এক হচ্ছে রাশিয়া–চীন–ভারত, কী প্রভাব পড়বে ভূ–অর্থনীতি ও রাজনীতিতে
Published: 14th, August 2025 GMT
সমরাস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করার চেয়ে বাণিজ্য দিয়ে যুদ্ধ করাই শ্রেয় মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ বাণিজ্যকে রীতিমতো যুদ্ধাস্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। কোনো দেশের উত্থান ঠেকাতে যেভাবে বাণিজ্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া মুক্তবাণিজ্যব্যবস্থারই পরিপন্থী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্য (ভ্রমাত্মক) ধরে রাখতে নিজেদের উদ্ভাবিত মুক্তবাণিজ্যব্যবস্থাই জলাঞ্জলি দিতে বসেছে।
শুল্ক ও বাণিজ্যনীতি এখন কেবল অর্থনৈতিক স্বার্থে নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন তা ভূরাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যযুদ্ধ, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভারতের ওপর শুল্কসংক্রান্ত চাপ—সব মিলিয়ে ওয়াশিংটন কার্যত বাণিজ্যকে কূটনৈতিক অস্ত্রে রূপ দিচ্ছে।
এই কৌশল বরং উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। চীনের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক ইউক্রেন যুদ্ধের পর অভূতপূর্ব উচ্চতায় উঠেছে। বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির এটা বড় ব্যর্থতা। রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে তেল ও গ্যাস বিক্রিতে বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে। চীনও রাশিয়াকে সস্তা জ্বালানি, কাঁচামালের উৎস ও কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করছে; যদিও সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও একসময় রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক ছিল খারাপ। উল্টো ১৯৭০-এর দশকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোপনে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
ভারতের অবস্থান খানিকটা ভিন্ন। নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ালেও রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করছে এবং চীনের সঙ্গে ব্রিকসে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। সর্বশেষ ভারতের ওপর ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় তিন দেশের (রাশিয়া-ভারত-চীন) মধ্যে একধরনের কৌশলগত সমঝোতা তৈরি হচ্ছে। এ ঘটনা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-চাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা যেতে পারে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া-চীনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে; বেড়েছে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সহযোগিতা। এখন ভারত ও চীনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। তার বাস্তবায়ন অনেকটা দেখা যাবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর যেমন এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা শুরু হয়েছিল, এর মধ্য দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিযোগিতা ছিল মূলত সামরিক ও পারমাণবিক সক্ষমতার দৌড়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ২০২০-এর দশকে অর্থনীতি ও প্রযুক্তি—এ দুই ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র। ট্রাম্প এই নতুন বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়ে শুল্ক, নিষেধাজ্ঞা ও বাজারে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে চাপের মধ্যে রাখছেন।
কিন্তু রাশিয়া-চীন-ভারতত্রয়ী এখন বুঝতে পেরেছে, তাদের কারও পক্ষে একা কেউ এই চাপ সামাল দিতে পারবে না। ফলে তারা যৌথ প্রকল্প, মুদ্রা বিনিময় চুক্তি, অবকাঠামো বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি সহযোগিতায় মনোযোগ দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়া আরও আগেই শুরু হয়েছে। এখন ট্রাম্প শুল্কচাপের নীতি বজায় রাখলে এ প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির ‘বন্ধুত্ব’ সত্ত্বেও ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের শুল্ক শাস্তি, মোদির ভারতের সামনে সহজ কোনো পথ নাই
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের ভাবমূর্তি যেভাবে বাজারে প্রচার করতে পারেন, সেটা খুব কম নেতাই পারেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি নিজেকে শক্তিশালী ও আরও আত্মপ্রত্যয়ী ভারতের নির্মাতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন। নরেন্দ্র মোদি ভারতের জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নিজের কৃতিত্ব দাবি করে এসেছেন। আর যখন পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, তখন তিনি পূর্বসূরিদের দোষারোপ করেছেন। এক প্রজন্মের ভোটাররা বিশ্বাস করেছেন, বিশ্বমঞ্চে ভারতের মর্যাদা যে বেড়েছে, তার পেছনে রয়েছেন মোদি।
কিন্তু এরপরই দৃশ্যপটে ডোনাল্ড ট্রাম্প চলে এসেছেন। তিনি প্রচলিত নিয়মকানুন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজে অত্যন্ত সিদ্ধ। গত বুধবার তিনি বিশ্বের চতুর্থ অর্থনীতি ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্যের ওপর অবিশ্বাস্যভাবে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এটা কার্যকর হলে ভারতকে যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ শুল্ক দিতে হবে।
দুই ব্যক্তির মধ্যে আগের যে মধুর সম্পর্ক, সেই বিবেচনায় এই ঘোষণাকে চমকজাগানিয়া বলেই মনে হয়। মোদি ও ট্রাম্প দুজনেই আদর্শগত মিলের দিক থেকে জনতুষ্টিবাদী নেতা। এর আগে তাঁরা একে অপরের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং এ বছরের জানুয়ারি মাসে ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পর, বিশ্বনেতাদের মধ্যে মোদিই ছিলেন প্রথম দিককার একজন, যিনি হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসেই ট্রাম্পকে তিনি ‘মহৎ বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার থেকে দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু ঝামেলা টগবগ করে ফুটতে শুরু করল জুলাইয়ের শেষ দিকে। সে সময়ে ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন, গত বুধবার সেটা দ্বিগুণ করেন। রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত যে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল কিনছে, সেটাকেই লক্ষ্যবস্তু করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইউক্রেনের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির জন্য নির্ধারিত সময়সীমা রাশিয়ার নাকের ডগায় ঝুলছে।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারত তার পররাষ্ট্রনীতিতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে আসছে। কিন্তু এর জন্য যে মূল্য দিতে হয়, সেটা গত সপ্তাহেই দেখা গেল। এই শুল্ক ভারতের কাছে বার্তা দিচ্ছে যে যদিও দেশটির প্রভাব ও অর্থনীতির আকার বেড়েছে, কিন্তু কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যেখানে দেশটি ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।নতুন শুল্ক ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। বাড়তি এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বা ব্যবসা সুরক্ষিত করবে, বিষয়টা এমনটা নয়। কিন্তু বাড়তি এই শুল্ক সেই দেশকে শাস্তি দেওয়া হবে, যে দেশটি এখন নিজেদের মোট আমদানির ৩৬ শতাংশ জ্বালানি তেলে রাশিয়া থেকে আমদানি করে। অথচ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আগে সেটি ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। সস্তায় কেনা এই তেলের বেশির ভাগটা দেশের ভেতরকার চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হয়। ভারতকে তার প্রয়োজনীয় তেলের ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়। আর দ্রুত অন্য কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া সহজ বা সস্তাও হবে না।
হতে পারে এ কারণেই ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আরোপ করা শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং এটিকে ‘অন্যায়, অবিচার ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু এখানে এটাও মনে হতে পারে যে পশ্চিমা দেশগুলো ভণ্ডামি করছে। ভারত খুব দ্রুত উল্লেখ করেছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো রাশিয়ার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যবসা করে চলেছে এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনাকে এর আগে সমর্থন করেছিল তার কারণ হলো, এতে বিশ্বে জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা গিয়েছিল।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলো রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে কি না, তার জন্য এখন দিল্লি সরকারের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছে। একই সময়ে আবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মস্কোতে রয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, পুতিন এই বছরের শেষ দিকে ভারত সফর করবেন। মোদি সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের আসন্ন দিনগুলোতে রাশিয়া সফরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু মোদি সরকার যে প্রতিক্রিয়া জানাক না কেন, একটি ব্যাপার এখানে স্পষ্ট। ট্রাম্পের সঙ্গে যে ‘বন্ধুত্বের’ কথা মোদি ভেবেছিলেন, সেটি চূড়ান্ত বিচারে অকার্যকর ও হালকা সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক মোদির অতি উচ্ছ্বাস আর ট্রাম্পের নিষ্ঠুর স্বার্থপরতা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। সেই ব্রোম্যান্সের (ভাইয়ে ভাইয়ে মধুর সম্পর্ক) দিন শেষ। বৈশ্বিক স্বার্থের শীতল অঙ্কের কাছে ব্যক্তিগত রসায়ন কখনোই ছাপিয়ে যেতে পারে না।
রাশিয়ার তেলের বিষয়টিকে এক পাশে সরিয়ে রাখলেও বাণিজ্য, শুল্ক ও ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। ট্রাম্প চান, আমেরিকায় উৎপাদনশিল্প ফিরিয়ে আনতে। আর মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি আংশিকভাবে আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে চীন থেকে ভারতে স্থানান্তর করার আহ্বান। মোদির এই পথ ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যহীন।
পাকিস্তানের প্রতি ট্রাম্পের আকস্মিক ও কৌশলগত ঝোঁক ভারত গভীরভাবে অসন্তুষ্ট। জুনে ট্রাম্প পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান এবং সম্প্রতি তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে তেল অনুসন্ধানের একটি চুক্তির ঘোষণাও দিয়েছেন। এ ছাড়া মে মাসে চার দিনের সংঘর্ষের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়, তার কৃতিত্ব দাবি করেন ট্রাম্প। এটিও ভারতের জন্য অনেকটা বিরক্তির জন্ম দেয়।
এসব ঘটনার কোনোটিই এমন একটি দেশের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে না, যে দেশটি পাকিস্তানের সঙ্গে তিক্ত লড়াই করে চলেছে এবং যে দেশটির কর্মকর্তারা দুই দশক ধরে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে উন্নত করার জন্য পরিশ্রম করে চলেছেন। ট্রাম্পের পদক্ষেপ সেই সম্পর্কের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্পের কথাবার্তা ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীকেও আহত করেছে। ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন এবং মোদিকে অভিযুক্ত করেছেন যে তিনি ‘বিশৃঙ্খলা থেকে মুনাফা’ করছেন। ‘বন্ধুত্বের প্রতীককে’ জনলজ্জা ও জবরদস্তির হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। ভারতীয় কূটনীতিবিদেরা সাধারণত নীরবে এবং দৃশ্যপটের আড়ালের কূটনীতির সঙ্গে অভ্যস্ত।
কয়েক দিন চুপ থাকার পর বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদি এ নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ভারতীয় কৃষকদের স্বার্থে কোনো আপস করা হবে না। কিন্তু তার সামনে ভারসাম্য বজায় রেখে চলার কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ। যদি তিনি কোনো বিষয়ে আপস করেন, তাহলে দেশে তাঁর ভাবমূর্তি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। কিন্তু যদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, তাহলে উত্তেজনা আরও তীব্র হবে। তাতে উতোর–চাপানে থাকা ভারতের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে। কেননা, যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভারতের অর্থনীতি আরও নিবিড়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারতের ৮৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। ২৭ আগস্ট থেকে যে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে তা যদি কার্যকর হয়, তাহলে এর অনেকটাই প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। দেশের ভেতরে মোদির রাজনীতিও ঝুঁকিতে পড়বে। বিরোধী দলগুলো এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে এবং শুল্ককে ‘অর্থনৈতিক ব্ল্যাকমেল’ ও ‘ভারতকে অন্যায় বাণিজ্যচুক্তিতে’ বাধ্য করার প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করে নিজেদের চাপ আরও বাড়িয়েছে।
ভারতের জন্য শিক্ষা হলো, উষ্ণ আলিঙ্গন নয়, কঠোর স্বার্থ দিয়েই নীতি পরিচালিত হতে হবে। ট্রাম্পের কাছে কোনো সম্পর্কই পবিত্র নয়, চুক্তির শিল্পটাই তার কাছে সবকিছু। মোদি হয়তো ভেবেছিলেন, তিনি ট্রাম্পকে মুগ্ধ করতে পারবেন; ট্রাম্প প্রশংসা পছন্দ করলেও শেষ পর্যন্ত সেটাই যথেষ্ট নয়।
দীর্ঘদিন ধরেই ভারত তার পররাষ্ট্রনীতিতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে আসছে। কিন্তু এর জন্য যে মূল্য দিতে হয়, সেটা গত সপ্তাহেই দেখা গেল। এই শুল্ক ভারতের কাছে বার্তা দিচ্ছে যে যদিও দেশটির প্রভাব ও অর্থনীতির আকার বেড়েছে, কিন্তু কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি, যেখানে দেশটি ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সলিল ত্রিপাঠী, নিউইয়র্কে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক
দ্য টাইম ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে