রূপগঞ্জে ৪ ছাত্রীকে বেত্রাঘাত, সাংবাদিককে হাতুড়িপেটা
Published: 12th, August 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শিক্ষক কর্তৃক ক্লাসে পাঠ বুঝতে না পারায়। শিক্ষক পরিবর্তনের দাবি করায় সপ্তম শ্রেণির ৪ ছাত্রীকে বেত্রাঘাতে আহত করার ঘটনার খবর সংগ্রহ হয়ে গেলে কয়েকজন সাংবাদিক কে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (১২ আগস্ট ) বিকেলে উপজেলার জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা এ ঘটনার খোঁজ নিতে গেলে শিক্ষকদের উস্কানিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা করে কিছু শিক্ষার্থী ।
তারা হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে গুরুতর আহত করে। আহতরা হলো রুপালী বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি রাকিবুল ইসলাম, একাত্তর টিভির ফটোগ্রাফার হাফিজুর রহমান, প্রাইম টিভির সাকের আহমেদ, অভিভাবক ওমেদ আলী। এদিকে শিক্ষকের বেত্রাঘাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তাসনিম, কেয়া, তাবাসসুম, মীমসহ কয়েকজন।
স্থানীয়রা জানান, জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুন্না সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাস নিতেন। শিক্ষার্থীরা তার পাঠদান স্পষ্টভাবে বুঝতে না পেরে প্রধান শিক্ষকের কাছে তাকে পরিবর্তনের আবেদন করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুন্না ক্লাসে উপস্থিত প্রায় ৪১ শিক্ষার্থীকে উপর্যপুরি বেত্রাঘাত করেন ।
আহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার দাবি করেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এসময় অন্তত তিনজন শিক্ষক সাধারন শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিলে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রায় শতাধিক ছাত্র লাঠিসোটা হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের উপর ঝাপিয়ে পরে। সাংবাদিকদের গাড়ি চালক ইকবাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হয়। এদের মাঝে রাকিবকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবায়দুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক নূরে আলম , ঘটনায় জড়িত শিক্ষক মুন্নাকে বিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিস্কার এবং সাংবাদিকদের হামলায় উস্কানির অভিযোগে আরো তিনজনকে সাময়িক বহিস্কার ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন দাবি করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আশ্বাস দেন।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক তানভীর হোসেন মুন্না পলাতক রয়েছেন। অভিভাবকরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
মালয়েশিয়ায় স্বচ্ছভাবে কর্মী পাঠানোর দাবি ২৩ সংগঠনের
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ‘সিন্ডিকেটের’ (চক্র) সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ২৩টি সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম)। তারা বলেছে, অতীতে সিন্ডিকেটসহ যেসব কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল সেগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। উন্মুক্ত ও স্বচ্ছভাবে কর্মী পাঠানোর দাবি জানিয়েছে বিসিএসএম।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে বিসিএসএম। এতে বলা হয়, অতীতে সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিচার করতে হবে এবং কোনোভাবেই যেন তারা নতুন করে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হতে না পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত সাবেক সংসদ সদস্য লোটাস কামালের (সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল) পরিবারসহ সাবেক তিন সংসদ সদস্যকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়াকিনি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের শোষণে জড়িত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত স্থগিত করার মালয়েশিয়ার অনুরোধে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে।
এসব খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বিসিএসএম বলেছে, মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি না দেওয়া এবং অভিযোগের পুনঃ তদন্ত এবং বিচারিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছে তারা। তা ছাড়া এই সিন্ডিকেটের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের যে অভিযোগ আছে, সেই অগ্রগতি সম্পর্কেও সাধারণ নাগরিকদের অবহিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে বিসিএসএম। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিত করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং বিসিএসএম এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
সরকারের অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্রে, গণমাধ্যমে গত এক বছরে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর এবং দুদকের অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে একেকজন কর্মীর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত খরচের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে এবং কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, যার সঙ্গে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই সিন্ডিকেট জড়িত। এর আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দশজনের সিন্ডিকেট হয়েছিল এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে ঘিরে নানা অনিয়মের খবর নতুন নয়। কিন্তু কখনোই তাদের বিচার হয়নি।
বিসিএসএমের চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী ও কো–চেয়ার সৈয়দ সাইফুল হকের স্বাক্ষরে পাঠানো বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা আশঙ্কা করছেন, এখন এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যদি জবাবদিহি ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই পায়, তবে একই ধরনের সিন্ডিকেট আবারও গড়ে উঠবে। বিসিএসএম আহ্বান জানাচ্ছে, ১১ থেকে ১৩ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরে শ্রমবাজার উন্মোচন করতে গিয়ে সিন্ডিকেট নির্মূল করার বিষয়টি যেন গুরুত্ব না হারায়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ২৩টি নাগরিক সংগঠনের জোট বিসিএসএম অতীতেও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এর আগে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল আরেক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিল, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া এলেই স্বচ্ছতার বদলে নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটে। অতীতে সিন্ডিকেটসহ যেসব কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল আবার যেন ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
২৩ সংগঠন হচ্ছে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু), ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ), বাস্তব, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাসুগ-ডায়াসপোরা অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, রাইট যশোর, ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব অলটারনেটিভ ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (ইনাফি), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা), ইমা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড উড ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (বিসিডব্লিউডব্লিউএফ), ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা), বোয়াফ, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন (ডেভকম) লিমিটেড, ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন, চেঞ্জ মেকারস, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (সিসিডিএ), কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস), বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র (বিএনএসকে)।