কক্সবাজারে বন্যহাতির অস্তিত্ব সংকট, করিডোর হারিয়ে বিলুপ্তির শঙ্কা
Published: 12th, August 2025 GMT
বনভূমি ধ্বংস, প্রাকৃতিক করিডোর হারানো আর খাবারের অভাব- এই তিন বিপদের মুখে কক্সবাজারের বন্যহাতি। রোহিঙ্গা শিবির স্থাপন ও রেললাইন নির্মাণে বন্ধ হয়ে গেছে হাতি চলাচলের বহু পথ। ফলে গ্রামে ঢুকে পড়ছে হাতি। ফলে নষ্ট হচ্ছে ফসল, ভাঙছে ঘরবাড়ি, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। মারা যাচ্ছে হাতিও।
কক্সবাজার বনবিভাগ জানায়, গত ১০ বছরে কক্সবাজারে বন্যহাতির আক্রমণে মারা গেছেন ৬২ জন। বিদ্যুৎস্পৃষ্টসহ নানা কারণে প্রাণ হারিয়েছে ৩৩টি হাতি।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা- করিডোর পুনরুদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত না হলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে কক্সবাজার থেকে বন্যহাতি একেবারেই হারিয়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুন:
রাঙামাটির পাহাড়ে গোলাপি হাতি: ‘বিরল হলেও অস্বাভাবিক নয়’
মাগুরায় সড়কে হাতির আকস্মিক মৃত্যু
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, “বর্তমানে কক্সবাজারে মাত্র দুই শতাধিক হাতি আছে, যেখানে এক দশক আগে ছিল ৩০০-এর বেশি। বনভূমিতে খাবারের ব্যবস্থা ও হাতি-মানুষের সংঘর্ষ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও হাতির নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা জরুরি।”
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “রোহিঙ্গা শিবির ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কারণে বহু করিডোর বন্ধ হয়ে গেছে। বন ধ্বংস ও খাবারের অভাবে হাতি লোকালয়ে চলে আসছে, এতে প্রাণহানি ও কৃষির ক্ষতি বাড়ছে। নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত না হলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে কক্সবাজার থেকে বন্যহাতি একেবারেই হারিয়ে যেতে পারে।”
চকরিয়ার ডুলাহাজরা এলাকার কৃষক রহিম উল্লাহ বলেন, “প্রায় প্রতি রাতেই হাতি গ্রামে ঢোকে। তারা ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়, ফসল নষ্ট করে। খবর দিলে বন বিভাগের রেসপন্স টিম এসে হাতি তাড়িয়ে দেয়।”
পরিবেশ সাংবাদিক এমআর মাহমুদ বলেন, “করিডোর হারিয়ে হাতি গ্রামে ঢুকে ধানক্ষেত, কলাগাছ ও সবজি ক্ষেত নষ্ট করছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে, অথচ পরিবেশের জন্য হাতির বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি।”
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিন জানান, “হাতির খাবারের জন্য বাঁশ, ঘাস, কলাগাছ রোপণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় রেসপন্স টিম সর্বদা প্রস্তুত।”
নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ.
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বলেন, “হাতি-মানুষ সংঘর্ষ নিরসনে কাজ চলছে, সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে এবং হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।”
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, “আগে এখানে হাতির জন্য ১২টি করিডোর ছিল, বর্তমানে অর্ধেকের বেশি বন্ধ হয়ে গেছে। করিডোর পুনরুদ্ধার ও বন দখল বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।”
বিশ্ব হাতি দিবস
আজ বিশ্ব হাতি দিবস। প্রতি বছর ১২ই আগস্ট বিশ্বজুড়ে এই দিবসটি পালিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য হাতিদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
বিশ্ব হাতি দিবস ২০১২ সাল থেকে পালিত হচ্ছে, যখন কানাডীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা প্যাট্রিসিয়া সিমস এবং কানাজওয়েস্ট পিকচার্সের মাইকেল ক্লার্ক এবং থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট রিইন্ট্রোডাকশন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি-জেনারেল সিভাপোর্ন দরদারানন্দ এই দিবসটি পালনের ধারণা দেন।
এই দিবসের লক্ষ্য হলো আফ্রিকান ও এশীয় হাতির জরুরি দুর্দশা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং বন্দী ও বন্য হাতির উন্নত যত্ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য জ্ঞান এবং ইতিবাচক সমাধানের ব্যবস্থা করা।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ বস বন ব ভ গ র কর ড র র জন য পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো ১ মাস বাড়ল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে সোমবার (১১ আগস্ট) রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে।
১৫ অগাস্ট ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল। তার আগেই আরো এক মাস সময় বাড়ানো হলো।
কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আইয়ুব মিয়া, পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন বিচারপতি এমদাদুল হক ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
কমিশন গত শুক্রবার জানিয়েছে, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ এবং জুলাই সনদ মানার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে তৃতীয় দফায় বসবে ঐকমত্য কমিশন।
ঢাকা/এএএম/ইভা