গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ সরানো যায় না: মাহমুদুর রহমান
Published: 13th, August 2025 GMT
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘‘গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ সরানো যায় না। যা জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ-যুবকরা প্রমাণ করে দেখিয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণরা দেশকে নতুনভাবে পথ দেখিয়েছে। তাদের আবেগ ও মনের কথা আমাদের বুঝতে হবে। ১৬-১৭ বছর ধরে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এমন অকুতোভয় তরুণ প্রজন্ম তৈরি হলো, তা এক চমকপ্রদ ব্যাপার।’’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘একটি রাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদ নিজে নিজে তৈরি হয় না। বিগত শাসনামলে ব্যবসায়ী, আমলা, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা ফ্যাসিবাদ তৈরিতে সহযোগিতা করেছে। তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে ন্যারেটিভ তৈরি করেছে।’’
আরো পড়ুন:
দেশে কিছু ভুয়া সমন্বয়ক সৃষ্টি হয়েছে: দুদক চেয়ারম্যান
রাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ইউট্যাবের বিজয় র্যালি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (১৩ আগস্ট) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (খুবিসাস) ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনে অপেক্ষাকৃত তরুণ সাংবাদিকরা লড়াই করেছেন। অথচ অনেক সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন কিংবা সেলফ সেন্সরশিপের আশ্রয় নিয়েছিলেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের অবশ্যই সৎ ও সাহসী হতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। এস্টাব্লিশমেন্টের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে লিখতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিতে না পারলে ভালো সাংবাদিক হওয়া যাবে না। উভয়পক্ষের মন্তব্য নিয়েই সংবাদ পরিবেশন করতে হবে।’’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘‘জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বাকস্বাধীনতা ফিরে পেলেও পুরোপুরি মুক্ত হয়েছি কি না, তা প্রমাণিত হবে নির্বাচনের পর। নির্বাচিত সরকার যদি বিগত সরকারের পরিণতি দেখে শিক্ষা না নেয়, তাহলে ফ্যাসিবাদ আবারো ফিরে আসবে।’’
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ৬০ ছাত্রনেতার বিবৃতি
জুলাই ঘোষণাপত্রকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক প্রহসন উল্লেখ করে ঘোষণাপত্রটি প্রত্যাখ্যান করেছেন গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ৬০ ছাত্রনেতা। তারা শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনগণকে অংশীদার করে নতুন ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।
রোববার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি জানান ছাত্র নেতারা। এতে বলা হয়, হাজারো শহীদ এবং আহত ভাইবোনের রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে সংঘটিত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এবং শেখ হাসিনার স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণ বিদ্যমান শোষণ-নিপীড়নমূলক পুলিশ, আদালত, আইন-সংবিধান তথা পুরোনো ব্যবস্থার কর্তৃত্ব চূড়ান্তভাবে অস্বীকার করে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চব্বিশের জুলাই ঊনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানের মতো সামরিক শাসনকে মেনে নেয়নি। আবার নব্বইয়ের মতো কেবল ব্যক্তি স্বৈরাচারীর অপসারণকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেনি বরং রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙক্ষার মধ্য দিয়ে গণবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের বৈপ্লবিক চেতনাকে জাগ্রত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই জনগণের আকাঙক্ষা অনুসারে নতুন কল্যাণমূলক, গণবান্ধব রাষ্ট্র তৈরির দায়িত্ব পালনে অগ্রসর ভূমিকায় হাজির হয়ে গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা যাদের ডাকে বিশ্বাস স্থাপন করে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
ছাত্রনেতারা বিবৃতিতে বলেন, গত ৫ আগস্ট পুরোনো শোষণমূলক আমলাতন্ত্র, লুটেরা শক্তি ও পুরোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সমর্থনে একটি প্রতারণামূলক ও অর্থহীন ডকুমেন্টকে জুলাই ঘোষণাপত্র নামে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এমন অবস্থায় গণ–অভ্যুত্থানে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা, জুলাই ঘোষণা ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দাবি জানায়। পাশাপাশি শ্রেণি-পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম গণপরিষদ নির্বাচন আয়োজন ও প্রকৃত ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন গণবান্ধব সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানায়।
এসব দাবি বাস্তবায়নে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা তথা পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, নারীসমাজ, কৃষক-শ্রমিক, পেশাজীবীসহ ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, হাজারো শহীদ ও আহত গাজী ভাই-বোনদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। তাদের অপরিসীম সাহস ও দেশপ্রেমকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আমরা সত্যিকার গণবান্ধব ও জনকল্যাণমূলক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম যেকোনো মূল্যে চলমান রাখবো।’
বিবৃতিতে সই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরিফ সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল্লাহ সালেহীন, মো. ওয়াহিদ উজ জামান, হামজা মাহবুব, মো. সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. রাসেল আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবলী সাদী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল তানভীর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাকিব হোসাইন, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজিফা জান্নাত, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. রাসেল, ঢাকা কলেজের মো. রাকিব, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাদ বিন রনি, শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম নীরব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণা রিয়া, স্টেট ইউনিভার্সিটির মিশু আলী সুহাস, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সিনথিয়া জাহিন, বিএল কলেজের (খুলনা) সাজিদুল ইসলাম প্রমুখ।