গত সপ্তাহে এক গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা বৈঠকের আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র হয়। তখন তাঁদের সামনে ছিল একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা—গাজা উপত্যকা পুনর্দখল করা হবে, নাকি বর্তমান কৌশলেই এগোনো হবে।

বর্তমান ও সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং সরকারি উপদেষ্টারা নিশ্চিত করেছেন, গত শুক্রবার ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা সিটিতে ঢুকবে। এটি গাজার শেষ বড় শহর; যা এখনো ইসরায়েলের দখলে নেই। গাজা সিটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার মাধ্যমে তারা উপত্যকাটির আরও ১০ শতাংশ এলাকা দখল করবে এবং সমগ্র জনসংখ্যাকে অবশিষ্ট ১৫ শতাংশ জমিতে ঠেলে দেবে। আইডিএফ বর্তমানে গাজার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

পরিকল্পনাসংক্রান্ত গোপন আলোচনার কারণে কিছু কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন।

গাজা সিটিতে ঢোকার ওই পরিকল্পনা ছিল আইডিএফের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রস্তাবের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও রক্তক্ষয়ী। তাঁরা গাজা সিটি ঘিরে রাখা ও সেখানে বাইরে থেকে হামলা চালানোর প্রস্তাব দেন। তবে এটি ছিল নেতানিয়াহু ও তাঁর রাজনৈতিক মিত্রদের পছন্দের পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনার তুলনায় সীমিত পরিসরের।

পুরো গাজা দখলে যেখানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর পাঁচটি ডিভিশন দরকার; সেখানে সেনা কর্মকর্তাদের প্রস্তাবিত পরিকল্পনামাফিক তথা পর্যায়ক্রমিক অভিযানে তার অর্ধেকেরও কম ব্যবহার হবে। এ স্থল অভিযানে সেনারা ধীরে ধীরে অগ্রসর হবেন। আর তা হবে শুধু তখনই, যখন আগামী মাসের মধ্যে গাজা সিটির প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে (যাঁদের অনেকেই বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন) সরিয়ে নেওয়া হবে। যদিও যাওয়ার মতো জায়গা তখন প্রায় থাকবে না তাঁদের।

সেনা কর্মকর্তাদের এ সিদ্ধান্ত আসে বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজে নেতানিয়াহুর দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাজা পুরোপুরি দখল করার অভিপ্রায় জানানোর ১২ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে। এ সিদ্ধান্তে তাঁর অতিদক্ষিণপন্থী মিত্ররা বিরক্ত হলেও বিষয়টি দেখিয়েছে যে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা নেতানিয়াহু ও তাঁর বেসামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এখনো অবস্থান নিতে সক্ষম। ইসরায়েলের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন নেতানিয়াহু এবং জেনারেলদের সঙ্গে সবচেয়ে তীব্র দ্বন্দ্বেও জড়িয়েছেন তিনিই।

সেনা কর্মকর্তাদের এ সিদ্ধান্ত আসে বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজে নেতানিয়াহুর দেওয়া সাক্ষাৎকারে গাজা পুরোপুরি দখল করার অভিপ্রায় জানানোর ১২ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে। এ সিদ্ধান্তে তাঁর অতিদক্ষিণপন্থী মিত্ররা বিরক্ত হলেও বিষয়টি দেখিয়েছে যে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা নেতানিয়াহু ও তাঁর বেসামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এখনো অবস্থান নিতে সক্ষম।

ইতিপূর্বে ১৯৬৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত গাজা দখল করে রেখেছিল ইসরায়েল।

‘যদি মন্ত্রিসভা জামিরের ওপর পুরো গাজা দখলের বিষয়কে চাপিয়ে দিত, তবে সেটি হতো নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বসম্মত মতকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপেক্ষা করার প্রথম ঘটনা’, বলেন ইসরায়েলের একসময়ের প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজের উপদেষ্টা নিমরোদ নভিক। তিনি বর্তমানে নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরায়েল পলিসি ফোরামের জ্যেষ্ঠ ফেলো। নভিক বলেন, ‘নিরাপত্তা মহল প্রধানমন্ত্রীকে পরিকল্পনার পরিধি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে বাধ্য করেছে।’

ঘটনাটি মনে করিয়ে দিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিক অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টিকে। অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিশ্বাস, সামরিকভাবে আর কোনো বড় কৌশলগত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়।

২২ মাস পরও গাজায় ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের তাণ্ডবে গাজায় ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত মার্চ থেকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ত্রাণ অবরোধ শুরু হওয়ায় উপত্যকাটিতে ভয়াবহ মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক খাদ্যাভাব।

গত সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া খবরে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ও তাঁর মন্ত্রীরা জামিরকে পুরো গাজা দখলের জন্য চাপ দিচ্ছেন, আর জামির মন্ত্রিসভাকে সতর্ক করছেন—এতে ইসরায়েলি সেনাদের বড় ঝুঁকি তৈরি হবে এবং গাজার শাসন সেনাবাহিনীর জন্য বিপজ্জনক হবে।

আমি আইডিএফ, এর কমান্ডার ও আমাদের সৈনিকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখি। কিন্তু আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আইডিএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতের বিপরীতে গিয়ে। আমরা একটি দেশ, যার একটি সেনাবাহিনী আছে; সেনাবাহিনীর একটি দেশ নই।বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির জামিরকে সরকারের আদেশ মানার শপথ নিতে বলেন। নেতানিয়াহুর ছেলে ইয়ায়ির নেতানিয়াহু সেনাপ্রধানকে অভিযুক্ত করেন, তিনি নাকি ‘সত্তরের দশকের মধ্য আমেরিকার কোনো অস্থিতিশীল প্রজাতন্ত্রের মতো সামরিক অভ্যুত্থান’ ঘটানোর চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে, বৈঠকের কয়েক দিন আগে আইডিএফ, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ বাহিনীর এক ডজনের বেশি সাবেক প্রধান এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানান। বৈঠকের ঘণ্টা কয়েক আগে সেনাবাহিনী জামিরের এক বক্তব্যের উদ্ধৃতি প্রকাশ করে। সেখানে তিনি বলেন, ‘বিতর্কের সংস্কৃতি ইহুদি জনগণের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আইডিএফ নির্ভয়ে নিজেদের অবস্থান জানাতে থাকবে।’

ইসরায়েলি বোমা হামলায় আহত এক শিশুকে কোলে করে সরিয়ে নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। গতকাল গাজা সিটিতে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ইসর য় ল র মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের মন্দির

মানুষের মন্দির

এটি ছিল এক বিষণ্ন রাত

ফ্যাকাশে আলোর সঙ্গে,

হৈমন্তী চাঁদের আলোয়

আলোকসজ্জিত আকাশ।

আমরা আনন্দে একত্র হয়েছিলাম

শরতের রোদে রাঙা দুপুরে

আমাদের ঘামের ফসল হাতে

. . . . . . . . . . .

আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি

আমাদের বপনের ঋতুতে

আমাদের যত্নের ঋতুতে,

আমরা ছিলাম অধ্যবসায়ী

আমরা ছিলাম নিবেদিত

আমাদের প্রচেষ্টা প্রতি,

এখন সময় এসেছে ফসল তোলার।

এই সব দিনে

আমরা ভোগ করি পরিশ্রমের ফসল

আমাদের আগে ছিল যারা,

বুঝি না আত্মত্যাগের মানে

যা জন্ম নিয়েছে

নিজের গড়া গৌরবের ছায়া হতে।

আমারও লোভার্ত হাত পৌঁছেছিল সেই আলমারিতে

একটি নিরবচ্ছিন্ন চেতনা নিয়ে,

প্রাচুর্যের মানে বুঝতে অপারগ,

এক নিঃশব্দ অস্বীকৃতির ভারে।

. . . . . . . . . . . .

এই সময়ে

কিছু মানুষ আছে,

আমার প্রতিবেশীরা,

আমার সহপথিক মানবেরা

অক্লান্ত পরিশ্রম করে, তবু ভোগে যন্ত্রণায়।

এদিকে আমার কঠিন চেতনা

আসে আর যায়

সহানুভূতির প্রাঙ্গণ দিয়ে,

ফেলে রেখে যায়

আমার জন্মগত ও ঈশ্বরপ্রদত্ত করুণা,

আমার অসংবেদনশীলতার দ্বারে।

.. . . . . . . . . . .

দশমাংশ কী,

এ কি শুধু এইটুকুই...

আমাদের সীমিত পকেট আর পার্স খালি করা

চাঁদার ঝুড়িতে ফেলার জন্য?

. . . . . . . .

আমি আমার দশম ভেড়া কোথায় দেব,

আমার দশম ছাগল,

আর কোন মন্দিরে...?

এ কি মানুষের তৈরি মন্দির,

ইট, চুনসুরকি আর কাঠ দিয়ে গড়া,

যেখানে আমরা জমায়েত হই

আমাদের স্বেচ্ছায় জমানো অস্থিরতা উজাড় করতে,

নাকি এটা তার চেয়ে বড় কিছু,

একটি মন্দির যা বিরাট কোনো চেতনার জগতে বিরাজমান,

যা আমাদের সকলকে আপন করে জড়িয়ে ধরে?

যখন

যখন সবকিছু ধসে পড়বে,

তখন তুমি কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবে?

যখন আকাশ নিজেকে গুটিয়ে নেবে,

তখন তুমি কীভাবে নিশ্বাস নেবে?

যখন তারারা তাদের আলো নিভিয়ে দেবে,

তখন কি আমাদের স্বপ্ন দেখার ক্ষমতাটাও

অদৃশ্য হয়ে যাবে?

যখন হাসি ব্যথার জন্ম দেবে,

তখন কি আমরা

অর্থবোধক অনুভূতি থেকে

সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে যাব?

যখন আমরা আর আহারের জন্য ক্ষুধার্ত থাকব না,

তখন কি আমরা সময়ের মৃত্যুযাত্রায়

নীরবে আত্মসমর্পণ করব?

যখন দিগন্তের শেষ

আমাদের সামনে দাঁড়াবে,

তখন কি আমরা ছুটে বেড়াব

সবকিছু মনে করতে, ফিরে পেতে

যা আমরা অবহেলা করেছি,

ধ্বংস করেছি, ভুলে গেছি?

যখন সব ‘কেন’র উত্তর মিলবে,

তখন কি আমরা অবশেষে বুঝতে পারব?

যেমন মি. স্মিথ বলেছিল নিওকে,

আমরা একধরনের ভাইরাস,

একটা বিপজ্জনক জাত

যাদের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হলো

ধ্বংস করার দক্ষতা।

এই আত্মনির্মিত দুঃস্বপ্ন

কবে শেষ হবে?

কবে?

সম্পর্কিত নিবন্ধ