ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনা করতে আগামীকাল শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্করিজ শহরে এই বৈঠক হবে। তবে বৈঠক থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার দুদিন আগে গতকাল বুধবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। বৈঠক শেষে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শুক্রবারের বৈঠকে রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে রাজি না হয়, তাহলে এর পরণতি হবে খুবই মারাত্মক।
তবে বৈঠকে যে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম, সেই ইঙ্গিত হোয়াইট হাউস থেকেই দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই যুদ্ধে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে কেবল একটি পক্ষই (বৈঠকে) উপস্থিত থাকবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন, কারণ কীভাবে আমরা এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারি, তার একটি সুস্পষ্ট ধারণা নিতে চান তিনি।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, অ্যাঙ্করিজের একটি সামরিক ঘাঁটিতে বৈঠকটি হবে। ট্রাম্প-পুতিন দুজন আলাদাভাবে বৈঠক করবেন। অর্থাৎ তাঁরা দুজন ছাড়া বৈঠকে কেউ উপস্থিত থাকবেন না।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে হলে দুই পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে। ইউক্রেনকে যেমন কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে, তেমনি রাশিয়া যেসব ভূখণ্ডের দখল নিয়েছে, সেসবেরও কিছু ছাড়তে হবে।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এ ধরনের কোনো চুক্তি তাঁর দেশের সংবিধানপরিপন্থী। ইউক্রেনকে আলোচনায় না রেখে এ ধরনের কোনো চুক্তি হতে পারে না। ট্রাম্প অবশ্য গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে আবার তাঁর বৈঠক হতে পারে। দ্বিতীয় বৈঠক হলে তাতে জেলেনস্কিও থাকবেন।
পুতিন রাজি না হলে কঠোর নিষেধাজ্ঞার আহ্বানগতকাল বিকেলে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে যান জেলেনস্কি। সেখানে জেলেনস্কিসহ ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করেন ট্রাম্প। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি যেন ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন, সে জন্য চাপ দিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এই ফোনালাপ করেন ইউরোপের নেতারা।
ইউরোপের নেতারা বলছেন, যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে চুক্তি করতে হলে অবশ্যই ইউক্রেনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কিয়েভকে বাদ দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির কোনো চুক্তি হতে পারে না। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প যাতে ইউক্রেনের স্বার্থের বিষয়টির প্রতি সম্মান দেখান, সেটা চান তাঁরা।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে জেলেনস্কি ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ছাড়াও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ইইউর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন, ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তেসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ শেষে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স একটি যৌথ বিবৃতি দেয়। তাতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির কোনো চুক্তি হলে তাতে অবশ্যই ইউক্রেনের নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তার বিষয়টি থাকতে হবে। আর পুতিন যদি শুক্রবার যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি করতে রাজি না হন, তাহলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত।
এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধের যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, তাতে অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলোকে যুক্ত করতে হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আলাস্কার বৈঠকের আগে আমরা আমাদের সমন্বিত অবস্থান (ট্রাম্পকে) জানিয়েছি। এই হত্যাযজ্ঞ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। রাশিয়ার ওপর চাপ দিন। এতে কাজ হয়। শান্তি ফেরাতে এর বিকল্প নেই।’
আরও পড়ুনক্লিনটন থেকে ট্রাম্প: যেভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মন জয় ও পরে হতাশ করেন পুতিন১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প ইউর প র বল ছ ন য ক তর অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।