনবিসি নিউজ
  • ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে জেলেনস্কি বললেন, তাঁরা কিছুই অর্জন করতে পারবেন না