এক ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী চান না ৮৯ শতাংশ মানুষ
Published: 12th, August 2025 GMT
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না—এমন বিধানের পক্ষে ৮৯ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন চান ৭১ শতাংশ মানুষ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত যাচাইয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়।
তথ্য উপস্থাপন করেন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৪০টি প্রশ্নে সারা দেশে ১ হাজার ৩৭৩ জনের মতামত এবং ১৫টি নাগরিক সংলাপের মাধ্যমে জরিপটি করে সুজন।
সংবাদ সম্মেলনে জনমত যাচাইয়ে উঠে আসা তথ্যের বরাতে বলা হয়, আইনসভা সংস্কারের প্রস্তাবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৯ শতাংশ মানুষ।
একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদনেতা হতে পারবেন না—এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছেন ৮৭ শতাংশ মানুষ।
ঘূর্ণমান পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষে নারী আসন সংরক্ষণের পক্ষে ৬৩ শতাংশ ও উচ্চকক্ষে নারীদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষণের পক্ষে ৬৯ শতাংশ মানুষ একমত।
বিরোধী দল থেকে নিম্নকক্ষে একজন ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৬ শতাংশ মানুষ। উচ্চকক্ষে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার চান ৮২ শতাংশ মানুষ।
নির্বাচনকালে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে—নির্বাহী বিভাগের এমন কার্যক্রম গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেওয়ার বিধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ মানুষ।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রত্যয়ন (সার্টিফাই) করে তা গণবিজ্ঞপ্তি হিসেবে প্রকাশ করার পক্ষে ৮৬ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।
নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষণ ও অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের প্রার্থিতা বা নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৮ শতাংশ মানুষ।
৯২ শতাংশ মানুষ মনে করেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দলের সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত।
জরিপের তথ্য উপস্থাপনের পর সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জরিপের তথ্য প্রমাণ করে, জনগণ সংস্কারের পক্ষে, তারা সংস্কার চায়।
বিদ্যমান পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে বলে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এগুলোর পরিবর্তন হওয়া দরকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই পদ্ধতি, প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানের আমূল পরিবর্তন দরকার। সংস্কার করা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মত দ য় ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে: টাইমস/সিয়েনা জরিপ
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রায় দুই বছর পর ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা ইউনিভার্সিটির নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ভোটার এই সংঘাত মোকাবিলায় ইসরায়েলি সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র নেতিবাচক মতামত প্রকাশ করেছেন।
গাজায় হামলার প্রতি এই অসন্তোষের কারণেই সম্ভবত মার্কিন ভোটাররা এই অঞ্চলের কয়েক দশকের পুরোনো সংঘাতের বিষয়ে তাঁদের সহানুভূতি পুনর্মূল্যায়ন করছেন। টাইমস ১৯৯৮ সাল থেকে ভোটারদের সহানুভূতি নিয়ে প্রশ্ন শুরু করার পর এই প্রথম ইসরায়েলিদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কিছুটা বেশি ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর মার্কিন ভোটারদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সে সময় ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলকে এবং ২০ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।
নতুন জরিপে ৩৪ শতাংশ ইসরায়েলিদের পক্ষে এবং ৩৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা সংশয়ে আছেন অথবা দুই পক্ষকেই সমানভাবে সমর্থন করেন।
অধিকাংশ মার্কিন ভোটার এখন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করছেন। ৭ অক্টোবরের হামলার পর জনমতে এটি একধরনের বড় পরিবর্তন। প্রতি ১০ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬ জন বলেছেন, বাকি ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাক বা না পাক বা হামাস নির্মূল হোক বা না হোক, তবু ইসরায়েলের উচিত সামরিক অভিযান বন্ধ করা।
৪০ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা চালাচ্ছে। এই সংখ্যা ২০২৩ সালের জরিপের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
সব মিলিয়ে টাইমস/সিয়েনা জরিপের এই ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ মিত্রের প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে বড় ধরনের অবনতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কয়েক দশক ধরে দুই দলই সমানভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসছিল। এই অতি বিভক্ত যুগে জনমতে এত বড় পরিবর্তন অস্বাভাবিক ঘটনা বটে। সাধারণত যুদ্ধ বা বিপর্যয়ের মতো বড় ঘটনা ছাড়া জনমত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।
আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ব্ল্যাকফুট শহরের ডেমোক্র্যাট সমর্থক অস্টিন মাগলস্টন বলেন, সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
যোগাযোগ খাতে কাজ করা ৩৩ বছর বয়সী মাগলস্টন বলেন, ‘আমি আসলে কয়েক বছর ধরে বেশ ইসরায়েলপন্থী ছিলাম, বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের সেই বিধ্বংসী হামলার রাতের কথা শোনার পর। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাউকে যাওয়া উচিত নয়। কিন্তু এটি যত দীর্ঘ হচ্ছে এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা করছে, তা দেখে এটিকে আর কোনোভাবেই সমান ক্ষেত্র বলে মনে হচ্ছে না।’
এই জরিপ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের জন্যও চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্যের বৃহত্তম প্রাপক, যারা এ পর্যন্ত শত শত বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে।
দল-মতনির্বিশেষে তরুণ ভোটাররা ইসরায়েলের প্রতি এই সমর্থন অব্যাহত রাখার পক্ষে কম আগ্রহী। ৩০ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭ জন অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বা সামরিক সাহায্যের বিরোধিতা করেছেন।
ইসরায়েলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভোটারদের সমর্থন ব্যাপক হারে কমে যাওয়া। রিপাবলিকানরা মূলত ইসরায়েলকে সমর্থন করে চলেছে। তবে তাঁদের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সামান্য কমেছে।
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা আর খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় গাজায় দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মধ্য গাজা