দয়া করে গাজায় যান: পোপ লিওর প্রতি ম্যাডোনার আহ্বান
Published: 13th, August 2025 GMT
মার্কিন গায়িকা ম্যাডোনা পোপ লিওর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘গাজায় গিয়ে শিশুদের জন্য আপনার আলো নিয়ে আসুন।’ গত সোমবার সন্ধ্যায় ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন, ‘পবিত্র পিতা, দয়া করে গাজায় যান এবং দেরি হওয়ার আগে শিশুদের জন্য আপনার আলো নিয়ে আসুন।’
ম্যাডোনা যোগ করেন, একজন মা হিসেবে তিনি তাদের কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না।
ম্যাডোনা বলেন, ‘দুনিয়ার সব শিশু সবারই সন্তান। আপনি আমাদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে গাজায় ঢুকতে বাধা দেওয়া যাবে না।’
গত মাসে গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্ক থিওফিলস তৃতীয়র সঙ্গে জেরুজালেমের সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতা কার্ডিনাল পিয়েরবাতিস্তা পিজাবাল্লা গাজায় এক বিরল সফরে যান।
গাজা সিটির হলি ফ্যামিলি চার্চে ইসরায়েলি হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই এ সফর হয়েছিল। এটি গাজার শেষ ক্যাথলিক চার্চ, যেখানে ওই হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত ও কয়েকজন আহত হন।
পোপ লিও ওই হামলার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় প্রাণহানির কথা স্বীকার করলেও ইসরায়েলকে দায়ী করেননি। ফলে এ নিয়ে সমালোচনা হয় ও পূর্বসূরি পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে তাঁর তুলনা করা হয়। আগের পোপ প্রকাশ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধের নিন্দা করেছিলেন। পরে পোপ লিও বলেন, হামলাটি ইসরায়েলি সেনারা চালিয়েছেন।
গাজা অবরোধ ভাঙতে এবং সেখানে জরুরি মিশন পরিচালনা করতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যে দাবি উঠেছে, এ আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তার সঙ্গে এবার ম্যাডোনা যোগ দিলেন।
যাতে ফিলিস্তিনি শিশুদের বাঁচানো যায়, সে জন্য মার্কিন এই গায়িকা গাজায় ‘মানবিক সাহায্যের দরজা পুরোপুরি খুলে দেওয়ার’ আহ্বান জানান।
গত মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তার ওপর প্রায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে, ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষুধা ও অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়েছে।
মে মাসের শেষ দিক থেকে মার্কিন ও ইসরায়েল–সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেয়। তবে তারা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য সহায়তা দিয়েছে। বিতর্কিত সংস্থাটির ত্রাণকেন্দ্রে খাদ্য নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ২২২ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন, এর মধ্যে ১০১টি শিশু।
পোপদের সঙ্গে ম্যাডোনা বিরোধম্যাডোনার বিবৃতিতে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সরাসরি সমালোচনা ছিল না।
ম্যাডোনা বলেন, ‘আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না, পক্ষ নিচ্ছি না। সবাই কষ্ট পাচ্ছে, জিম্মিদের মায়েরাও। আমি তাদের মুক্তির জন্যও প্রার্থনা করছি। আমি শুধু চেষ্টা করছি, যাতে এই শিশুরা অনাহারে মারা না যায়।’
ম্যাডোনার মতে, রাজনীতি নয়, কেবল সচেতনতা পারে পরিবর্তন আনতে। এ কারণেই তিনি ‘ঈশ্বরের একজন মানুষ’-এর কাছে আবেদন করছেন।
ম্যাডোনা রোমান ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারী হিসেবে বড় হয়েছেন এবং প্রায়ই তাঁর গান ও মিউজিক ভিডিওতে ক্যাথলিক প্রতীক ব্যবহার করে থাকেন।
ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ম্যাডোনার উসকানিমূলক উপস্থাপনা, যেমন জ্বলন্ত ক্রস, পোল-ড্যান্স করা সন্ন্যাসিনী ইত্যাদি কর্মকাণ্ড দশকের পর দশক ধরে তাঁকে ক্যাথলিক চার্চ ও পোপদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে।
১৯৯০ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয় ম্যাডোনার ব্লন্ড অ্যাম্বিশন ট্যুরকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শয়তানি শোগুলোর একটি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
২০০৬ সালে ম্যাডোনার কনফেশনস ট্যুরকে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শের অনুমোদনে কার্ডিনাল এরসিলিও টোনিনি ‘ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে চরম চ্যালেঞ্জ ও ক্রসের অপমান’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। টোনিনি তখন বলেন, তাঁকে ক্যাথলিক সমাজ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।
গত বছর ম্যাডোনা এআই দিয়ে তৈরি একটি ছবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়ান। যেখানে দেখা যায়, পোপ ফ্রান্সিস তাঁর কোমরে হাত রেখেছেন।
চলতি বছরের জুনে নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, ম্যাডোনা ও পোপ লিও ছয় প্রজন্ম আগে একই পূর্বপুরুষের বংশধর ছিলেন। সেই হিসাবে তাঁরা নবম স্তরের প্রজন্মে চাচাতো ভাই–বোন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে