৮ ঘণ্টা পর পাবনায় পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
Published: 13th, August 2025 GMT
৮ ঘণ্টা পর জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে পাবনায় পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) পাবনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক ফিরোজ খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “প্রশাসনের আশ্বাসে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার পর দুপুর ২টা থেকে সকল রুটে যান চলাচল শুরু হয়েছে।”
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীর বানেশ্বরে বিআরটিসি বাস শ্রমিক কর্তৃক মাই লাইন বাস শ্রমিকদের মারধরের প্রতিবাদে পাবনা থেকে সকল রুটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় পাবনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে পাবনা থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য রুটে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তারা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে চলাচল করেন।
পাবনা জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক ফিরোজ খান জানান, গতকাল রাজশাহীর বানেশ্বরে যাত্রী তোলা নিয়ে বিআরটিসি ও মাই লাইন বাসের শ্রমিকদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মাই লাইন বাস শ্রমিকদের মারধর করে বিআরটিসি বাস শ্রমিকরা। এ নিয়ে গতরাত আটটায় পাবনায় উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা। কিন্তু সেখানেও আলোচনার এক পর্যায়ে বিআরটিসি বাস শ্রমিকরা মাই লাইন বাস শ্রমিকদের মারধর করে চলে যায়। তারই প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে আজ সকাল থেকে সকল রুটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।
পরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক, জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ও সদর থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে জেলা প্রশাসক মফিজুল ইসলাম জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসে এবং সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
ঢাকা/শাহীন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ই ল ইন ব স ব আরট স
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে অতিবর্ষণে ভেসে গেছে ১৩৪ কোটি টাকার মাছ
পোনা উৎপাদন ও মাছ চাষে দেশের প্রথম স্থানে রয়েছে যশোরের অবস্থান। জেলাটিতে অতিবর্ষণে এবার মৎস্য খাতে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। টানা ভারি বর্ষণে মাছের ঘের, পুকুর ও বিল তলিয়ে এ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস।
মাছ চাষিদের ভাষ্য, গত ৪ দশকের মধ্যে এবার ক্ষতির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে মৎস্য খাতে চাহিদার তুলনায় যশোরে উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল পরিমাণ এই অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা দাবি করেছেন তারা।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় ৬ হাজার ২১৯টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ১২৭টি, অভয়নগরে ৩৪০টি, ঝিকরগাছায় ৩৬০টি, মণিরামপুরে ৫৪০টি, কেশবপুরে ২৬০টি, শার্শায় ১ হাজার ৩২টি, চৌগাছা ও বাঘারপাড়ায় ২৮০টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
স্থগিত হওয়া জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ শুরু ১৮ আগস্ট
মাছ ছিনতাইয়ের মামলায় সাবেক এমপির ছেলে কারাগারে
ক্ষতিগ্রস্ত চাষি রয়েছেন ৫ হাজার ৪০৮ জন। এর মধ্যে সদরে ২ হাজার ৮৯৩ জন, অভয়নগরে ৩১৫ জন, ঝিকরগাছায় ৩৬০ জন, মণিরামপুরে ৫১০ জন, কেশবপুরে ১৯০ জন, শার্শায় ৭৬০ জন, চৌগাছায় ১৬০ জন ও বাঘারপাড়ায় ২২০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৭৮১ হেক্টর।
ভারি বর্ষণে পুকুর, ঘের ও বিল তলিয়ে ৫ হাজার ৩৪১ টন মাছ ও ৮৩০ লাখ পোনা ভেসে গেছে। ফলে মাছে ১০৪ কোটি ৮ লাখ ও পোনায় ১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকার।
বিগত ৪৭ বছরে জেলায় মৎস্য খাতে এমন ক্ষতি কখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন ফিরোজ মৎস্য হ্যাচারির সত্ত্বাধিকারী ফিরোজ খান। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে পর এই প্রথম এমন ভারি বর্ষণের মুখোমুখি হতে হয়েছে কৃষকদের। ফলে ক্ষতির পরিমাণ আমাদের ধারণার বাইরে চলে গেছে। যদি কয়েক বছর এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে চাষিরা আর মাছ চাষ করবে না।”
তিনি আরো বলেন, “কৃষিতে সরকার প্রচুর পরিমাণ প্রণোদনা দিলেও মৎস্যখাতে সরকারের কোনো নজর নেই। অথচ আমরাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।”
যশোর জেলা মৎস্য চাষি সমিতির সভাপতি জাহিদুর গোলদার বলেন, “একদিকে খাবারের দাম বেশি, অন্যদিকে অতিবৃষ্টি ও অতিরিক্ত খরা। সবমিলিয়ে বিগত ৮ থেকে ১০ বছর চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “মাছের খাবারের দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আবার কৃষি থেকে আমাদের শিল্পখাতে উন্নিত করে বিদ্যুৎ বিলের ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। একসময় কৃষি হিসেবে এই খাতে বিদ্যুৎ ছিলো ২ টাকা ৪৫ পয়সা রেট। এখন আমাদের বিল দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা রেটে। এ বছর কৃষকরা যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পুষিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
জেলা মৎস্য অফিসার সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম জানিয়েছেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ফলে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে আমরা আবেদন করেছি। তবে এখনো আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। তবে বিদ্যুতের রেট কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যশোর জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যশোর জেলায় মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছিল। এর বিপরীতে জেলার নিজস্ব চাহিদা ছিল প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। ফলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মাছ উদ্বৃত্ত ছিল, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়েছিল।
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/মেহেদী