বরিশাল থেকে সপ্তাহে দুবার ঢাকায় যাতায়াত করেন নাঈম হাওলাদার। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করছেন। নাঈম হাওলাদার বলেন, বরিশাল থেকে বাসে এত ঝাঁকুনি লাগে যে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। অনেক যাত্রী বমিও করে ফেলেন। মন দুরুদুরু করে, কখন কী হয়ে যায়! 

বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এমনই বেহাল। সড়কের পিচ, পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সড়কটিকে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করতে ইট ফেলে খানাখন্দ ভরাট করে ওপরে বালু ফেলা হচ্ছে। এরপর দেওয়া হচ্ছে পিচের প্রলেপ। 

তবে যাত্রী ও যানবাহনের চালক–সহকারীরা বলছেন, প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাতবার সড়ক মেরামত করা হয়। কিন্তু মাস ঘুরতেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সাময়িক সংস্কার অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। 

কুয়াকাটা-ঢাকা পথের একটি বাসের চালক কেরামত আলী বলেন, ‘সড়কের যে অবস্থা, তাতে বাস চালাতে অনেক ঝুঁকি। যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন। আমাদের সময়ও বেশি লাগে। যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।’

বরিশাল থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। মাত্র ২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকে। এ ছাড়া জুলাই মাসে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ফলে এ অংশের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৯ কিলোমিটার সড়ক বরিশাল সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের আওতায়, বাকিটা ফরিদপুর সওজের অধীনে।

যেভাবে মেরামত করা হচ্ছে, তাতে খুব বেশি দিন টিকবে বলে মনে হয় না। কারণ, এ রকম সংস্কার আগেও বহুবার হয়েছে।কেরামত আলী, বাসচালক

গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশ ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তে বালু, ইটের সুরকি ও পিচ ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার শিকারপুর সেতুর পূর্ব প্রান্তে একদল শ্রমিক মেরামতের কাজ করছেন। কয়েক কিলোমিটার পর গৌরনদীর বার্থী এলাকায়ও একই দৃশ্য দেখা গেল।

বার্থী এলাকায় সওজের একটি ট্রাকের চালক মো.

শাহজাহান সরদার বলেন, ‘বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। আগে ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করতাম, এখন তার ওপর পিচ ও বালু দিয়ে প্রলেপ দিচ্ছি, যাতে যান চলাচলে ব্যাঘাত কমে এবং যাত্রীদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।’

পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘দেড়-দুই মাস আগে একইভাবে রাস্তা মেরামত হয়েছিল, কিন্তু টেকেনি। এতে শুধু অর্থের অপচয় হয়।’

একই কথা বললেন ভুরঘাটাগামী একটি মাহেন্দ্রর চালক আবদুল বাছেদ।

বার্থী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত আরও একটি ট্রাকে মেরামতের কাজ চলছিল খাঞ্জাপুর এলাকায়। কাজ তদারক করছিলেন সওজের কার্য সহকারী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) মো. জাকির হোসেন সরদার। তিনি বলেন, সাময়িক ভোগান্তি কমাতে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় কাজ চলছে।

সওজ সূত্র জানায়, সত্তরের দশকে বরিশাল–ভাঙ্গা সড়ক ছিল ১২ ফুট প্রশস্ত। এখন বেড়ে হয়েছে মাত্র ২৪ ফুট। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বেড়েছে তিন গুণ। এত চাপ নিতে পারছে না সড়কটি।

ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে উল্লেখ করে বরিশাল সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান বলেন, তহবিল পাওয়া গেলে দ্রুত ছয় লেনের কাজ শুরু করা যাবে। আপাতত জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করছেন।

পটুয়াখালী–কুয়াকাটা মহাসড়কও বেহাল

টানা বর্ষণে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কের প্রায় ৭১ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। একাধিক বাঁকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বাস মালিক সমিতি ও সওজ সূত্র জানায়, এই সড়কে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার যান চলাচল করে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটাগামী যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ বাড়ছে।

মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, একটু পরপর গর্ত। বিশেষ করে আমতলী চৌরাস্তা, মানিকঝুড়ি, শাখারিয়া, সাহেববাড়ি, আমড়াগাছিয়া, পাটুখালী, বান্দ্রা ও পখিয়া এলাকায় গর্ত বেশি। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় ইট ফেলে সাময়িকভাবে ভরাটের চেষ্টা চলছে।

পটুয়াখালী সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে খানাখন্দ মেরামতের কাজ করছি। আশা করি, এতে ভোগান্তি লাঘব হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র মত র ক জ বর শ ল থ ক ক জ চলছ এল ক য় র চ লক অবস থ সড়ক র সওজ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘সোনায় মোড়ানো’ সড়ক দেখতে কেন আসছেন দর্শনার্থীরা(আগামীকাল সোমবার সকাল নয়টায় তুলবেন)

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা এখন দর্শনার্থীদের পদভারে মুখর। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে নির্মিত হচ্ছে দেশের গভীর সমুদ্রবন্দর। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সড়ক। সড়কটি নির্মাণ করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় করা হয়েছে ৪৩৭ কোটি টাকা। বিপুল এই নির্মাণ ব্যয়ের কারণে সড়কটিকে ‘সোনায় মোড়ানো’ বলে মন্তব্য করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা। মহেশখালীতে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা একবার এই সড়কে আসেন। ছবি তোলেন, ভিডিও ধারণ করেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক শ দর্শনার্থী সড়কের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। কেউ কেউ আড্ডা-গল্পে সময় পার করছেন। তবে বেশির ভাগ দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান ফটকে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য রাজঘাট অংশে কুহেলীয়া নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ৮৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু। সেতু থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত সম্প্রসারিত দুই লেনের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কে পথচারীদের হাঁটার রাস্তা ও একাধিক সেতু-কালভার্ট রয়েছে। পুরো সড়কটি দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে।

সন্ধ্যায় সড়কের দুই পাশ এবং সেতুতে বাতি জ্বলে উঠলে সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপটির চেহারা পাল্টে যায়। আলোকিত এই সড়কের সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।

লাভ-ক্ষতির হিসাব

দেশে এত দিন সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক ছিল ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সম্প্রসারিত এক্সপ্রেসওয়ে। সওজের অধীনে ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় করা হয় ১১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০১ কোটি টাকা। আর মাতারবাড়ী সড়ক প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের দ্বিগুণের বেশি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, জমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং সমুদ্র উপকূলের দুর্গম এলাকা হওয়ায় সড়কটি নির্মাণে ব্যয়ও বেড়েছে।

মাতারবাড়ী সড়কে কথা হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মহেশখালী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, কুহেলীয়া নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন সেতু এবং সড়ক পেয়ে মাতারবাড়ীর কিছু মানুষ লাভবান হলেও অনেকে হতাশ। কারণ, সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে কুহেলীয়া নদী ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। পলি ও বর্জ্য জমে নদীর অন্তত ১০ কিলোমিটার ভরাট হয়ে গেছে। তাতে মাতারবাড়ীর অন্তত এক হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। মাতারবাড়ীর পশ্চিম পাশে সমুদ্র উপকূলে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ মেগা প্রকল্প নির্মাণ করে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিলেও পূর্ব-দক্ষিণ ও উত্তর পাশে ২০-২৫ হাজার মানুষ প্লাবনের ঝুঁকিতে (ভাঙা বেড়িবাঁধ) পড়েছে। কুহেলীয়া নদীর তীর ভরাট করে সড়ক নির্মাণ বন্ধ রাখতে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করেছিল। কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি।

তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনের সড়কে বেড়াতে আসা একটি পরিবার সেলফি তুলছেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পণ্যবাহী ট্রাক গর্তে আটকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, ভোগান্তি
  • ‘সোনায় মোড়ানো’ সড়ক দেখতে কেন আসছেন দর্শনার্থীরা(আগামীকাল সোমবার সকাল নয়টায় তুলবেন)