সব দল ও পক্ষের লক্ষ্য যদি হয় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, তাহলে নির্বাচনবিষয়ক আইন ও বিধিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষ করে যেসব আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে, সেগুলো মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইসির চূড়ান্ত প্রস্তাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় ‘সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী’ যুক্ত করা হয়েছে। আইনে এটি যুক্ত হলে তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকায় ইসির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া যতটা সহজ হয়েছে, রাজনৈতিক সরকারের সময়ে সেটা পারত কি না, সন্দেহ আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা ও এখতিয়ার নিজেদের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ বা খর্ব করতে চায় আর বিরোধী দলে থাকলে বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ছিল বহু বছর ধরে। এ নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম কম হয়নি। সে ক্ষেত্রে ইসির নেওয়া দুটি সিদ্ধান্তই ইতিবাচক বলে মনে করি। রাজনৈতিক দলগুলোও স্বাগত জানিয়েছে।
তবে ইসির বৈঠকে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্ক তৈরি করতে পারে। যেমন জোটগত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা। আসন সমঝোতা ও জোটগত নির্বাচনকে এক করে দেখা ঠিক হবে কি না, তা আরও বিচার-বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। অন্যদিকে ইসি একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের যে প্রস্তাব করেছে, তা নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। নবম জাতীয় সংসদে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা ছিল সব আসনের ক্ষেত্রে। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এটি বাতিল করে দেয়। নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে বলে আশা করছে, সেই নির্বাচনে একক প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। যদি ইসি না ভোটের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে, সেটি সব আসনের জন্যই হওয়া উচিত।
ইসির প্রস্তাবে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষার বিষয় সুনির্দিষ্ট করা (ব্যত্যয় হয়েছে মনে করলে ইসি সেগুলোই নিরীক্ষা করবে), দলের অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া এবং দাতার আয়কর বিবরণীতে সেটা দেখানোর বিধান করার কথা বলা হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে মত এসেছে।
রাজনৈতিক দলের অনুদান বিষয়ে সর্বক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করার প্রস্তাবটি ভালো। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে সর্বক্ষেত্রে সরকার ও প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চায়, সেখানে এ বিষয়ে আপত্তি করার কোনো যুক্তি নেই।
অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের সিদ্ধান্তও সাহসী বলে মনে করি। অবশ্যই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তা করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন যখন একটি আসনের উপনির্বাচন পুরোপুরি বাতিল করেছিল, তখন সব দলই সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। এখন আপত্তি কেন?
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকেই গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠকে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। সংসদ না থাকায় ইসির প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যাবে। অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে এগুলো আইনের অংশ হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক প রস ত ব ক ষমত আসন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশি ফুটবলাররাও যখন ‘দেশি‘
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে যুক্ত হলো নতুন এক অধ্যায়। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সার্কভুক্ত দেশগুলোর ফুটবলাররা ‘দেশি’ খেলোয়াড় কোটায় খেলতে পারবেন। অর্থাৎ, তাঁরা বিদেশি হিসেবে গণ্য হবেন না। তাতে একদিকে ক্লাবগুলোর শক্তি বাড়বে, অন্যদিকে ফুটবলারদের মধ্যেও তৈরি হবে নতুন প্রতিযোগিতা। তবে শেষ পর্যন্ত কতজন দক্ষিণ এশীয় ফুটবলার নাম লেখাবেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে, তার হিসাব মিলবে আজ ফুটবলারদের নিবন্ধন শেষ হলে।
গতকাল পর্যন্ত এ মৌসুমের জন্য ছয়জন সার্কভুক্ত ফুটবলারের বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে খেলা নিশ্চিত হয়েছে। আজ শেষ দিনে নাটকীয় কিছু না হলে সংখ্যাটা ছয়ই থাকার সম্ভাবনা বেশি। ছয়জনই সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় দলের ফুটবলার, তাঁদের মধ্যে দুজন গোলকিপার। বাংলাদেশ পুলিশ এফসিতে নেপালের দুজন ও ভুটানের একজন, ফর্টিস এফসিতে শ্রীলঙ্কা ও নেপালের দুজন এবং রহমতগঞ্জ নেপালের একজনকে চূড়ান্ত করেছে।
ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস কলকাতার এক গোলকিপারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে আনার সম্ভাবনা কম। নবাগত পিডব্লিউডি নেপালের এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তবে ওই খেলোয়াড় তাঁর সংস্থা থেকে ছাড়পত্র পাননি। আরামবাগ চেষ্টা করছে ভারতে থেকে এক খেলোয়াড়কে আনতে, যদিও তাঁকে পাওয়া অনিশ্চিত।
শ্রীলঙ্কার গোলকিপার সুজান পেরেরা