বিশ্ব অর্থনীতি একধরনের সমস্যায় পড়েছে, যেখানে ঋণদাতা দেশগুলো বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর বাস্তব অবস্থা একেবারেই আলাদা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সবচেয়ে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি ও সুদ শোধে রেকর্ড ৯৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার শুধু সুদের জন্য গেছে।

অর্ধেকের বেশি দরিদ্র দেশ এখন ঋণসংকটে আছে বা তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। যখন সুদহার কম ছিল আর ঋণ পাওয়া সহজ ছিল, তখন তারা ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ও জলবায়ু অভিযোজনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে খরচ কমাতে হচ্ছে। ফলে তারা ঋণে খেলাপি না হলেও উন্নয়নের কাজে পিছিয়ে পড়ছে। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, এ ব্যবস্থা বদলাবে কে? জাতিসংঘের উপমহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ যেমন বলেছেন, এখন সময় এসেছে পুরোনো নিয়ম বদলে দেওয়ার। 

যদি ঋণগ্রহীতা দেশগুলো একসঙ্গে সম্পদ জোগাড় করে, তথ্য বিনিময় করে এবং যৌথ কৌশল তৈরি করে, তবে তারা শক্তিশালী অবস্থান থেকে দর-কষাকষি করতে পারবে।

‘ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর ক্লাব’ গড়ে তোলা হলে ঋণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও ন্যায্য ও কৌশলগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। নইলে সরকারগুলো এমন এক ব্যবস্থার মধ্যে বন্দী হয়ে থাকবে। এটি তাদের অর্থ নিঃশেষ করবে, প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করবে এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে জলবায়ু সহনশীলতা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি আটকে দেবে। 

গ্লোবাল সাউথের ঋণের চাপ ক্রমেই বাড়ছে; কারণ আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা সব সময় ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর ক্ষতি করে।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন (আঙ্কটাড) বলছে, অন্তত অর্ধেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ শুধু সুদ পরিশোধেই তাদের কর আয়ের ১০ শতাংশের বেশি ব্যয় করছে। ৩৩ কোটি মানুষ এমন দেশে বাস করে, যেখানে ঋণ শোধে স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয়। আর ২০০ কোটি মানুষ এমন দেশে বাস করে, যেখানে শিক্ষা খাতে ঋণদাতাদের তুলনায় কম অর্থ বরাদ্দ হয়। এ চাপ আরও বাড়ছে। কম সুদের যুগে নেওয়া ঋণ এখন অনেক বেশি সুদে নবায়ন হচ্ছে। অথচ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমছে এবং সরকারি আয় বাড়ছে না। উন্নয়ন সহায়তা কমে যাওয়া ও অর্থায়নের শর্ত কঠিন হওয়ায় গ্লোবাল সাউথের বাজেট ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। 

এটাই প্রথম ঋণসংকট নয়। গত শতকে নব্বইয়ের দশকের শেষে এবং এ শতকের শুরুতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ‘অত্যধিক ঋণগ্রস্ত দরিদ্র দেশ উদ্যোগ’ এবং ‘বহুপক্ষীয় ঋণ মওকুফ উদ্যোগ’ চালু করেছিল। ওই উদ্যোগ অনেক দেশের ঋণ মওকুফে সাহায্য করেছিল এবং দারিদ্র্য হ্রাসে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এই উদ্যোগগুলো সীমিত পরিসরে ছিল। তা বাস্তবায়নে সময় লেগেছে, আর অনেক দেশ তা থেকে বাদ পড়েছিল। 

সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎস ও মার্টিন গুজমান সার্বভৌম ঋণ পুনর্গঠনের জন্য একটি বিশদ কাঠামো প্রস্তাব করেছেন। তাতে দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ, কম সুদের হার এবং প্রয়োজনে মূলধন হ্রাসের ব্যবস্থা আছে। তাঁদের পরিকল্পনা বর্তমান জটিল ঋণদাতা বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই। সেখানে বাণিজ্যিক ঋণদাতা ও চীনের মতো নতুন খেলোয়াড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে ভালো প্রযুক্তিগত পরিকল্পনার জন্যও রাজনৈতিক সমর্থন দরকার। একটি ‘ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর ক্লাব’ এ ধারণাগুলো একত্র ও জোরালো করে তুলতে পারে, যাতে দেশগুলো আলাদা না থেকে একসঙ্গে কাজ করে। 

এ ধরনের ক্লাব কৌশলগত ঐক্য, তথ্য ভাগাভাগি এবং একক কণ্ঠে কথা বলার সুযোগ দেবে। এটি ভারসাম্য বদলাতে সাহায্য করবে। ধনী ঋণদাতারা বহুদিন ধরেই নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ক্লাব তৈরি করেছে। যেমন প্যারিস ক্লাব, জি-৭, জি-২০। এমনকি বেসরকারি ঋণদাতাদেরও ‘ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স’ আছে। কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের কাছে তেমন কোনো যৌথ শক্তি নেই। এই ক্লাব সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারে। 

তবে কাজের জন্য দরকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যৌথ কৌশল ও স্পষ্ট লক্ষ্য। এখানে চ্যালেঞ্জও আছে। অনেক সরকার হয়তো বাজার বা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ঋণগ্রস্ত দেশের জোটে প্রকাশ্যে যোগ দিতে চাইবে না। ঐক্য গড়া সহজ নয়, কিছু সরকার সতর্ক থাকবে। কিন্তু ঋণের বোঝা বাড়ছে। বাজেট চাপে আছে। আর বৈশ্বিক আর্থিক শাসন জট পাকিয়ে আছে। এ অবস্থায় কিছু না করা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। ঋণদাতাদের নিজেদের ক্লাব বহুদিন ধরে আছে। এখন ঋণগ্রহীতাদেরও একটি ক্লাব থাকা দরকার। 

হিলা রাসুল-আইয়ুব ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক অরাজনৈতিক গবেষণা ও কর্মসংগঠন ‘নিউ আমেরিকা’র ‘প্ল্যানেটারি পলিটিকস’ উদ্যোগের পরিচালক

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব যবস থ র জন য সরক র দরক র ঋণদ ত

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা

কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’

সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।

সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে

সম্পর্কিত নিবন্ধ