৩০ হাজার টাকায় সেরা স্মার্টফোন, কিনবেন কীভাবে
Published: 13th, August 2025 GMT
জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে স্মার্টফোন। কারণ, স্মার্টফোনে প্রয়োজনীয় অনেক কাজ করা যায়। ছবি থেকে ভিডিও এডিটিংসহ সব ধরনের যোগাযোগ, বিনোদন, শিক্ষা ও পেশাগত কাজে স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েছে। ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন পাওয়া যায়।
এ ধরনের স্মার্টফোন কেনার আগে ব্যবহারকারীরা এর ব্যাটারি, ক্যামেরা, ডিসপ্লে, প্রসেসরসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে কেনেন। দেশের বাজারে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে স্যামসাং, হুয়াওয়ে, অনর, নকিয়া, মটোরোলা, আইকিউ, রেডমি, রিয়েলমি, অপো, ভিভো, ইনফিনিক্স, নাথিং ফোনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন পাওয়া যায়।
কেনার আগে যা ভাবা দরকার
ভালো ফোন কেনার জন্য প্রথমেই নিজের বাজেট ঠিক করা দরকার। এর পাশাপাশি ফোনটি মূলত কোন কাজে বেশি ব্যবহার হবে, তা–ও চিন্তা করতে হবে। যেমন কেউ যদি ছবি তুলতে চান, তাহলে ভালো ক্যামেরা দরকার, কেউ গেমস খেলতে চাইলে শক্তিশালী প্রসেসর ও র্যাম প্রয়োজন। আর কেউ যদি দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য কিনতে চান, তাঁর প্রয়োজন ভালো ব্যাটারি ও ডিসপ্লে।
বাজেট অনুযায়ী, বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের ফোন পাওয়া যায়। তাই কয়েকটি ফোনের বৈশিষ্ট্য ও মূল্য তুলনা করে দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ। ফোন কেনার আগে ইউটিউব রিভিউ, টেক ব্লগ ও ব্যবহারকারীদের মতামত খতিয়ে দেখা উচিত। এর ফলে সেই ফোনের বাস্তব ব্যবহারিক দিক জানা যায়। এ ছাড়া ফোনের আসল বা নকল হওয়া যাচাই করার জন্য আইএমইআই (IMEI) নম্বর যাচাই করা জরুরি। এর সঙ্গে অফিশিয়াল ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায় কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।
ফোন কেনার সময় বিশ্বস্ত শোরুম বা অফিশিয়াল অনলাইন স্টোর থেকে কেনা উত্তম। এর ফলে বিক্রয়োত্তর সেবা যেন সহজে পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করলে ফোন ব্যবহারে ঝামেলা কম হবে।
বাজেটের মধ্যে যেসব ব্র্যান্ড
বাজারে এই বাজেটে স্যামসাং, শাওমি, রিয়েলমি ইত্যাদির বেশ কিছু মডেল রয়েছে। তবে সফটওয়্যার আপডেটের নিশ্চয়তা, ব্যাটারির ক্ষমতা, প্রসেসরের পারফরম্যান্স ও বিক্রয়োত্তর সেবা—এসব দিক বিবেচনায় স্যামসাং গ্যালাক্সি এ১৬ ৫জি, অনর এক্স ৮সি, ভিভো ভি৫০ লাইট ৪জি, শাওমি রেডমি নোট ১৪ প্রো ৪জি, অপো এ৫ প্রো, নাথিং সিএমএফ ফোন ২ প্রো, স্যামসাং গ্যালাক্সি এ২৬, ভিভো ওয়াই ৩৫, রিয়েলমি নারজো ৬০ ৫জি, স্যামসাং গ্যালাক্সি এম ১৪ ৫জি, শাওমি রেডমি নোট ১২ ও মটোরোলা মটো জি৭৩ ৫জিসহ বেশ কয়েকটি ফোন পাওয়া যায়।
ফোনের মধ্যে যত পার্থক্য
স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে ‘অফিশিয়াল’ও ‘আনঅফিশিয়াল’ ফোনের মধ্যে পার্থক্য বুঝে নেওয়া জরুরি। অফিশিয়াল ফোন সাধারণত ব্র্যান্ডের নিজস্ব শোরুম বা অনুমোদিত ডিলারের কাছে পাওয়া যায়। যেখানে ফোনের সঙ্গে এক বছর কিংবা তার বেশি ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায়। অন্যদিকে আনঅফিশিয়াল ফোন মূলত বিভিন্ন মাধ্যমে শুল্ক–কর ফাঁকি দিয়ে দেশে আসে। আনঅফিশিয়াল ফোন তুলনায় দাম কম হলেও এতে ব্র্যান্ডের অফিশিয়াল ওয়ারেন্টির মতো সুবিধা পাওয়া যায় না।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যেমন দারাজ, পিকাবো, স্টার টেক ও গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার বিভিন্ন উৎসবে ও বিশেষ ক্যাম্পেইনের সময়ে ছাড়, ক্যাশব্যাক ও বিশেষ অফার থাকে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করলে অতিরিক্ত ছাড় বা কিস্তিতে কেনার সুবিধা (ইএমআই) পাওয়া যায়।
বিক্রয়োত্তর সেবা
স্যামসাং দেশের প্রায় সব বড় শহরে উন্নত সার্ভিস সেন্টার ও গ্রাহক সেবা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া শাওমি ও রিয়েলমির নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। অফিশিয়াল ফোনে ব্র্যান্ডের এক বছরের ওয়ারেন্টি থাকে, যা সার্ভিস সেন্টারে কার্যকর হয়। যেখানে আনঅফিশিয়াল ফোনে সাধারণত বিক্রেতার দেওয়া ৭ থেকে ১৫ দিনের প্রতিস্থাপন ওয়ারেন্টি বা সীমিত সার্ভিস ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়। বাজারের দাম, অফার ও বিক্রয়োত্তর সেবা ভালোভাবে যাচাই করলে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে সাশ্রয়ী দামে ভালো ফোন পাওয়া সম্ভব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৩০ হ জ র ট ক অফ শ য় ল ফ ন ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।