দক্ষিণ কোরিয়ার কারাবন্দী সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের স্ত্রী কিম কিয়ন হি–কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজি ও ঘুষ নেওয়াসহ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সিউলের আদালতে চার ঘণ্টার শুনানি হয়। এ সময় সাবেক ফার্স্ট লেডি কিম কিয়ন হি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি প্রমাণ নষ্ট করে ফেলতে পারেন—এমন আশঙ্কা জানিয়ে আদালত তাঁকে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্টদের বিচার ও কারাদণ্ডের ঘটনা নতুন নয়। তবে দেশটিতে এবারই প্রথম কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তাঁর স্ত্রী দুজনকেই কারাগারে যেতে হলো।

গত বছর প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সামরিক আইন জারি করে ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন ইউন। তাঁর এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট সদস্যরা সোচ্চার হলে অল্প সময় পরই আদেশ প্রত্যাহার করে নেন তিনি। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তিনি ক্ষমতাচ্যুতও হন। সামরিক আইন জারির ঘটনায় বিচারের মুখোমুখি করতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কৌঁসুলিরা বলছেন, ইউনের স্ত্রী ৫২ বছর বয়সী কিম কিয়ন শেয়ারবাজারে কারসাজি করে প্রায় ৮০ কোটি ওন (প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪০ ডলার) লাভ করেছেন। বিএমডব্লিউর ডয়েচ মোটরস নামের এক পরিবেশকের শেয়ারে এমন কারসাজির ঘটনা ঘটেছে।

কৌঁসুলিরা বলছেন, ইউনের স্ত্রী ৫২ বছর বয়সী কিম কিয়ন হি শেয়ারবাজারে কারসাজি করে প্রায় ৮০ কোটি ওন (প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪০ ডলার) লাভ করেছেন। বিএমডব্লিউর ডয়েচ মোটরস নামের এক পরিবেশকের শেয়ারে এমন কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। ওই শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো-কমানোর মতো কারসাজিতে তিনি জড়িত ছিলেন।

যেসব বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে, তার সব কটিই ঘটেছে কিমের স্বামী ইউন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর পুরো মেয়াদকালেই অভিযোগগুলোর একটি প্রভাব ছিল।

কিমের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি ব্যবসায়িক সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে বিতর্কিত ইউনিফিকেশন চার্চ থেকে দুটি শ্যানেল ব্যাগ ও একটি হীরার নেকলেস ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন। এর বাইরে কিমের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের উপনির্বাচন ও গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগও আনা হয়েছে।

ইউন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিরোধীদের উত্থাপিত তিনটি বিলে ভেটো দিয়েছিলেন। বিলগুলোতে কিমের বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

মঙ্গলবারের শুনানিতে কিম কালো স্যুট ও স্কার্ট পরে উপস্থিত ছিলেন।

ইউন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিরোধীদের উত্থাপিত তিনটি বিলে ভেটো দিয়েছিলেন। বিলগুলোতে কিমের বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

ইউন সর্বশেষ বিলে ভেটো দিয়েছেন গত বছরের নভেম্বর মাসে, সামরিক আইন জারির এক সপ্তাহ আগে।

চলতি বছরের জুনে ইউনের প্রতিদ্বন্দ্বী লি জে মিউং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুনআদালতের হস্তক্ষেপে ক্ষমতাচ্যুত হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন০৪ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রস জ ইউন র বছর র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

গুপ্ত রাজনীতির নামে নয়া আধিপত্যবাদী শক্তির বিকাশ ঘটছে কি

বেশ কিছুদিন ধরে একটি বিশেষ পক্ষ থেকে এক অদ্ভুত দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে; অমুক ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করা যাবে না, তমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি করা যাবে না।

নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে এ ধরনের কিছু অসার ও অদ্ভুত দাবি তোলা হচ্ছে কিছু ছাত্রসংগঠনের সমর্থক কথিত ‘সাধারণ’ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন তথ্য–প্রমাণ–নমুনা অনুসারে বিশেষ এই সংগঠন হচ্ছে মূলত ইসলামী ছাত্রশিবির। এর সঙ্গে কখনো বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদকেও (বাগছাস) সুর মেলাতে দেখা গেছে।

সাধারণ শিক্ষার্থী সেজে যাঁরা ক্যাম্পাসে বা হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি তোলেন, তাঁদের অনেককেই আবার বাগছাস ও শিবিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়, তাঁরা মিছিল, সামবেশেও যান।

সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিচয়ে শিবিরের এই কৌশলী রাজনীতির সঙ্গে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সুবিধামতো সময়ে একমত পোষণ করে। আবার দ্বিমতও পোষণ করে। তবে এ দুই দলের দাবির পেছনে কারণ সম্ভবত একই—ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে নিজেদের রাজনীতি গুছিয়ে নেওয়া। এ কারণেই তাদের পছন্দমতো ক্যাম্পাসে কখনো রাজনীতি থাকবে বা থাকবে না।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বাগছাস ও শিবিরের কর্মী–সমর্থকেরা হলে রাজনীতি বন্ধের দাবিতে মিছিল নিয়ে ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। তাঁদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে ঘোষণা দেন, হলে প্রকাশ্য ও ‘গুপ্ত’ রাজনীতি বন্ধ থাকবে।

সাদা দলের (বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত) এই শিক্ষকের কথার সবটুকু অবশ্য পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়নি। প্রকাশ্য রাজনীতি না হয় তিনি বন্ধ করলেন, কিন্তু ‘গুপ্ত’ রাজনীতি তিনি বন্ধ করবেন কীভাবে? যারা প্রকাশ্যে আসবে না, রাজনৈতিক পরিচয় ধারণ করবে না, তাদের রাজনীতি আটকাবেন কীভাবে, তা অনুধাবন করা গেল না।

নিষিদ্ধ কোনো দলের নেতা–কর্মীরা হলের অভ্যন্তরে বৈঠক সমাবেশ করলে বাধা দিতে পারেন। আটক করতে পারেন। কিন্তু যারা এখন নিষিদ্ধ নয়, বৈধভাবে রাজনীতি করে, তাদের তিনি আটকাবেন কীভাবে?

ছাত্ররা জুলাই–আগস্টে নেতৃত্বে ছিল। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। যে কারণে অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতা আছে। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্ররাজনীতি আছে। আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার প্রচারণা নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে গোপন বা ‘গুপ্ত’ রাজনীতির অভিযোগ মূলত শিবিরের বিরুদ্ধেই বেশি। বাধা দিতে হলে তো তাদেরকেই দেওয়া উচিত। এই দলের বেশ কিছু নেতা–কর্মী বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। ওই সময় তারা ছাত্রলীগের পক্ষ হয়ে গেস্টরুমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে।

কিন্তু শিবির এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়। শিবিরের নামে বা অন্য কোনো নামে হলে কেউ বৈঠক বা কর্মসূচি পালন করলে, তাদের তিনি (প্রক্টর) বাধা দিতে পারেন না; বাধা দিতে হলে আগে শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। সেটি নিশ্চয়ই কেউ চাইবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে যদিও শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ক্যাম্পাসে। শেখ হাসিনার পতনের পর এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুসরণ করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত খুঁজে পায়নি। তাই শিবিরের এখন স্বনামে–বেনামে রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে অন্যেদের রাজনীতি বন্ধের পাঁয়তারা করছে।

মূলত শিবিরের গুপ্ত রাজনীতির অনুশীলনের কারণেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আলাপটি তোলা হয়। এর আগে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল সদস্য ফরম বিতরণ করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিচয়ে একদল শিক্ষার্থী বাধা দেন এবং এ নিয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে ছাত্রদলের সঙ্গে মূলত শিবির ও বাগছাসের কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রদল কমিটি ঘোষণা করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে বাধা প্রদান করা হয়। সেখানেও শিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে কেন? রাজনীতি করা যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কারও পছন্দ না হলে সে রাজনীতি করবে না। কিন্তু কাউকে রাজনীতি করতে বাধা দেওয়া যাবে না। জোরপূর্বক রাজনীতি করতে বাধা দেন সাধারণত ফ্যাসিবাদী শাসকেরা। তাঁরা জনসাধারণের রাজনীতি করার সুযোগ সীমিত করেন।

এ ছাড়া ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুসারে, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হলে বা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার অধিকার স্বীকৃত রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালগুলোয় শিগগিরই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।

ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিও বেশ এগিয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে হল সংসদেও নির্বাচন হবে। এদিকে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি করা, আরেক দিকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আওয়াজ তোলা স্ববিরোধিতা বটে।

মূলত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার পর সেখানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। হত্যাকারী ও পরবর্তী সময়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের আধিপত্য ঠেকাতেই সব দল মিলে ওই সময় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে।

কিন্তু গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। এদের অধিকাংশ নেতা–কর্মী পালিয়েছেন বা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এখন সময় নতুনভাবে রাজনীতি শুরু করার। ঠিক এই সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে কয়েকটি সংগঠন বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ওই তথাকথিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়েছেন, ছাত্রলীগ গিয়েছে যে পথে, ছাত্রদল যাবে সেই পথে। ছাত্রলীগের অপকর্মের কারণে যদি ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হয়, তবে তো আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে সারা দেশেই রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে। কে কখন আবার ফ্যাসিবাদী হয়ে যায়, এই অশঙ্কা করলে তো আর রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না।

আমাদের ছাত্ররাজনীতির এক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির আন্দোলন, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী বাকশালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, নব্বইয়ের গণ–আন্দোলন ও সর্বশেষ জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করছে, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে জোরালো ভূমিকা রেখেছে।

শিক্ষার্থীদের এই শক্তিকে যারা দুর্বল করে দিতে চায়, তারাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলে। কারণ, ছাত্ররাজনীতি সচল থাকার কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ে দন্ডিতদের ছবি প্রদর্শনী বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের কারণেই ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস থেকে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

এক ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে; কিন্তু ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকানোর কথা বলে এক নয়া আধিপত্যবাদী শক্তির বিকাশ আমরা দেখতে পারছি। এরা স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নিতে চাইবে। কারণ, ছাত্ররাজনীতি থাকলে ক্যাম্পাসে যা খুশি তা করা যাবে না। ছাত্ররাজনীতির নামে গেস্টরুম কালচার, হল দখল, ক্যাম্পাস দখল, ক্যানটিন–ডাইনিংয়ে বিনা পয়সায় খাওয়া ও ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি নব্য ফ্যাসিবাদের লক্ষণ। এটা আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। যেকোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের পর বিপ্লবী শক্তি নিজেরাই ফ্যাসিবাদে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো পক্ষের নেতৃত্ব না থাকে।

ছাত্ররা জুলাই–আগস্টে নেতৃত্বে ছিল। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। যে কারণে অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতা আছে। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্ররাজনীতি আছে। আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার প্রচারণা নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।

ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আওয়ামী লীগের পতন থেকেও অনেকেই শিক্ষা নেয়নি। তাই তারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ফ্যাসিবাদী দাবি তুলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা আরও নানা দাবি নিয়ে তারা সামনে আসতে পারে। এর আগে তারা নির্বাচন বাতিল ও পেছানোর জন্যও নানা টালবাহানা করেছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না যে এভাবে কোনো কিছুরই শেষ রক্ষা হয় না, আওয়ামী লীগেরও হয়নি।

ড. মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ