গত ২২ এপ্রিল তারিখে ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পরই সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পাল্টা পদক্ষেপ নেয় ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের নয়টি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। 

সেই অভিযানের খুঁটিনাটি গোটা ভারতবাসীকে তুলে ধরার সময় নারীশক্তিকেই এগিয়ে রাখে ভারতীয় সেনা। সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলোকে কিভাবে শনাক্ত করা হয়, কিভাবে আঘাত হানা হয়, কত সময় ধরে ওই অভিযান চলে- সে সময় অভিযানের খুঁটিনাটি দেশবাসীকে বোঝানোর দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে। নারীশক্তিকে এগিয়ে রাখার পাশাপাশি, এই দুই কর্মকর্তাকে সামনে রেখে নাগরিকদের ঐক্য এবং সম্প্রীতির বার্তাও দেয় ভারতীয় সেনা। 

এবার সেই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে দেখা যাবে ভারতের জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি (কেবিসি)-তে। এই দুই সেনা কর্মকর্তার পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডার প্রেরণা দেওস্থালিকেও ওই শোতে অংশ নিতে দেখা যাবে। 

আরো পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে: ট্রাম্প

পাকিস্তানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করলো ভারত

আগামী ১৫ আগস্ট, ভারতীয় সময় রাত নয়টায় দেশটির স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ পর্বে এটি সম্প্রচার করা হবে সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশনে। কেবিসির ১৭তম এডিশনে ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। 

ইতোমধ্যেই সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন তাদের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে মেগাস্টারের সঙ্গে তাদের আলাপচারিতার একটি প্রোমো শেয়ার করেছে। ওই তিন সেনা কর্মকর্তাকে স্বাগত জানানোর সময় অমিতাভ বচ্চনকে দেশপ্রেমের অনুভূতি হিসাবে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। 

ওই প্রোমোর শুরুতেই কর্নেল সোফিয়া, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা এবং কমান্ডার প্রেরণা নিজেদের পরিচয় দেন। পরে কেবিসির হট সিটে বসে বচ্চনের সঙ্গে কথা বলার সময়, সোফিয়া জানান, “পাকিস্তান ইয়ে (সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপে মদদ দেওয়া) করতা চালা অরহা হ্যায়। তো জওয়াব দেনা বানতা থা স্যার। ইসিলিয়ে অপারেশন সিঁদুর কো প্ল্যান কিয়া গয়া’ (পাকিস্তান এটি করেই চলেছে। তার একটা জবাব দেওয়া দরকার ছিল। তাই অপারেশন সিঁদুরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল)। 

কমান্ডার ব্যোমিকা বলেন, ‘রাত কো এক বাজ কার পাঁচ মিনিট সে লেকার দেড় বাজে তক, পঁচিশ মিনিট মে খেল খতম কর দিয়া (রাত ১টা ৫টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত, আমরা ২৫ মিনিটের মধ্যে পুরো অপারেশন শেষ করেছি)। আমাদের লক্ষ্যগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল এবং কোনো বেসামরিক লোকের কোনো ক্ষতি হয়নি। 

তবে, একটি টেলিভিশন রিয়েলিটি শোতে উপস্থিত হয়ে সেনাবাহিনীর নারী কর্মকর্তাদের মুখে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান সম্পর্কে কথা বলার বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি নেটিজেনরা। অনেকে আবার সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত নারী কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানোর বাধ্যবাধকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মোহিত চৌহান নামে একজন লিখেছেন, “একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্রে কোনো সামরিক অভিযানের পরে আপনি কি কখনও এমন কিছু দেখেছেন? সামরিক চাকরিরত ব্যক্তিকে টিভি শোতে বসার জন্য কিভাবে অনুমোদন দেওয়া হলো? আসলে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার নির্লজ্জভাবে আমাদের বাহিনীকে তাদের তুচ্ছ রাজনীতি এবং অতি-জাতীয়তাবাদের জন্য ব্যবহার করছে।” 

ব্রুশ ওয়েনি নামে একটি এক্স হ্যান্ডেল অ্যাকাউন্ট থেকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রোটোকল কেবিসির মতো রিয়েলিটি শোতে সেনা কর্মকর্তাদের পাঠানোর অনুমতি দেয় কি না, এই প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কিছু প্রোটোকল, কিছু মর্যাদা এবং বিশাল সম্মান আছে। রাজনীতিবিদরা তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য এটি নষ্ট করছেন। এটা খুবই লজ্জাজনক।” 

তৃতীয় একজন মন্তব্য করেছেন, “আমাদের সেনাবাহিনী পবিত্র, রাজনীতির ঊর্ধ্বে, জনসংযোগের ঊর্ধ্বে। জাতিকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী, কোনো রাজনীতিকের ব্র্যান্ড রক্ষা করার জন্য নয়।”

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কম ন ড র ব য ম ক কর মকর ত র জন য র জন ত আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে নিয়ে আসেন না কেন: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, সেই অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট হয়, তাহলে আপনারা (সাংবাদিক) নিয়ে আসেন না কেন।’

আজ মঙ্গলবার সকালে রংপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের যে বিধিবদ্ধ আইন, তাতেও ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা ব্যাপার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আমরা যে অভিযোগ করব, তা যেন সুনির্দিষ্ট হয়। আমরা যদি বলে থাকি, তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, কোথা থেকে করেছেন, কীভাবে করেছেন, এই অংশগুলো যদি প্রমাণ করতে না পারি, তাহলে শেষ পর্যন্ত সেই অভিযোগ টিকবে না। এমনকি উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, সেই অভিযোগ যদি সুনির্দিষ্ট হয়, তাহলে আপনারা (সাংবাদিক) নিয়ে আসেন না কেন।’

সম্প্রতি রাজধানীতে এক সেমিনারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ নিজের কাছে রয়েছে। এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না। তবে তিনি উপদেষ্টাদের নাম বলেননি।

তবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক বিবৃতিতে সরকার তাঁর (সাবেক সচিব) কাছে সব প্রমাণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘বিষয়টি পত্রিকায় এসেছে। সেটি আমাদের চোখে পড়েছে। এই সরকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া দরকার, এটা রাজনৈতিক সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের নেতৃত্বে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একেবারেই দুর্নীতির বিপক্ষে একজন মানুষ। এটা যদি তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের কেউ হন, সে ক্ষেত্রেও তিনি বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। এ সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের এখানে কয়েকটি মামলা চলমান। আরও কয়েকটি বিষয় তদন্তাধীন। তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত যদি প্রমাণিত হয়, আমরা মামলা-মোকদ্দমায় চলে যাব।’

সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুদকের অভিযান প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান করছি। বিশেষ করে সেবা প্রদানকারী যেসব প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সেবা গ্রহিতাদের। আমরা অভিযান করছি, যাতে এই অভিযোগগুলো না হয়। ‘

পরে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি কর্মকর্তাদের ও কর্মচারীদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল হকের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। উপস্থিত আছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, পুলিশের রংপুরের রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, পুলিশ সুপার আবু সাইম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দয়া করে গাজায় যান: পোপ লিওর প্রতি ম্যাডোনার আহ্বান
  • পিএসজিকে বিদায় দোন্নারুম্মার, এনরিকে বললেন ‘আমি দায়ী’
  • গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল
  • কবর ভেঙে ফেলার আহ্বান ইসরায়েলি মন্ত্রীর
  • ডলার কাছে নিতেই আর কিছু মনে নেই, ব্যবসায়ীর ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লুট
  • নৌকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু
  • মহানবী (সা.)-এর জীবনে নারীদের অবদান 
  • বডিক্যাম কী, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কাজে দেবে
  • উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে নিয়ে আসেন না কেন: দুদক চেয়ারম্যান