সরকারের নির্দেশনা না মানলে ফেসবুককে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা যাবে
Published: 14th, August 2025 GMT
ধরা যাক, সরকারের দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তি জাতীয় ঐক্য-সংহতির পরিপন্থী, দেশদ্রোহমূলক আধেয় (কনটেন্ট) ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। এই অপরাধে তিনি জামিন–অযোগ্য ধারায় শাস্তি পাবেন। এই অপরাধের দায় শুধু ব্যক্তির একার হবে না। তিনি ফেসবুকের মতো যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করবেন, সেই প্ল্যাটফর্মকে এই আধেয় সরাতে নির্দেশনা দেবে সরকার। তাৎক্ষণিকভাবে তা না সরালে প্ল্যাটফর্মকে ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর প্রস্তাবে এমন বিধানের উল্লেখ আছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এই প্রস্তাব ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। যদিও এটি প্রস্তাব পর্যায়ে আছে, চূড়ান্ত হয়নি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর কঠোর নজরদারি হতো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারা ব্যবহার করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মানুষের বাক্স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করা হতো। তবে বিটিআরসির প্রস্তাবে কিছু ক্ষেত্রে একই ধরনের বিষয় রয়েছে।
গত ২৮ জুলাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিটিআরসিকে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রস্তাব প্রস্তুতের নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বিটিআরসি আইনে কিছু সংশোধনী এনে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।বাক্স্বাধীনতা ও প্রযুক্তি অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন, আইনে এ ধরনের বিধান রাখা হলে আগের মতোই অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে।
গত ২৮ জুলাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিটিআরসিকে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রস্তাব প্রস্তুতের নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার বিটিআরসি আইনে কিছু সংশোধনী এনে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
প্রস্তাবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১-এর সংশোধনী (২০১০) রহিত করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিটিআরসির ওপর মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের সুযোগ প্রস্তাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) লোগো.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ব ব ট আরস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তার জন্য মুক্তি’
জীবনে সংকট আসে অপ্রত্যাশিতভাবে। কখনো পরিবারে, কখনো সম্পদে, কখনো সম্পর্কে। কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে, তাদের জন্য রয়েছে অদৃশ্য দরজা, মুক্তির পথ। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘অমাই-য়াত্তিকিল্লাহা ইয়াজআল্লাহু মাখরাজা’..‘যে আল্লাহর ভয় অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করেনি।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ২-৩)
এই আয়াতের একটি অংশ, ‘যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ করে দেন’ যদিও নাজিল হয়েছে সুরা তালাকের (বিবাহ বিচ্ছেদ) অংশ হিসেবে এবং একটি বিশেষ ঘটনায়। কিন্তু এটি শুধু বিবাহ বিচ্ছেদের মতো কোনো বিধানের সঙ্গে বিশেষায়িত নয়।
হে নবী, যখন তোমরা নারীদের তালাক দাও, তাদের ইদ্দত (বিচ্ছেদের পরে নির্দিষ্ট সময়ের অবকাশ) অনুসারে তালাক দাও।কোরআন, সুরা তালাকআয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনাটি হলো, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তার স্ত্রীকে ঋতুমতী অবস্থায় তালাক দিয়েছিলেন। ওমর (রা.) নবীজির কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘তাকে ফিরিয়ে নাও। তারপর পবিত্র হলে তালাক দাও বা রেখে দাও।’
এবং তিনি আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ‘হে নবী, যখন তোমরা নারীদের তালাক দাও, তাদের ইদ্দত (বিচ্ছেদের পরে নির্দিষ্ট সময়ের অবকাশ) অনুসারে তালাক দাও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৪৭১)
আরও পড়ুনমুসলিম জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ৯ উপায়১৫ অক্টোবর ২০২৫ইমাম ওয়াহিদি (রহ.) বলেন, এটি ইবনে ওমরের তালাকের ঘটনায় নাজিল হয়। (ওয়াহিদি, আসবাবুন নুযুল, পৃষ্ঠা ৩৪৫, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৯)।
তবে আয়াত সংক্রান্ত আরেকটি ঘটনায় আছে, সাহাবি আওফ ইবনে মালিক একবার আল্লাহর রাসুলের কাছে এসে বললেন, ‘অমুক গোত্র আমার ওপর হামলা করেছে। তারা আমার ছেলে ও উটের পাল নিয়ে গেছে।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’
আওফ বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে বিষয়টি জানালেন। কিছুক্ষণ পরই অলৌকিকভাবে তার ছেলে ও উটের পাল আগের চেয়ে আরও বেশি সংখ্যায় ফিরে এল। তিনি আবার নবীজির কাছে গেলেন। নবীজি মিম্বরে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন। (তাবারি, জামি‘উল বায়ান ফি তা’ওয়িলিল কোরআন, ২৮/১২৫, দারু ইহইয়া আত-তুরাস আল-আরাবি, বৈরুত, ২০০১)
কোরআনের অলৌকিকতার একটি নিদর্শন হল, একই আয়াত দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করে, তালাকের নিয়ম পালন এবং সাধারণ জীবনের সংকট থেকে মুক্তি।ইমাম তাহির ইবনে আশুর (রহ.)এতে বোঝা যায়, আয়াতের অংশটি সুরা তালাকের বিধানের সঙ্গে সংযুক্ত হলেও আওফের ঘটনার কারণে এটি সাধারণ সংকটের সমাধানেও প্রযোজ্য। ইমাম ইবনে আশুর (রহ.) বলেন, এটি কোরআনের অলৌকিকতার একটি নিদর্শন। একই আয়াত দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করে, তালাকের নিয়ম পালন এবং সাধারণ জীবনের সংকট থেকে মুক্তি। (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ২৮/২৯৩, দারু সাহনুন, তিউনিস, ১৯৯৭)
এখন আয়াতের অর্থ বোঝা যাক। তাকওয়ার সাধারণ অর্থ খোদাভীতি। তবে মূল অর্থ হল আল্লাহর আদেশ পালন করা এবং নিষেধ থেকে দূরে থাকা। আয়াতে ‘মাখরাজ’ নামে একটি শব্দ আছে, যার মানে সংকট থেকে বের হওয়ার পথ।
আরও পড়ুন‘পাহাড় যখন মেঘের মতো চলতে থাকবে’০৪ অক্টোবর ২০২৫তাফসিরকারকগণ বলেন, তালাকের ক্ষেত্রে যে সঠিক নিয়মে তালাক দেয়, মানে ইদ্দতের সময় অপেক্ষা করে, স্ত্রীকে কষ্ট দেয় না, বাড়ি থেকে বের করে দেয় না—তাহলে পরে অনুতাপ হলে আল্লাহ তার জন্য পথ করে দেন। যেমন, ইদ্দত শেষে আবার বিয়ে করার সুযোগ থাকতে পারে। কিন্তু যে তিন তালাক দেয়, তার জন্য পথ একেবারে বন্ধ। (তাবারি, জামি‘উল বায়ান, ২৮/ ১২৭, দারু ইহইয়া আত-তুরাস, বৈরুত, ২০০১)
ইমাম জামাখশারি (রহ.) বলেন, এটি একটি সতর্কবাণী। যে ব্যক্তি মনে খোদার ভয় রেখে তালাক দেয়, আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করেন। যেমন, এক ব্যক্তি তিন তালাক দিয়ে অনুতাপ করল। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, ‘তুমি খোদাকে ভয় করো নি, তাই তোমার জন্য মুক্তির পথ নেই। স্ত্রী চলে গেছে, গুনাহ এবার তোমার ঘাড়ে।’ (আল-কাশশাফ, ৪/ ৫৫৫, দারুল মা‘রিফা, বৈরুত, ১৯৯৮)
আয়াতের অর্থ আরও বিস্তৃত হয় যে তাকওয়া বা খোদাভীতি সব সংকটের চাবিকাঠি। সম্পদ হারালে, সন্তান হারালে, দুশ্চিন্তায় পড়লে—আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলে অপ্রত্যাশিত পথ খুলে যায়।ইমাম ইবনে আতিয়্যাহ (রহ.) বলেন, এটি তালাকের সীমা লঙ্ঘন না করার শিক্ষা। যে সুন্নাহ মোতাবেক তালাক দেয়, পরে চাইলে ফিরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যে অতিরঞ্জিত করে, তাহলে অনুতাপ করলেও পথ বন্ধ। (আল-মুহাররার আল-ওয়াজিয, ৫/ ৩২৪, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০১)
আওফের ঘটনা থেকে আয়াতের অর্থ আরও বিস্তৃত হয় যে তাকওয়া বা খোদাভীতি সব সংকটের চাবিকাঠি। সম্পদ হারালে, সন্তান হারালে, দুশ্চিন্তায় পড়লে—আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলে অপ্রত্যাশিত পথ খুলে যায়। ইমাম ইবনে আশুর বলেন, এটি কোরআনের রীতি, সতর্কতার পর সুসংবাদ দেওয়া। তাকওয়া দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ এনে দেয়। (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ২৮/ ২৯৫, দারু সাহনুন, তিউনিস, ১৯৯৭)
ইমাম আবদুর রহমান আস-সা‘দি (রহ.) বলেন, তাকওয়া উচ্চ লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম উপায়। আল্লাহ এই আয়াতে তাকওয়াকে রিযিকের কারণ বলেছেন। (তাইসিরুল কারিমির রাহমান, পৃষ্ঠা ৮৪৫, মুয়াসসাসা আর-রিসালাহ, বৈরুত, ২০০০)
আরও পড়ুন‘সুসংবাদ দাও, ভয় দেখিয়ো না’০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫