একের পর এক গণপিটুনি, ১০ দিনে নিহত ৯
Published: 12th, August 2025 GMT
দেশে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে দেশে অন্তত ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯ জন, আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএফএস) তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৭৮ জন। এর সঙ্গে আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনের ঘটনা যুক্ত করলে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৭। এই সময়ে আহত হয়েছেন ২৬৬ জন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ১১১ জন মানুষ ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএফএস) তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৭৮ জন। এর সঙ্গে আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনের ঘটনা যুক্ত করলে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৭। এই সময়ে আহত হয়েছেন ২৬৬ জন।সর্বশেষ ৯ আগস্ট রংপুরে চোর সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনির পর একজনের চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা হয়।
দুজনকে হত্যা করা হয় রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায়। তাঁদের নাম রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাস। সম্পর্কে তাঁরা ছিলেন জামাই-শ্বশুর। স্বজনেরা বলছেন, প্রদীপকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলেন রূপলাল। তাঁরা দুজন বাড়ি ফিরছিলেন। প্রদীপ নিজের ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছিলেন। ভ্যানচোর সন্দেহে তাঁদের হত্যা করা হয়।
নিহত রূপলাল দাসের মা বৃদ্ধ লালিচা দাস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে চোর নন। জুতা সেলাই করে সংসার চালান। মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করার জন্য তিনি (রূপলাল) ভাগনি জামাইকে বাড়িতে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘মোর ছাওয়ার ঘরোক যায় মারছে, তাঁর বিচার চাও।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রমের দুর্বলতার সুযোগে দেশে চুরি, ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) একের পর এক ঘটনা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। পাশাপাশি আগে থেকেই এ ধরনের অপরাধে বিচার না হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
আরও পড়ুনহাত জোড় করে বাঁচার আকুতি, তবু শেষ রক্ষা হয়নি রূপলাল ও প্রদীপের১৭ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, যখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি বেড়ে যায়, তখন মানুষও মানুষের প্রতি সহিংস হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাৎক্ষণিক মব ও সংঘবদ্ধ মবের ঘটনা ঘটছে। সংঘবদ্ধ মবের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে।
আগস্টের প্রথম ১০ দিনের ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮টিতেই চোর সন্দেহে মারধর করা হয়েছে। বাকি পাঁচটি ঘটনার কোনোটি চাঁদাবাজি, কোনোটি পূর্বশত্রুতার কারণে, কোনোটি বিরোধ থেকে ঘটানো হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, গণপিটুনি ও মব দমনে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলেই অভ্যুত্থানের এক বছর পরও একের পর এক ঘটনা ঘটছে।দেশে মব সন্ত্রাস নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’ শিরোনামের এক জরিপে উঠে এসেছে, মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের হার ৮০ শতাংশ। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫৬ শতাংশ, রাতে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬১ শতাংশ এবং পোশাকের কারণে রাস্তায় হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬৭ শতাংশ মানুষ। জরিপটি গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।
সরকারও মব নিয়ে স্বস্তিতে নেই। ১ আগস্ট প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও বলেন, ‘মব সন্ত্রাস দমন করার ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, পুলিশের মোরাল (নৈতিক অবস্থান) ছিল না। যে পুলিশ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিপক্ষ ছিল, সেই পুলিশ যখন দেখে গণ-অভ্যুত্থানের দাবিদার বলে কিছু মহল মব করছে, তখন সেটা দমন করতে পারেনি।’
অবশ্য মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, গণপিটুনি ও মব দমনে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলেই অভ্যুত্থানের এক বছর পরও একের পর এক ঘটনা ঘটছে।
গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের দিক থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দুর্বল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও তারা একধরনের বিভ্রান্তিতে ভুগছে বলে মনে হয়। মানুষ এসব ঘটনায় সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।
মব তৈরির পেছনে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নও কাজ করছে বলে মনে করেন নূর খান লিটন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত সবখানে মব–ভীতি কাজ করছে। পুলিশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সাহস পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দৃশ্যমান শক্ত পদক্ষেপ দরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রথম ১০ দ ন এক র পর এক প রথম আল ক ম নব ধ ক র গণপ ট ন র ন র ঘটন র পল ল আগস ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালে নেই এন্টিভেনম, ২ সপ্তাহে সাপের কামড়ে মৃত ৫
ঠাকুরগাঁওয়ে সাপের কামড়ে গত দুই সপ্তাহে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার হাসপাতালগুলোতে এন্টিভেনম না থাকায় সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন রোগীরা।
সর্বশেষ শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্ত এলাকার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের স্কুলছাত্র সাকিবুল ইসলাম (পঞ্চম শ্রেণি) বিষধর সাপের কামড়ে মারা যায়।
জানা যায়, সাপে কামড়ানোর পর তাকে প্রথমে বালিয়াডাঙ্গী, পরে হরিপুর, এরপর ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল এবং সবশেষে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এসব হাসপাতালের কোথাও এন্টিভেনম মজুত ছিল না। পরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় সাকিবুলের।
সাকিবুলের বাবা ইসরাইল উদ্দীন বলেন, “চারটা হাসপাতালে নিয়েও ভ্যাকসিন পাইনি। কোলের উপরেই ছেলেকে হারালাম। আর যেন কোনো বাবার বুক খালি না হয়, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক।”
অন্যদিকে, সাকিবুলের মতো পীরগঞ্জের স্কুলছাত্র তারেক, রাণীশংকৈলের কলেজছাত্র মোকসেদ আলী এবং হরিপুরের গৃহবধূ সম্পা রানীসহ গত দুই সপ্তাহে জেলায় সাপের কামড়ে মারা গেছে অন্তত পাঁচ জন।
সম্পা রানীর স্বামী জিতেন বলেন, “হাসপাতালে ভ্যাকসিন না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওঝার কাছে যেতে হয়েছে। তবুও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি। দেড় বছরের সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি।”
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আজমুল হক বলেন, “বর্ষার সময়ে সাপের কামড়ের ঘটনা বেশি হয়। প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন পাঠানো হয় বর্ষা শেষের দিকে। অথচ আগে থেকেই মজুত রাখা উচিত।”
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. মো. আনিছুর রহমান বলেন, “চাহিদা পাঠানোর পরও কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে এন্টিভেনম পাওয়া যায়নি। সেখানেও সংকট রয়েছে। চেষ্টা করছি দ্রুত আনার।”
সাপের কামড়ে মৃত্যুর এই ধারাবাহিক ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলে। চিকিৎসক ও সচেতন মহল বলছে, বর্ষার শুরুতেই প্রতিটি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম সরবরাহ করতে হবে।
ঢাকা/হিমেল/এস