কেবিসির মঞ্চে সোফিয়া-ব্যোমিকারা, শুরু বিতর্ক
Published: 13th, August 2025 GMT
গত ২২ এপ্রিল তারিখে ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পরই সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পাল্টা পদক্ষেপ নেয় ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের নয়টি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
সেই অভিযানের খুঁটিনাটি গোটা ভারতবাসীকে তুলে ধরার সময় নারীশক্তিকেই এগিয়ে রাখে ভারতীয় সেনা। সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলোকে কিভাবে শনাক্ত করা হয়, কিভাবে আঘাত হানা হয়, কত সময় ধরে ওই অভিযান চলে- সে সময় অভিযানের খুঁটিনাটি দেশবাসীকে বোঝানোর দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে। নারীশক্তিকে এগিয়ে রাখার পাশাপাশি, এই দুই কর্মকর্তাকে সামনে রেখে নাগরিকদের ঐক্য এবং সম্প্রীতির বার্তাও দেয় ভারতীয় সেনা।
এবার সেই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহকে দেখা যাবে ভারতের জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি (কেবিসি)-তে। এই দুই সেনা কর্মকর্তার পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডার প্রেরণা দেওস্থালিকেও ওই শোতে অংশ নিতে দেখা যাবে।
আরো পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে: ট্রাম্প
পাকিস্তানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করলো ভারত
আগামী ১৫ আগস্ট, ভারতীয় সময় রাত নয়টায় দেশটির স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ পর্বে এটি সম্প্রচার করা হবে সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশনে। কেবিসির ১৭তম এডিশনে ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন।
ইতোমধ্যেই সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন তাদের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সম্পর্কে মেগাস্টারের সঙ্গে তাদের আলাপচারিতার একটি প্রোমো শেয়ার করেছে। ওই তিন সেনা কর্মকর্তাকে স্বাগত জানানোর সময় অমিতাভ বচ্চনকে দেশপ্রেমের অনুভূতি হিসাবে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ওই প্রোমোর শুরুতেই কর্নেল সোফিয়া, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা এবং কমান্ডার প্রেরণা নিজেদের পরিচয় দেন। পরে কেবিসির হট সিটে বসে বচ্চনের সঙ্গে কথা বলার সময়, সোফিয়া জানান, “পাকিস্তান ইয়ে (সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপে মদদ দেওয়া) করতা চালা অরহা হ্যায়। তো জওয়াব দেনা বানতা থা স্যার। ইসিলিয়ে অপারেশন সিঁদুর কো প্ল্যান কিয়া গয়া’ (পাকিস্তান এটি করেই চলেছে। তার একটা জবাব দেওয়া দরকার ছিল। তাই অপারেশন সিঁদুরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল)।
কমান্ডার ব্যোমিকা বলেন, ‘রাত কো এক বাজ কার পাঁচ মিনিট সে লেকার দেড় বাজে তক, পঁচিশ মিনিট মে খেল খতম কর দিয়া (রাত ১টা ৫টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত, আমরা ২৫ মিনিটের মধ্যে পুরো অপারেশন শেষ করেছি)। আমাদের লক্ষ্যগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল এবং কোনো বেসামরিক লোকের কোনো ক্ষতি হয়নি।
তবে, একটি টেলিভিশন রিয়েলিটি শোতে উপস্থিত হয়ে সেনাবাহিনীর নারী কর্মকর্তাদের মুখে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান সম্পর্কে কথা বলার বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি নেটিজেনরা। অনেকে আবার সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত নারী কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানোর বাধ্যবাধকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ মোহিত চৌহান নামে একজন লিখেছেন, “একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্রে কোনো সামরিক অভিযানের পরে আপনি কি কখনও এমন কিছু দেখেছেন? সামরিক চাকরিরত ব্যক্তিকে টিভি শোতে বসার জন্য কিভাবে অনুমোদন দেওয়া হলো? আসলে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার নির্লজ্জভাবে আমাদের বাহিনীকে তাদের তুচ্ছ রাজনীতি এবং অতি-জাতীয়তাবাদের জন্য ব্যবহার করছে।”
ব্রুশ ওয়েনি নামে একটি এক্স হ্যান্ডেল অ্যাকাউন্ট থেকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রোটোকল কেবিসির মতো রিয়েলিটি শোতে সেনা কর্মকর্তাদের পাঠানোর অনুমতি দেয় কি না, এই প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কিছু প্রোটোকল, কিছু মর্যাদা এবং বিশাল সম্মান আছে। রাজনীতিবিদরা তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য এটি নষ্ট করছেন। এটা খুবই লজ্জাজনক।”
তৃতীয় একজন মন্তব্য করেছেন, “আমাদের সেনাবাহিনী পবিত্র, রাজনীতির ঊর্ধ্বে, জনসংযোগের ঊর্ধ্বে। জাতিকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী, কোনো রাজনীতিকের ব্র্যান্ড রক্ষা করার জন্য নয়।”
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কম ন ড র ব য ম ক কর মকর ত র জন য র জন ত আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫