অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আগের সরকারের কোনো পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক মাইকেল চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম অধ্যাপক ইউনূস সরকারের আমলে ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু এক বছর পর আমরা দেখি, হাসিনার সময় ও তাঁর আগে যত সরকার এসেছিল; তারা যেভাবে অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়েছিল, এর সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো পার্থক্য নেই।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত হয়ে এ কথা বলেন মাইকেল চাকমা। চতুর্থ কাউন্সিল উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে এই অনুষ্ঠান হয়।

মাইকেল চাকমা বলেন, ‘২০১০ সালে সাজেকে চার শতাধিক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর কোনো বিচার আমরা পাইনি। বর্তমান কারাগারে বন্দী দীপঙ্কর তালুকদারের সামনেই বাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তাঁর সামনে লাশ ছিল। এসবের বিচার আমরা আজ পর্যন্ত পাইনি। এখন হাসিনা চলে গেছে। এরপর যে ক্ষমতায় এসেছে, সেও হাসিনাকে অনুসরণ করছে।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সেবক নয় উল্লেখ করে মাইকেল চাকমা বলেন, এক বছর আগে কৃষক, শ্রমিক যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের কোনো অধিকার পূরণ হয়নি। দেশের সাধারণ মানুষের রক্তে যারা ক্ষমতায় বসেছে, তারা সেবক হিসেবে বসেনি। তারা ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি, তারা তাদের স্বার্থের জন্য ক্ষমতায় বসেছে।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী শাখার আহ্বায়ক জশদ জাকির এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, আর গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর যেন কেউ শোষণ-নিপীড়ন চালাতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা কেবল একটা রেজিম হটিয়েছি। গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন বলেন, ‘এই দেশের মানুষ কখনোই কোনো ফ্যাসিবাদকে টিকতে দেয়নি। প্রতিবারই রাজনৈতিকভাবে সচেতন শিক্ষার্থীরা ভূমিকা রেখেছেন।’

শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর যুগ্ম আহ্বায়ক রাম্রাসাইন মারমা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন। এতে আরও বক্তব্য দেন ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাবেক নেতা হারুন অর রশীদ, শাখা ছাত্র মৈত্রীর যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রীর শরীরে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেওয়ার প্রস্তাব খুবি শিক্ষকের

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বাংলা ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. রুবেল আনসারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

ব্যক্তিগত প্রশ্ন, অশালীন প্রস্তাব, একান্ত সাক্ষাতের চাপ এবং যৌন সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ওই ডিসিপ্লিনের এক ছাত্রী।

গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দেন তিনি।

আরো পড়ুন:

উপাচার্যের মায়ের মৃত্যুর কারণে অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

রাকসুতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল ঘোষণা

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের সভাপতি মোছা. তাসলিমা খাতুনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, দুর্ঘটনার কারণে নির্ধারিত সময়ে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে না পারায় শিক্ষক ড. রুবেল আনসারের সঙ্গে কথা বলতে যান তিনি। এ সময় ওই শিক্ষক তাকে নানা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন এবং অস্বস্তিকর মন্তব্য করেন। ওই শিক্ষক বলেন ‘তোমার হাত যদি পরীক্ষার আগে ঠিক না হয়, আমি ফু দিয়ে ঠিক করে দেব।’ এছাড়া খুলনায় নতুন হওয়ায় তাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দেন।

ভুক্তভোগীর দাবি, ওই শিক্ষক পরবর্তীতে বারবার তাকে মেসেজ দিয়ে একসঙ্গে বাইরে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে নিরালা মোড়ে দেখা করার সময় ওই শিক্ষক তাকে বলেন, ‘আমি তোমাকে চাই… যেমন একজন পুরুষ একজন নারীকে চায়।’ এছাড়া তিনি প্রস্তাব দেন, একটি পরিচিত বাসায় নিয়ে যাবেন, যেখানে অন্য কেউ থাকবে না।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী জানান, প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষক গাড়ির ভেতর তার হাত চেপে ধরেন এবং বলেন, ‘আজ না হোক কাল তোমার সারা শরীরে আমার ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দেবই।’ এছাড়া তিনি ফলাফল বাড়িয়ে দেওয়ার প্রলোভনও দেন।

এ ঘটনার পর থেকে ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ওই শিক্ষক অতীতেও এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলে আমি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার সাহস পাই।”

অভিযুক্ত শিক্ষক ড. রুবেল আনসার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ওই ছাত্রী অসুস্থ থাকায় তার বাবা আমাকে একবার কল দিয়েছিলেন। সব শিক্ষার্থীই আমার কাছে সমান।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, “অভিযোগ ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের মাধ্যমে এসেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই এর বেশি মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”

তদন্ত কমিটির প্রধান মোছা. তাসলিমা খাতুন বলেন, “গত ৭ আগস্ট অভিযোগটি ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে দাখিল করা হয় এবং সেখান থেকে ১০ আগস্ট আমাদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রে আসে। অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত উভয়ের বক্তব্য নেব। প্রমাণ ও সাক্ষ্য যাচাই করব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষতা ও গোপনীয়তা বজায় রেখে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করব।”

ঢাকা/হাসিবুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ