স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন
Published: 12th, August 2025 GMT
মুরাদনগরের একটি মামলার ঘটনায় কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে (এসপি) হাইকোর্ট বলেছেন, সেনসেটিভ ম্যাটার (স্পর্শকাতর বিষয়)। অভিযোগপত্র হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তদন্তের সময়সীমা উল্লেখ আছে। দ্রুত যেন হয় মনিটরিং (তদারকি) করবেন। কমপ্লায়েন্স (অগ্রগতি প্রতিবেদন) দেবেন।
মুরাদনগরের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা–সুরক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ এবং মামলার তদন্তের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে মঙ্গলবার আদালত এ কথা বলেন। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দিতে বলেছেন।
ওই ঘটনা নিয়ে ‘দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা’ শিরোনামে গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
আদেশে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও ও ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই বিবাদীদের ১৪ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন (হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স) দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ধার্য তারিখে প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুলাই আদালত কমপ্লায়েন্স বিষয়ে অবস্থান জানাতে কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ১২ আগস্ট বেলা ১১টায় আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার সকালে আদালতে হাজির হন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান শুনানিতে পুলিশ সুপারের নেওয়া পদক্ষেপ ও কার্যক্রমসংক্রান্ত তথ্যাদি–সংবলিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। শফিকুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির। রিটের পক্ষে আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী নিজেই শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি নিয়ে আদালত কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দাখিলের জন্য আগামী ২২ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেন।
ডিএনএ পরীক্ষা, তদন্তসহ মামলা–সম্পর্কিত পরবর্তী অগ্রগতির তথ্যাদি দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো অভিযোগপত্র হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলো শেষ করতে বলেছেন আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের নির্দিষ্ট সময়সীমা যেন কোনোভাবেই অতিক্রম না করে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজগুলো করে আগামী ২২ অক্টোবর অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সুপারের পক্ষে মঙ্গলবার আদালতে তুলে ধরা প্রতিবেদনের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মামলার পর ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়। বিষয়টি ওসি দেখভাল করছেন। ভুক্তভোগীর জন্য সার্বক্ষণিক যেন নিরাপত্তা থাকে এবং সময়ে সময়ে এসপি ওসিকে এবং ওসি এসপিকে ফলোআপ ও হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে।
গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কমপ ল য় ন স ম র দনগর ম হ ম মদ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চান ট্রাম্প
প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করেছেন। প্রস্তাবে তিনি যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের নেতৃত্ব দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর খবর অনুসারে, সোমবার হোয়াইট হাউজে বৈঠক শেষে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস এখনও প্রস্তাবটি গ্রহণ বা প্রত্যাখান করেনি।
আরো পড়ুন:
গাজায় নতুন শান্তি পরিকল্পনায় একমত ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়াল
নতুন পরিকল্পনার অধীনে, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা একটি ক্রান্তিকালীন ‘টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটি’ দ্বারা পরিচালিত হবে যা ‘যোগ্য ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের’ সমন্বয়ে গঠিত হবে। ওই কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
সোমবার বিকেলে হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আরব বিশ্ব এবং ইসরায়েলের নেতারা এবং সংশ্লিষ্ট সকলেই আমাকে এটি করতে বলেছিলেন, তাই এটির নেতৃত্বে থাকবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প নামে পরিচিত একজন ভদ্রলোক।”
ট্রাম্প আরো বলেন, “আমি এটাই চাই। এটি করার জন্য আমাকে অতিরিক্ত কাজ করতে হবে, তবে এটি এত গুরুত্বপূর্ণ যে আমি তা করতে ইচ্ছুক।”
এদিকে, ট্রাম্পের এই নতুন ২০ দফা পরিকল্পনার সবগুলো প্রস্তাবের সঙ্গে হামাস সম্মত হবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, হামাস যদি এই পরিকল্পনায় সম্মত না হয় তাহলে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যেকোনো পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
নেতানিয়াহু হমকি দিয়ে বলেছেন, যদি হামাস এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে অথবা গ্রহণ করে পরে পিছু হটে তাহলে ইসরায়েল একাই কাজটা শেষ করে দেবে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প গাজা দখল করার হুমকি দিয়েছিলেন। নেতানিয়াহুকে তিনি বলেছিলেন, গাজার মালিক হবে যুক্তরাষ্ট্র। বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাকে ‘রিভিয়েরা’ হিসেবে পুনর্গঠিত করা যেতে পারে বলে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন।
যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার শাসন ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। পরিচালনা কমিটিতে কারা থাকবেন, সে সম্পর্কে হোয়াইট হাউজের একজন মুখপাত্র বোর্ডে অতিরিক্ত তথ্য প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তবে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা হলো-
* আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে, যার নাম হবে ‘দ্য বোর্ড অব পিস’ বা শান্তি প্রশাসন।
* ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তী সরকারে অন্য বৈশ্বিক নেতারাও থাকবেন। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প এই পর্ষদে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নাম থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
* নতুন প্রশাসন গাজার পুনর্নির্মাণের জন্য কাঠামো নির্ধারণ করবে এবং তহবিল পরিচালনা করবে।
* ট্রাম্প জানান, তার প্রশাসন বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্যদের সঙ্গে কাজ করবে নতুন ফিলিস্তিনি সরকারকে নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য।
* ট্রাম্প বলেন, হামাস এবং অন্যান্য মার্কিন-ঘোষিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোর্ডে বা গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা পালন করবে না।
নেতানিয়াহুর বোর্ডে কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে ইসরায়েলি নেতা সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, পরিকল্পনাটি ‘সামনের বছরগুলোতে গাজার জন্য একটি বাস্তবসম্মত পথ খুলে দেবে যেখানে গাজা হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হবে না বরং ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকৃত শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হবে’।
ঢাকা/ফিরোজ