স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও রূপান্তরে সম্মিলিত পদক্ষেপের ওপর জোর
Published: 12th, August 2025 GMT
স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও রূপান্তরে সম্মিলিত পদক্ষেপের বিষয়ে জোরালো আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘বাংলাদেশ কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কনভেনশন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন। গত শনিবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বাস্থ্য খাত–সংশ্লিষ্ট ২০০ জনের বেশি পেশাজীবী, নীতিনির্ধারক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য–গবেষক, ক্লিনিক্যাল ও নন-ক্লিনিক্যাল শিক্ষার্থী, উন্নয়ন সহযোগী ও সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা অংশ নেন। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্যসেবার রূপান্তরে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা’।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ কেয়ার ইমপ্রুভমেন্টের উদ্যোগে এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অংশীদারত্বে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এ সম্মেলন আয়োজন আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। মানোন্নয়ন কখনো আলাদা হয়ে বিকশিত হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন সিস্টেমের মধ্যে মানবসম্পদ ও তাঁদের নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য ব্যবস্থা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, একেক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের একেক রকম প্রতিকূলতা রয়েছে। একই ধরনের উদ্যোগ সব পর্যায়ের জন্য প্রযোজ্য নয়।’
উদ্বোধনী বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্টের লাইন ডিরেক্টর জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মান কোনো গন্তব্য নয়; এটি একটি দৈনন্দিন শৃঙ্খলা। এ কনভেনশন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা এখন সময়ের দাবি। এটি এ দেশে সেবা প্রদানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত।’
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফি আহমাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন মধ্যবয়স অতিক্রম করেছে। অথচ আমরা এখনো সম্পূর্ণভাবে কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কার্যকর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মান শুরু হয় শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়ে। এরপর আসে অনুপ্রেরণা। আমাদের স্বাস্থ্য খাত এখন বিশাল এক রূপান্তরের পথে। প্রকল্পভিত্তিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় আমরা আশা করছি, এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হবে।’
দিনব্যাপী এই আয়োজনে ছিল কি-নোট প্রেজেন্টেশন, প্যানেল আলোচনা, ব্রেক-আউট সেশন এবং ১৫ জন চূড়ান্ত প্রতিযোগীর পোস্টার উপস্থাপনা। পাশাপাশি প্যানেল আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল জাতীয় কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্ক, স্বাস্থ্যসেবার উদ্ভাবন, রোগী নিরাপত্তা, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, স্বাস্থ্য অর্থায়ন ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবকাঠামোর ভূমিকা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১১ জনকে ‘কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়।
সম্মেলনে সভাপতি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.
ন্যাশনাল কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নে ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, যা মানদণ্ড প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা, সম্পদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ধারাবাহিক প্রশিক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি বলে বিবেচনা করা হয়েছে।
দেশের সব স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট টিম গঠন, পিডিসিএ চক্রের মতো প্রমাণভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ, ডকুমেন্টেশন প্র্যাকটিস উন্নত করা এবং রোগীকেন্দ্রিক সেবায় অবিচল প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেওয়া হয়।
রোগী নিরাপত্তা ও রোগীকেন্দ্রিক সেবা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি গড়ে তোলা যেখানে সংক্রমণ হ্রাস, নিরাপত্তা প্রোটোকল কঠোরভাবে মেনে চলা ও নেতৃত্বের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অংশগ্রহণকারীরা মানোন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি, আর্থিক তদারকি জোরদার করা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে সবার জন্য সমান ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণকে কর্মীদের ক্ষমতায়ন, সেবা প্রদানের মানোন্নয়ন এবং অর্জিত মানোন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খবর বিজ্ঞপ্তির।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প ন তর র জন য সরক র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
দাম্পত্য–জীবনে মতভেদ হলে ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, দাম্পত্য জীবন মানে একজন আরেকজনের মধ্যে শান্তি খোঁজা, একে অপরকে ভালোবাসা ও দয়া দেখানো। সম্মান, বোঝাপড়া, সহানুভূতি—এই গুণগুলো ছাড়া সম্পর্ক টিকে থাকে না।
নরম স্বভাব যা কিছুতেই থাকবে, তা তাকে সুন্দর করে তোলে, আর যখনই তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তা কুৎসিত হয়ে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৪এক দম্পতির স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী প্রতিটি বিষয়কে ‘ধর্মীয় দায়িত্ব’ বলে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো শুধু আল্লাহর সামনে দায়িত্ব পালন করছি, তুমি মানো বা না মানো, সেটা তোমার ব্যাপার।’
কিন্তু স্ত্রী এতে আহত হন, কারণ এতে তিনি বোঝেন—স্বামী আসলে তাঁর অনুভূতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ইসলাম শিক্ষা দেয়—পরামর্শ যেন হয় কোমল ভাষায়, স্নেহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, নরম স্বভাব যা কিছুতেই থাকবে, তা তাকে সুন্দর করে তোলে, আর যখনই তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তা কুৎসিত হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৪)
অন্য হাদিসে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৯৫)
আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫পরামর্শ ও সমাধান কী হতে পারে?এমন পরিস্থিতি প্রায় দম্পতির মধ্যেই হয়। তাই একে জটিল করে দেখা উচিত নয়। পারস্পরিক কল্যাণ ভাবনার দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। কয়েকটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার:
আপনি যদি স্ত্রী হন, তবে শান্তভাবে বলুন—’আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু আমাকেও কথা বলতে দাও।’১. আলোচনার পথ খোলা রাখা
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মতভেদ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হয় যখন একপক্ষ সবসময় আদেশ করে আর অন্য পক্ষ কথা বলার সুযোগই পায় না। ভালোবাসার সম্পর্কে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যদি স্ত্রী হন, তবে শান্তভাবে বলুন—’আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু আমাকেও কথা বলতে দাও।’ আর যদি স্বামী হন, তাহলে বুঝুন—আপনার স্ত্রীর মন খুলে কথা বলার প্রয়োজন আছে। আপনি তাঁর মালিক নন, বরং তাঁর সঙ্গী।
২. ‘পরামর্শ’ আর ‘নিয়ন্ত্রণ’ এক নয়
অনেকে পরামর্শের নামে স্ত্রীকে চাপে ফেলেন। সেটা ঠিক না। পরামর্শ তখনই কাজে আসে, যখন তা ভালোবাসা আর সম্মানের সঙ্গে দেওয়া হয়। কাউকে সম্মান করা মানে এই নয় যে তাঁর সব কথা মানতেই হবে। ইসলাম আমাদের চিন্তা ও বিচারবোধ দিয়েই সম্মানিত করেছে।
৩. বড় সিদ্ধান্তগুলো একসঙ্গে নিন
বিয়ের আগে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না—যেমন: পোশাক, হিজাব বা নিকাব নিয়ে মতভেদ, সন্তান পালনের পদ্ধতি, সামাজিক আচার ইত্যাদি। এসব নিয়ে খোলামেলা আলাপ করুন। একসাথে বসে ঠিক করুন—কোন বিষয়গুলো তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনগুলোতে একে অপরকে ছাড় দেওয়া সম্ভব।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন২৫ জুন ২০২৫৪. সমঝোতা ও সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করুন
আপনার স্বামী যদি বলে, ‘আমি তো দায়িত্ব পালন করে দিচ্ছি, তুমি মানো বা না মানো সেটা তোমার ব্যাপার’, তখন আপনি বলতে পারেন: ‘আলহামদুলিল্লাহ, আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। আমিও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই চিন্তা করি। আসুন আমরা একসাথে বুঝে নেই কী করলে আল্লাহ বেশি খুশি হবেন, আর আমাদের সম্পর্কটাও সুন্দর থাকবে।’
তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উত্তম।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৯৫৫. একান্ত প্রয়োজনে পারিবারিক পরামর্শ নিন
দাম্পত্যে কিছু সমস্যা এমন হয় যা বাইরের একজন বোঝাতে পারলে দুজনেই স্বস্তি পায়। একজন বিশ্বস্ত ইসলামিক কাউন্সেলর বা বুঝদার অভিভাবকের সহায়তা নিতে পারেন। বিয়ে মানে শুধু দায়িত্ব নয়, বরং একে অপরের অন্তরকে জানার, বোঝার এবং নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার সম্পর্ক।
মতভেদ থাকবেই। কিন্তু সেটা যেন ভালোবাসা ও সম্মানের ভিতরে থেকে সমাধান হয়। কারও মুখ বন্ধ করে দিয়ে, কাউকে নিচু দেখিয়ে কোনো সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একসাথে বসে কথা বলুন, ভুল বুঝলে ক্ষমা চান, একজন আরেকজনের হৃদয় খোলার সুযোগ তৈরি করুন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে শান্তিপূর্ণ, ভালোবাসাময় দাম্পত্য জীবন গঠনের তাওফিক দিন।
আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪