ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের বক্তব্য নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার জবাবে কী বলছে পাকিস্তান
Published: 13th, August 2025 GMT
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র সফরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের বক্তব্যকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘বিকৃত’ ও ‘বিভ্রান্তিকরভাবে ঘুরিয়ে’ (টুইস্ট) প্রকাশ করেছে।
ফিল্ড মার্শাল মুনির দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তিনি গত রোববার তাঁর সফর শেষ করেন। আগের সফরের মতো এবারও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের টাম্পায় তিনি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) কমান্ড পরিবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সেনাপ্রধান আসিম মুনির টাম্পায় পাকিস্তানের কনসাল আদনান আসাদের আয়োজিত এক ব্ল্যাক-টাই নৈশভোজে অংশ নেন। সেখানে প্রায় ১৫০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি, রাষ্ট্রদূত রিজওয়ান শেখ, দূতাবাসের কর্মকর্তা ও প্রবাসী সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলেন।
এ অনুষ্ঠানে মুনিরের কিছু মন্তব্য ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই খবর নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সফররত পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বক্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। আসিম মুনিরের মন্তব্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’।
ভারতের বিবৃতিতে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি দেওয়াকে পাকিস্তানের ‘চিরচেনা কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ধরনের মন্তব্যের অন্তর্নিহিত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিষয়টি নিজেরাই মূল্যায়ন করতে পারছে। এতে দীর্ঘদিনের সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে। যে দেশে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে, তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ তৃতীয় কোনো দেশের (যুক্তরাষ্ট্রে) মাটিতে এ ধরনের মন্তব্য করা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভারত ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছে, পারমাণবিক হুমকির সামনে মাথা নোয়াবে না। আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ অব্যাহত রাখব।’
ভারতের বিবৃতির জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপরিণত মন্তব্য পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। তথ্য বিকৃত করা ও বক্তব্যকে প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন করে উপস্থাপন করা তাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ভারতের কথিত ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেল’ বর্ণনা বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থান্বেষী। পাকিস্তান বলপ্রয়োগ বা বলপ্রয়োগের হুমকির বিরোধী। ভারত যখনই চাপে পড়ে, তখন যুদ্ধোন্মাদ ভাষণ দিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পাকিস্তান একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র, যেখানে ‘নাগরিক নিয়ন্ত্রণে উন্নত কমান্ড ও কন্ট্রোল ব্যবস্থা’ রয়েছে। সব সময় শৃঙ্খলা ও সংযমের সঙ্গে এমন বিষয় পরিচালনা করা হয়।
মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং কোনো প্রমাণ ছাড়াই তারা এমন অভিযোগ করেছে।’
পাকিস্তান বলেছে, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, তারা পাকিস্তানের ওপর চাপ দিতে তৃতীয় দেশের প্রসঙ্গ এনেছে। এটি ভারতের কূটনৈতিক আত্মবিশ্বাসের অভাবের পরিচয় এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে অন্য দেশকে জড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, ‘ভারতের আগ্রাসী ও যুদ্ধোন্মাদ মনোভাবের বিপরীতে পাকিস্তান বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আচরণ চালিয়ে যাবে। তবে ভারতের কোনো আগ্রাসন বা আমাদের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন হলে সঙ্গে সঙ্গে সমান জবাব দেওয়া হবে। ফলে উত্তেজনা বাড়লে তার দায় ভারতের নেতৃত্বের ওপরই বর্তাবে।’
ডনের খবরে বলা হয়, গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরপরই দুই দেশের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র সামরিক সংঘর্ষ শুরু হয়। ৭ মে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়, যাতে বেসামরিক লোক নিহত হন। জবাবে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। উভয় পক্ষের ঘাঁটিতে পাল্টা হামলার পর ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
গত মে মাসের এই সংক্ষিপ্ত, কিন্তু প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর থেকে নয়াদিল্লি ট্রাম্পের ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে অসন্তুোষ প্রকাশ করেছে। আবার ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় প্রভাব পড়েছে। যদিও আগে ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে প্রকাশ্য সৌহার্দ্য দেখা গিয়েছিল, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে।
ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, গত ১০ মে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি যে ঘোষণা করেছিলেন, সেটি তার মধ্যস্থতা ও বাণিজ্য চাপের ফল। ভারত বারবার এই দাবি অস্বীকার করেছে। সংঘর্ষের পর ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে আতিথ্য দেন।
ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতি নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছেন। তিনি রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি আমদানি ও শুল্কনীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় অচলাবস্থার পর রাশিয়ার তেল আমদানির কারণে ‘জরিমানা’ হিসেবে গত সপ্তাহে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। নতুন এই শুল্ক ২৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে পারে। সব মিলিয়ে এখন ভারতীয় পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ৫০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো বাণিজ্য অংশীদারের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ শুল্কগুলোর একটি হচ্ছে এটি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আস ম ম ন র আম দ র প রক শ র সফর
এছাড়াও পড়ুন:
বিটিভিতে আবার শোনা যাবে, ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি...’
প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ফিরছে নতুন কুঁড়ি। গত মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজস্ব পেজে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। এই খবর শুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়েছেন—কারও মনে পড়েছে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার স্মৃতি, কারও মনে ভেসে উঠেছে শৈশবের প্রিয় অনুষ্ঠানটির দৃশ্য। ফেসবুকে অনেকে ছবিও শেয়ার করেছেন।
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছিল কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর’ কবিতা থেকে। যার প্রথম ১৫ লাইন অনুষ্ঠানের সূচনাসংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে মোস্তফা মনোয়ারের প্রযোজনায় আবার শুরু হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। সে সময় বিটিভির অন্যতম আলোচিত এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে শিশু-কিশোরদের স্বপ্নের মঞ্চ। নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসা তরুণেরা গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্পবলা, কৌতুকসহ বিভিন্ন শাখায় নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পান। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান। পরে নানা কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয় বিটিভি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠানটি আবার শুরু করার খবর শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরে বলা হয়, কোভিড মহামারির কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
তিন দশকে নতুন অনেক তারকার জন্ম দিয়েছে নতুন কুঁড়ি। অনেকে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, নাট্যাঙ্গন ও সংগীতজগতে নিজস্ব অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন তারানা হালিম, রুমানা রশিদ ঈশিতা, তারিন জাহান, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ আরও অনেকে। এ তালিকায় আছেন সামিনা চৌধুরীসহ অনেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীও।