দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য পরিবেশবান্ধব ও টেকসই অর্থায়ন অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের ঋণের দিকে মনোযোগী হচ্ছে। তবে আরও আগে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। যদি তা হতো, তাহলে পরিবেশদূষণের মাত্রা অনেক কমে যেত। পরিবেশদূষণ এখন অনেক পরিবারের স্বাস্থ্য খরচ বৃদ্ধি ও অন্যান্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যে উন্নয়ন হচ্ছে সেটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। যদি আমরা পরিবেশকে বিপন্ন করে উন্নয়ন করি, তবে সেই উন্নয়ন কখনো দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তাই ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই খাতের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করা এখন অপরিহার্য। টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ঋণ নিশ্চিত করতে পারলে বিদেশ থেকে কম সুদে অর্থ পাওয়া সহজ হবে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এই উদ্যোগ সাহায্য করবে। ফলে দেশের পরিবেশ ঠিক রাখা সম্ভব হবে।

বর্তমানে জ্বালানিসাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি এবং পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ, বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন ও জ্বালানিসাশ্রয়ী পরিবহন, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব ইটভাটা, সমুদ্র অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ প্রযুক্তিসহায়ক বিনিয়োগও টেকসই ঋণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে সহজে সেবা পৌঁছানো সম্ভব হবে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি নিজেরা শতভাগ পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন ও উদ্যোগের চর্চা করে, তাহলে সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। একসময় এ ধরনের অর্থায়ন ও উদ্যোগকে লোকদেখানো মনে করা হলেও এখন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ব্যাংকগুলোর শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট এখন প্রান্তিক পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। তাই টেকসই অর্থায়নের সুযোগ এখন সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আরও বেশি টেকসই উদ্যোগ নিলে তা সমাজের অন্য প্রতিষ্ঠানও অনুসরণ করবে। এ জন্য টেকসই অর্থায়ন ও উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশের সুরক্ষা একসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।

মোস্তফা কে মুজেরী
সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ও পর ব শ ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি

পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।

মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।

এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।

মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।

পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।

ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ