যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও যা ভাবা দরকার
Published: 13th, August 2025 GMT
বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাল্টা শুল্ক’ ১ আগস্ট থেকে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মোট ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশের কিছু বেশি শুল্ক আদায় করা হবে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ হলো পারস্পরিক বা পাল্টা শুল্ক এবং বাকি ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ গড় শুল্ক, যা আগে থেকেই কার্যকর ছিল। পাল্টা শুল্ক আরোপের পর কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ সচেতন মহলে যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, সেটি বেশ কমেছে।
বাংলাদেশি পণ্যে নতুন করে যে পাল্টা শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর সমান বা কাছাকাছি। যদিও চীনের পাল্টা শুল্কহার এখনো চূড়ান্ত করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। তার পরও বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমানোর ঘোষণা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কিছুটা স্বস্তি এনেছে।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একের পর এক চাপ আসছে। এসব চাপ মোকাবিলায় আমরা এখনো সক্ষমতা অর্জন করতে পারছি না।প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদকেরা পর্যালোচনা করে দেখিয়েছেন, অপরাপর প্রতিযোগী দেশের তুলনায় আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বরং বৃদ্ধি পাবে। ভারতের শুল্ক অনেক বেড়ে যাওয়ায় ভারত নিয়ে আমাদের যে উদ্বেগ চলছিল, তা অনেক গুণ কমে গেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্লেষক ভারত থেকে তৈরি পোশাক উৎপাদন বাংলাদেশে স্থানান্তরের ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন, শুল্কহার কমিয়ে আনার ব্যাপারে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই।
আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অন্যদিকে পাল্টা শুল্কের হ্রাস করা হারে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। প্রতিযোগীদের তুলনায় সহনীয় শুল্কহার আদায়ের বিনিময়ে বেশি দামে হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
এ ছাড়া শোনা গেছে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় থাকা পাল্টা শুল্ক চুক্তিতে অনেক বিধিনিষেধ ও শর্তের বিষয় আছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান কতটা সুসংহত বা স্বার্থ কতটা সুরক্ষিত, সেসব বিষয় বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। একটি বৈচিত্র্যময়, প্রতিযোগিতামূলক ও সহনশীল বাণিজ্য কৌশল প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। এ হিসাবে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলার। এ বাণিজ্যঘাটতি কমাতেই বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করে।
পাল্টা শুল্কহারের সংশোধন স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবু একটি প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কী দিয়েছে? কিছু প্রতিশ্রুতি যেমন গম, তুলা ও উড়োজাহাজ আমদানির বিষয়টি এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। তবে বলা হচ্ছে, আরও কিছু প্রতিশ্রুতি গোপনীয়তা চুক্তির আওতায় দেওয়া হয়েছে, যা দ্রুতই জনসমক্ষে আসার সম্ভাবনা নেই।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণে বাংলাদেশের গম, তুলা ও উড়োজাহাজ আমদানি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যঘাটতি হ্রাসের একটি সম্ভাব্য উপায়। তবে এত উচ্চমূল্য ক্রয়ের ওপর নির্ভর করা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও উন্নয়ন অগ্রাধিকারের জন্য টেকসই বা কৌশলগতভাবে সর্বোত্তম না-ও হতে পারে। পরিবর্তে প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্যঘাটতি মোকাবিলা এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব জোরদার করা আরও উত্তম হতো।
তবে পাল্টা শুল্ক কমানোয় বাংলাদেশ যে উপকৃত হয়েছে, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ উপকার বাংলাদেশ কতটুকু কাজে লাগাতে পারবে কিংবা অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনতে পারবে, সেটি নির্ভর করছে দেশের ব্যবসায়ী ও সরকারের ওপর। আমাদের শিল্পকারখানায় কতটুকু দক্ষতা বাড়ছে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গুটিকয় ছাড়া অধিকাংশ শিল্পই উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।
তা ছাড়া শিল্পগুলোয় ঘণ্টাপ্রতি উৎপাদনক্ষমতা কম হওয়ায় আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেশি। তবে আমরা একটি সুবিধা ভোগ করি, সেটি হলো কম দামে শ্রম পাই। তবে শিল্পকারখানায় যদি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ে, তাহলে শুল্কের বাড়তি চাপ কমানো সম্ভব। এরই মধ্যে কিছু কারখানা উৎপাদনশীল ও উৎপাদন সক্ষম আধুনিক মেশিন এনে তিন-চার গুণ উৎপাদন বাড়িয়েছে। তাইওয়ান ও ইতালির নতুন মেশিন আনার ফলে তাদের উৎপাদন বাড়ছে।
পাশাপাশি সেসব পণ্যের জন্য বা ভিন্ন এইচএস কোডের পণ্যের জন্য তারা একটু বেশি দামও পাচ্ছে। এটা যদি আরও বাড়ানো যায়, পোশাকশিল্প খাতকে যদি আরও সক্রিয় করা যায়, তাহলে আমাদের উৎপাদন খরচ কমবে। সেই সঙ্গে ভ্যালু চেইনের বড় বাজারে পণ্য প্রবেশ করতে পারলে আমাদের আয় বাড়বে।
বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একের পর এক চাপ আসছে। এসব চাপ মোকাবিলায় আমরা এখনো সক্ষমতা অর্জন করতে পারছি না। আমাদের শিল্পকারখানায় উৎপাদন সক্ষমতার সুযোগ খুবই কম। তাই দক্ষভাবে ইউটিলিটি ব্যবহার, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং বন্দরসহ সব ক্ষেত্রে লজিস্টিক ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি—এ তিনটি কাজই আমাদের অব্যাহতভাবে করে যেতে হবে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, ঋণের সুদ, শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনকি কর ব্যবস্থাপনা থেকে চোখ ফেরালেও চলবে না।
● মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন য আম দ র র ওপর আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সারজিসের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না হলে আন্দোলনের হুমকি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে এনসিপির ধামরাই উপজেলা শাখা।
বুধবার (১৩ আগস্ট) ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডে এনসিপির ধামরাই উপজেলা শাখার অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসাদুল ইসলাম মুকুল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের নিয়ে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও সারজিস আলমের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আসাদুল ইসলাম মুকুল বলেছেন, সারজিস আলমের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা যে হয়রানিমূলক মামলা করেছেন, অনতিবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে হবে। তা নাহলে বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে আন্দোলন করবে এনসিপি।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে সারজিসের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা
এক বছরে যতটুকু পাওয়া সম্ভব ছিল, তাও পাইনি: সারজিস
তিনি আরো বলেন, তারা ১৭ বছরে তাদের দলের প্রধান নেতার বাড়ির সামনে থেকে বালির ট্রাক সরানোর ক্ষমতা রাখেনি। এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে আন্দোলনে সংগঠিত হয়ে নতুন করে বাংলাদেশের রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখে তারাই আজ নাহিদ ইসলামকে নিয়ে বিভিন্নভাবে কটূক্তি করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির ধামরাই উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক ইসরাফিল ইসলাম খোকন, যুগ্ম সমন্বয়ক খোদেজা খানম ও উজ্জ্বল হোসেন, উপজেলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক সামিউর রহমান প্রমুখ।
ঢাকা/সাব্বির/রফিক