‘গুপ্ত সংগঠনকে’ সুযোগ করে দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা
Published: 12th, August 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সব প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রকৃতপক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো কিছু গুপ্ত সংগঠনকে দখলদারি ও শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজিদ হায়দার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসুসহ অনেকে। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছায়েদুল হক নিশান।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, হলগুলোতে দখলদারি বন্ধের অজুহাতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করবে। প্রশাসনের মদদপুষ্ট সংগঠনকে ক্যাম্পাস এবং হলে একচ্ছত্র আধিপত্যের সুযোগ করে দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এ ধরনের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মূল আশঙ্কা ক্ষমতাসীন ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে নতুন করে গণরুম-নির্যাতন চালুর সুযোগ তৈরি হবে কি না, উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কিন্তু এই সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সংস্কার, আবাসন সংকট নিরসন, প্রশাসনের দলীয় আনুগত্য বন্ধসহ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গিয়ে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো জনতুষ্টিবাদী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
গণ–অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো চর দখলের মতো করে রাজনৈতিক দলগুলো দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘এ ক্ষেত্রে নিয়ম ও যোগ্যতা মানদণ্ড হিসেবে কাজ করেনি। প্রশাসনিক এই কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের নয়, নির্দিষ্ট দল ও সংগঠনের স্বার্থ দেখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একই ভূমিকা আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যর্থতা দৃশ্যমান।’
অতীতের মতো ছাত্রশিবির এখনো গোপন রাজনীতিতেই বিশ্বাস করে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, ‘এতে ছাত্রশিবিরকে সংগঠনগতভাবে তাদের নেতা-কর্মীদের অপকর্মের দায় নিতে হয় না। এমনকি যারা অতীতে ছাত্রলীগের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিল, তাদেরও প্রকাশ্যে আনতে হয় না। তথাকথিত সামাজিক কাজ এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মুখোশে তারা অনায়াসে নিজেদের সাংগঠনিক কাজ চালায় এবং বিরোধী মতকে দমন করতে পারে।’
আসন সংকটকে কেন্দ্র করে হলগুলোতে দখলের অপরাজনীতি চলে উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এই সংকট দূর করে এবং প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আসন বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ বা সীমিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত আরেকটি ফ্যাসিস্ট প্রক্রিয়া, সংস্কৃতি ও শক্তির উদ্ভব ঘটাবে বলে সতর্ক করেছেন গণতান্ত্রিক বাম জোটের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, ‘ছাত্ররাজনীতি না থাকলে ভবিষ্যতে ফ্যাসিস্ট কোনো শক্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোনো শক্তি আর অবশিষ্ট থাকবে না। তাই শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, বরং সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই জরুরি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র জ ট র জন ত য গ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধ: জামায়াত
গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় দখলদার ইসরাইলের ন্যক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দেওয়াকে মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধও বলেছে দলটি।
ত্রাণবাহী জাহাজগুলোর নিরাপত্তা বিধানের আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
ব্রাজিল ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক
নির্বাচনের প্রস্তুতিতে জামায়াত ৫ পার্সেন্ট এগিয়ে: দুদু
তিনি বলেন, “২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় প্রায় ৭০ হাজার নিরীহ মানুষ শহীদ হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে হাজার হাজার নারী-শিশুর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়বে।”
“আমরা জেনেছি, ইসরাইল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র ১৩টি ত্রাণবাহী নৌযান এবং সেখানে থাকা বহু মানবাধিকার কর্মীকে আটক করেছে। অথচ এই নৌযানগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, পানি ও ওষুধ বহন করছিল। আমি ইসরাইলের এই অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মানবিক সহায়তা গন্তব্যে পৌঁছাতে কাউকে বিরত রাখা যায় না। দখলদার ইসরাইল নৌযান ও মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করেছে। ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরাইলের এ কর্মকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি নিরীহ মানুষের জীবনকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।”
তিনি বলেন, “মূলত দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দিয়ে তারা চরম অপরাধ সংঘটিত করেছে। এ হামলা মানবতার বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্যতম অপরাধ।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণবাহী জাহাজগুলো যাতে নিরাপদে গাজায় পৌঁছতে পারে, সেজন্য ইসরাইলের ওপর অবিলম্বে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। একই সাথে আটক মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা ও নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি