জুলাই আন্দোলনের হামলা মামলার আসামি পেলেন ‘সাহসী সাংবাদিক’ সম্মাননা
Published: 14th, August 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ‘সাহসী সাংবাদিক’ সম্মাননা পেয়েছেন ফরিদপুরে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার ওপর হামলা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শেখ ফয়েজ আহমেদ। গত ৩ আগস্ট তাকে এই সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। তাকে সম্মাননা দেওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে।
শেখ ফয়েজ আহমেদ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি। তিনি সমবায় ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত। তিনি নিজেকে সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদ ও চ্যানেল এসের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন।
ফরিদপুরে জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর শেখ মুজাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় শেখ ফয়েজ আহমেদ ৯৭ নম্বর আসামি। এটিই ফরিদপুরে আন্দোলন সংক্রান্ত একমাত্র মামলা।
আরো পড়ুন:
গোবিপ্রবিতে সাংবাদিকতা বিষয়ে সেমিনার
গাজীপুরে সারজিসের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা
গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে তিনি সম্মাননা পান। সম্প্রতি বিষয়টি তিনি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে জানান। সেখানে তিনি জানান, ২০২৪ সালে সাংবাদিকতায় সাহসী ভূমিকার জন্য তাঁকে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও চেক দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার (১৩ আগস্ট) আবরার নাদিম, কাজী রিয়াজ, সোহেল রানা, মাহমুদুল হাসানসহ জুলাই আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদল জেলার জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত সম্মাননা জানানোর ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তারা সম্মাননা প্রত্যাহার করে প্রকৃত সাহসী সাংবাদিকদের মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন।
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়াল বলেন, “এই ঘটনা জুলাই আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা পালনকারী সাংবাদিকদের প্রতি অবমাননা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
রাইজিংবিডি ডটকমের কাছে শেখ ফয়েজ নিজের পক্ষে জানান, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের পরই তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
জেলার জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো.
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “ফরিদপুর থেকে শেখ ফয়েজই একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় কিছু ঘাটতি থাকায় এমনটি হয়েছে।”
ঢাকা/তামিম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।