স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও রূপান্তরে সম্মিলিত পদক্ষেপের বিষয়ে জোরালো আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘বাংলাদেশ কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কনভেনশন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন। গত শনিবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বাস্থ্য খাত–সংশ্লিষ্ট ২০০ জনের বেশি পেশাজীবী, নীতিনির্ধারক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য–গবেষক, ক্লিনিক্যাল ও নন-ক্লিনিক্যাল শিক্ষার্থী, উন্নয়ন সহযোগী ও সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা অংশ নেন। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্যসেবার রূপান্তরে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা’।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ কেয়ার ইমপ্রুভমেন্টের উদ্যোগে এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অংশীদারত্বে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এ সম্মেলন আয়োজন আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। মানোন্নয়ন কখনো আলাদা হয়ে বিকশিত হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন সিস্টেমের মধ্যে মানবসম্পদ ও তাঁদের নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য ব্যবস্থা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে, একেক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের একেক রকম প্রতিকূলতা রয়েছে। একই ধরনের উদ্যোগ সব পর্যায়ের জন্য প্রযোজ্য নয়।’

উদ্বোধনী বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্টের লাইন ডিরেক্টর জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মান কোনো গন্তব্য নয়; এটি একটি দৈনন্দিন শৃঙ্খলা। এ কনভেনশন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা এখন সময়ের দাবি। এটি এ দেশে সেবা প্রদানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফি আহমাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন মধ্যবয়স অতিক্রম করেছে। অথচ আমরা এখনো সম্পূর্ণভাবে কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কার্যকর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মান শুরু হয় শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়ে। এরপর আসে অনুপ্রেরণা। আমাদের স্বাস্থ্য খাত এখন বিশাল এক রূপান্তরের পথে। প্রকল্পভিত্তিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় আমরা আশা করছি, এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হবে।’

দিনব্যাপী এই আয়োজনে ছিল কি-নোট প্রেজেন্টেশন, প্যানেল আলোচনা, ব্রেক-আউট সেশন এবং ১৫ জন চূড়ান্ত প্রতিযোগীর পোস্টার উপস্থাপনা। পাশাপাশি প্যানেল আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল জাতীয় কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্ক, স্বাস্থ্যসেবার উদ্ভাবন, রোগী নিরাপত্তা, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, স্বাস্থ্য অর্থায়ন ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবকাঠামোর ভূমিকা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১১ জনকে ‘কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়।

সম্মেলনে সভাপতি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.

আবু জাফর। প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন চিকিৎসা, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সরোয়ার বারী ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান।

সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশ—

ন্যাশনাল কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নে ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, যা মানদণ্ড প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও কঠোরতা, সম্পদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ধারাবাহিক প্রশিক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি বলে বিবেচনা করা হয়েছে।

দেশের সব স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট টিম গঠন, পিডিসিএ চক্রের মতো প্রমাণভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ, ডকুমেন্টেশন প্র্যাকটিস উন্নত করা এবং রোগীকেন্দ্রিক সেবায় অবিচল প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেওয়া হয়।

রোগী নিরাপত্তা ও রোগীকেন্দ্রিক সেবা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি গড়ে তোলা যেখানে সংক্রমণ হ্রাস, নিরাপত্তা প্রোটোকল কঠোরভাবে মেনে চলা ও নেতৃত্বের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অংশগ্রহণকারীরা মানোন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি, আর্থিক তদারকি জোরদার করা এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে সবার জন্য সমান ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণকে কর্মীদের ক্ষমতায়ন, সেবা প্রদানের মানোন্নয়ন এবং অর্জিত মানোন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। খবর বিজ্ঞপ্তির।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প ন তর র জন য সরক র সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ