বেশ কিছুদিন ধরে একটি বিশেষ পক্ষ থেকে এক অদ্ভুত দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে; অমুক ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করা যাবে না, তমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি করা যাবে না।

নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে এ ধরনের কিছু অসার ও অদ্ভুত দাবি তোলা হচ্ছে কিছু ছাত্রসংগঠনের সমর্থক কথিত ‘সাধারণ’ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন তথ্য–প্রমাণ–নমুনা অনুসারে বিশেষ এই সংগঠন হচ্ছে মূলত ইসলামী ছাত্রশিবির। এর সঙ্গে কখনো বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদকেও (বাগছাস) সুর মেলাতে দেখা গেছে।

সাধারণ শিক্ষার্থী সেজে যাঁরা ক্যাম্পাসে বা হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি তোলেন, তাঁদের অনেককেই আবার বাগছাস ও শিবিরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়, তাঁরা মিছিল, সামবেশেও যান।

সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিচয়ে শিবিরের এই কৌশলী রাজনীতির সঙ্গে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সুবিধামতো সময়ে একমত পোষণ করে। আবার দ্বিমতও পোষণ করে। তবে এ দুই দলের দাবির পেছনে কারণ সম্ভবত একই—ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে নিজেদের রাজনীতি গুছিয়ে নেওয়া। এ কারণেই তাদের পছন্দমতো ক্যাম্পাসে কখনো রাজনীতি থাকবে বা থাকবে না।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে বাগছাস ও শিবিরের কর্মী–সমর্থকেরা হলে রাজনীতি বন্ধের দাবিতে মিছিল নিয়ে ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। তাঁদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে ঘোষণা দেন, হলে প্রকাশ্য ও ‘গুপ্ত’ রাজনীতি বন্ধ থাকবে।

সাদা দলের (বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত) এই শিক্ষকের কথার সবটুকু অবশ্য পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়নি। প্রকাশ্য রাজনীতি না হয় তিনি বন্ধ করলেন, কিন্তু ‘গুপ্ত’ রাজনীতি তিনি বন্ধ করবেন কীভাবে? যারা প্রকাশ্যে আসবে না, রাজনৈতিক পরিচয় ধারণ করবে না, তাদের রাজনীতি আটকাবেন কীভাবে, তা অনুধাবন করা গেল না।

নিষিদ্ধ কোনো দলের নেতা–কর্মীরা হলের অভ্যন্তরে বৈঠক সমাবেশ করলে বাধা দিতে পারেন। আটক করতে পারেন। কিন্তু যারা এখন নিষিদ্ধ নয়, বৈধভাবে রাজনীতি করে, তাদের তিনি আটকাবেন কীভাবে?

ছাত্ররা জুলাই–আগস্টে নেতৃত্বে ছিল। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। যে কারণে অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতা আছে। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্ররাজনীতি আছে। আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার প্রচারণা নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে গোপন বা ‘গুপ্ত’ রাজনীতির অভিযোগ মূলত শিবিরের বিরুদ্ধেই বেশি। বাধা দিতে হলে তো তাদেরকেই দেওয়া উচিত। এই দলের বেশ কিছু নেতা–কর্মী বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। ওই সময় তারা ছাত্রলীগের পক্ষ হয়ে গেস্টরুমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে।

কিন্তু শিবির এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়। শিবিরের নামে বা অন্য কোনো নামে হলে কেউ বৈঠক বা কর্মসূচি পালন করলে, তাদের তিনি (প্রক্টর) বাধা দিতে পারেন না; বাধা দিতে হলে আগে শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে। সেটি নিশ্চয়ই কেউ চাইবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে যদিও শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ক্যাম্পাসে। শেখ হাসিনার পতনের পর এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুসরণ করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত খুঁজে পায়নি। তাই শিবিরের এখন স্বনামে–বেনামে রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে অন্যেদের রাজনীতি বন্ধের পাঁয়তারা করছে।

মূলত শিবিরের গুপ্ত রাজনীতির অনুশীলনের কারণেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আলাপটি তোলা হয়। এর আগে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল সদস্য ফরম বিতরণ করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিচয়ে একদল শিক্ষার্থী বাধা দেন এবং এ নিয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে ছাত্রদলের সঙ্গে মূলত শিবির ও বাগছাসের কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রদল কমিটি ঘোষণা করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে বাধা প্রদান করা হয়। সেখানেও শিবিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে কেন? রাজনীতি করা যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কারও পছন্দ না হলে সে রাজনীতি করবে না। কিন্তু কাউকে রাজনীতি করতে বাধা দেওয়া যাবে না। জোরপূর্বক রাজনীতি করতে বাধা দেন সাধারণত ফ্যাসিবাদী শাসকেরা। তাঁরা জনসাধারণের রাজনীতি করার সুযোগ সীমিত করেন।

এ ছাড়া ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুসারে, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হলে বা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার অধিকার স্বীকৃত রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালগুলোয় শিগগিরই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।

ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিও বেশ এগিয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে হল সংসদেও নির্বাচন হবে। এদিকে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবি করা, আরেক দিকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আওয়াজ তোলা স্ববিরোধিতা বটে।

মূলত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার পর সেখানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। হত্যাকারী ও পরবর্তী সময়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের আধিপত্য ঠেকাতেই সব দল মিলে ওই সময় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে।

কিন্তু গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। এদের অধিকাংশ নেতা–কর্মী পালিয়েছেন বা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এখন সময় নতুনভাবে রাজনীতি শুরু করার। ঠিক এই সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে কয়েকটি সংগঠন বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ওই তথাকথিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়েছেন, ছাত্রলীগ গিয়েছে যে পথে, ছাত্রদল যাবে সেই পথে। ছাত্রলীগের অপকর্মের কারণে যদি ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হয়, তবে তো আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে সারা দেশেই রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে। কে কখন আবার ফ্যাসিবাদী হয়ে যায়, এই অশঙ্কা করলে তো আর রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না।

আমাদের ছাত্ররাজনীতির এক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির আন্দোলন, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী বাকশালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, নব্বইয়ের গণ–আন্দোলন ও সর্বশেষ জুলাই–আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করছে, দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে জোরালো ভূমিকা রেখেছে।

শিক্ষার্থীদের এই শক্তিকে যারা দুর্বল করে দিতে চায়, তারাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলে। কারণ, ছাত্ররাজনীতি সচল থাকার কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ে দন্ডিতদের ছবি প্রদর্শনী বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের কারণেই ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস থেকে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

এক ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে; কিন্তু ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকানোর কথা বলে এক নয়া আধিপত্যবাদী শক্তির বিকাশ আমরা দেখতে পারছি। এরা স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নিতে চাইবে। কারণ, ছাত্ররাজনীতি থাকলে ক্যাম্পাসে যা খুশি তা করা যাবে না। ছাত্ররাজনীতির নামে গেস্টরুম কালচার, হল দখল, ক্যাম্পাস দখল, ক্যানটিন–ডাইনিংয়ে বিনা পয়সায় খাওয়া ও ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি নব্য ফ্যাসিবাদের লক্ষণ। এটা আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। যেকোনো বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের পর বিপ্লবী শক্তি নিজেরাই ফ্যাসিবাদে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো পক্ষের নেতৃত্ব না থাকে।

ছাত্ররা জুলাই–আগস্টে নেতৃত্বে ছিল। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। যে কারণে অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে একধরনের প্রতিযোগিতা আছে। পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্ররাজনীতি আছে। আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার প্রচারণা নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।

ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আওয়ামী লীগের পতন থেকেও অনেকেই শিক্ষা নেয়নি। তাই তারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ফ্যাসিবাদী দাবি তুলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা আরও নানা দাবি নিয়ে তারা সামনে আসতে পারে। এর আগে তারা নির্বাচন বাতিল ও পেছানোর জন্যও নানা টালবাহানা করেছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না যে এভাবে কোনো কিছুরই শেষ রক্ষা হয় না, আওয়ামী লীগেরও হয়নি।

ড.

মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র র জন ত র জন ত ক র জন ত র ছ ত রদল হয় ছ ল বন ধ র ধ কর র আম দ র প রক শ ধ করত র পতন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ