ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ঋণখেলাপিরা অংশ নিতে পারবেন না: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 13th, August 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাংকের ঋণখেলাপিরা অংশ নিতে পারবেন না। তবে রাজনীতিকেরা যদি উৎসাহ দেন যে টাকাপয়সার বিনিময়ে মনোনয়ন দেবেন ও ভোট দেবেন, তাহলে তো অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কিছুই করা যাবে না। অর্থ উপদেষ্টা এ-ও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সচিবালয়ে আজ বুধবার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত ‘ইউ পেনশন অ্যাপ’ উদ্বোধন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অর্থ উপদেষ্টা আজ অ্যাপটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
অর্থসচিব মো.
প্রচলিত আইনেই ঋণখেলাপিদের নির্বাচন করতে বিধিনিষেধ আছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে, কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্য হন না। ফলে খেলাপি হলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। তবে এ বিধানের অপব্যবহার হয় প্রতি নির্বাচনের আগেই।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর। নির্বাচন কমিশনের উচিত ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আদালতের স্টে অর্ডার নিয়ে। মহীউদ্দীন খান আলমগীর (আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী) তো ঋণখেলাপি হয়েও পাঁচ বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন।’
আগামী নির্বাচনে কালোটাকা রোধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনো আমাদের কাছে বিষয়টি আসেনি। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন চিন্তা করবে। তবে কালোটাকার ক্ষেত্রে দুটি বিষয়। একটি হচ্ছে উৎস, আরেকটি প্রক্রিয়া। উৎসটা আগের চেয়ে মোটামুটি বন্ধ হয়েছে। আগে তো ব্যাংকের মালিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক, সংবাদপত্রের মালিক, ফ্ল্যাটের মালিক সব একজনই ছিল। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। এখন মোটামুটি চেক অ্যান্ড ব্যালান্স (ভারসাম্য) হচ্ছে।’
গতকাল মঙ্গলবার এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য তারা রাখুক। আমি বামপন্থী রাজনীতি করেছি। তখন কত বক্তব্য দিয়েছি! হল বন্ধ করে দাও, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দাও ইত্যাদি। বন্ধ হয়েছে নাকি?’
পেনশনের মোবাইল অ্যাপ চালু
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘ইউ পেনশন’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এখন থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে সর্বজনীন পেনশনের কর্মসূচির চাঁদা দেওয়া যাবে। লগইন, তথ্য যাচাই, নোটিফিকেশন, নমিনি পরিবর্তন—সবই করতে পারবেন গ্রাহকেরা।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত সংস্থায় ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে যাঁরা নতুন চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে ‘প্রত্যয়’ নামক পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এ নিয়ে বিরোধিতা ও আন্দোলন করছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আর নতুন চাকরিতে আসা সরকারি কর্মচারীদের জন্য এ বছরের ১ জুলাই থেকে ‘সেবক’নামক কর্মসূচি চালু করার উদ্যোগও ছিল।
গত বছর সরকার পতনের ঠিক দুই দিন আগে গণভবনে অনুষ্ঠিত পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ‘প্রত্যয়’ বাতিলের ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর সেবক চালুর কার্যক্রমও পিছিয়ে যায়।
অর্থ উপদেষ্টা অবশ্য দুটি কর্মসূচি চালু করার বিষয়ে ইতিবাচক। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এগুলোতে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে তা সংশোধনের ব্যবস্থা করা হবে। চালু থাকা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে চাকরিজীবী, শিক্ষকসহ সব পেশার মানুষ কেন অংশ নিচ্ছেন না, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন অর্থ উপদেষ্টা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ঋণখ ল প র জন ত মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লিখিত পরীক্ষায় প্রতারণা, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা, ৮ জনকে কারাদণ্ড
কারারক্ষী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় ৮ জনের ১০ মাস করে কারাদণ্ড হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎকার দিতে আসার পর তাঁরা ধরা পড়েন। বিষয়টি আজ বুধবার কারা কর্তৃপক্ষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারের সময় জানা যায় ৮ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেননি। তাঁদের নাম করে অন্যরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু প্রকৃত প্রার্থীরা সাক্ষাৎকার দিতে এলে বিষয়টি ধরা পড়ে। লিখিত পরীক্ষার সময় কারা কর্তৃপক্ষ সব চাকরিপ্রার্থীর ছবি তুলে সংরক্ষণ করে রাখে। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় সেই ছবি মিলিয়ে দেখা হয়। এভাবে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে।
কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, জালিয়াতিতে যুক্ত ৮ জন প্রার্থীকে শনাক্ত করার পর বিষয়টি চকবাজার থানা-পুলিশকে জানানো হয়। থানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের আটক করে স্পেশাল মেট্রোপলিটন আদালত লালবাগে উপস্থিত করলে বিচারক তাঁদের কারাদণ্ড দেন।
আসামিদের জবানবন্দি থেকে দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাঁদের ভাষ্য, চক্রের সদস্যরা নিয়োগপ্রার্থীদের বাবা, মা, ভাই বা নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করেন। কেউ কেউ সন্তানের পক্ষে অলিখিত স্টাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে এবং ব্ল্যাঙ্ক চেক দালালদের কাছে জমা দিয়ে চুক্তি করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত দালালদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে আদালত চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে একটি এজাহার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।