বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক গত ৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। নাম দিয়েছেন ‘আমেরিকা পার্টি’। তবে এখনো দলটির কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল আলোচিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস করার পর ক্ষুব্ধ হয়ে অনলাইনে একটি জরিপ চালিয়েছিলেন তাঁরই সাবেক ঘনিষ্ঠ মিত্র মাস্ক। জরিপের ফল দেখে রাজনৈতিক দল গঠনে উৎসাহিত হন তিনি।

মাস্ক তখন বলেছিলেন, তাঁর এ দল হবে মধ্যপন্থী মানুষের জন্য এবং মূলধারার রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির বাইরে ভিন্ন এক রাজনৈতিক বিকল্প।

তবে মাস্কের ঘোষণার এক মাসের বেশি পার হলেও তিনি দল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেননি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দলের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্যও করতে দেখা যায়নি তাঁকে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের জন্য কীভাবে হুমকি হয়ে উঠতে পারে ইলন মাস্কের দল০৮ জুলাই ২০২৫

তবে মাস্কের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মার্কিন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী মার্ক কিউবান। আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান সতর্ক করে বলেন, মাস্কের এ প্রচেষ্টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।

এদিকে বেশ কিছু জনমত জরিপে দেখা গেছে, অনেক মার্কিন তৃতীয় একটি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন অনুভব করলেও মাস্কের দলের প্রতি তাঁদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। চলতি সপ্তাহে সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) এবং এক্সএআইয়ে মাস্কের এক শীর্ষ সহকর্মী ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি নিজস্ব পডকাস্ট শুরু করতে যাচ্ছেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মাস্কের দল গঠনের পরিকল্পনায় তাঁর কিছু সহকর্মীর আগ্রহ কমে এসেছে।

বর্তমানে ‘আমেরিকা পার্টি’ একটি ‘ধারণা’র পর্যায়ে রয়েছে। মাস্ক যদি সত্যিই তাঁর দলকে শক্তিশালী করতে চান, তবে তাঁকে এখনই আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিতে হবে, প্রার্থীদের সমর্থন ও জনমত অর্জনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

এদিকে মাস্ক তৃতীয় একটি দল গঠনের কথা ভাবলেও, এখনো রিপাবলিকান দলের একজন বড় দাতা হিসেবে রয়ে গেছেন তিনি। গত মাসের শেষে প্রকাশিত নির্বাচনী তহবিল রেকর্ড অনুযায়ী, তিনি মোট দেড় কোটি ডলার বিভিন্ন রিপাবলিকান সুপার প্যাকে দান করেছেন। এর মধ্যে ট্রাম্প–সমর্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোও রয়েছে। নতুন দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া ও ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদ শুরু হওয়ার আগে মাস্ক এসব অর্থ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক ০৬ জুলাই ২০২৫

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা সহজ কাজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক নথি জমা দেওয়া, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা, আগামী বছর কংগ্রেস নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এমন প্রার্থী নিয়োগ ও জনমত গঠন। এসব কাজ সম্পন্ন করা ছাড়া কোনো দল কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

বেশ কিছু জনমত জরিপে দেখা গেছে, অনেক মার্কিন তৃতীয় একটি রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন অনুভব করলেও মাস্কের দলের প্রতি তাঁদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। চলতি সপ্তাহে সরকারি দক্ষতা বিভাগ এবং এক্সএআইয়ে মাস্কের এক শীর্ষ সহকর্মী ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি নিজস্ব পডকাস্ট শুরু করতে যাচ্ছেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মাস্কের দল গঠনের পরিকল্পনায় তাঁর কিছু সহকর্মীর আগ্রহ কমে এসেছে।

বর্তমানে ‘আমেরিকা পার্টি’ একটি ‘ধারণা’র পর্যায়ে রয়েছে। মাস্ক যদি সত্যিই তাঁর দলকে শক্তিশালী করতে চান, তবে তাঁকে এখনই আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিতে হবে, প্রার্থীদের সমর্থন ও জনমত অর্জনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্কের আগ্রহ, সম্পদ ও নেতৃত্বের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে নতুন এ দলের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রভাব।

আরও পড়ুনমাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে কী বললেন ট্রাম্প০৭ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনইলন মাস্ক কেন নতুন দল গঠন করছেন, কী করতে চান তিনি০৬ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম স ক র দল দল গঠন র সহকর ম আম র ক দল র প র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে: টাইমস/সিয়েনা জরিপ

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রায় দুই বছর পর ইহুদি রাষ্ট্রটির প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে আমূল পরিবর্তন এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা ইউনিভার্সিটির নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক ভোটার এই সংঘাত মোকাবিলায় ইসরায়েলি সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র নেতিবাচক মতামত প্রকাশ করেছেন।

গাজায় হামলার প্রতি এই অসন্তোষের কারণেই সম্ভবত মার্কিন ভোটাররা এই অঞ্চলের কয়েক দশকের পুরোনো সংঘাতের বিষয়ে তাঁদের সহানুভূতি পুনর্মূল্যায়ন করছেন। টাইমস ১৯৯৮ সাল থেকে ভোটারদের সহানুভূতি নিয়ে প্রশ্ন শুরু করার পর এই প্রথম ইসরায়েলিদের চেয়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কিছুটা বেশি ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর মার্কিন ভোটারদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনিদের চেয়ে ইসরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সে সময় ৪৭ শতাংশ ইসরায়েলকে এবং ২০ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।

নতুন জরিপে ৩৪ শতাংশ ইসরায়েলিদের পক্ষে এবং ৩৫ শতাংশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা সংশয়ে আছেন অথবা দুই পক্ষকেই সমানভাবে সমর্থন করেন।

অধিকাংশ মার্কিন ভোটার এখন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করছেন। ৭ অক্টোবরের হামলার পর জনমতে এটি একধরনের বড় পরিবর্তন। প্রতি ১০ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬ জন বলেছেন, বাকি ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পাক বা না পাক বা হামাস নির্মূল হোক বা না হোক, তবু ইসরায়েলের উচিত সামরিক অভিযান বন্ধ করা।

৪০ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা চালাচ্ছে। এই সংখ্যা ২০২৩ সালের জরিপের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

সব মিলিয়ে টাইমস/সিয়েনা জরিপের এই ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ মিত্রের প্রতি মার্কিনদের সমর্থনে বড় ধরনের অবনতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

কয়েক দশক ধরে দুই দলই সমানভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসছিল। এই অতি বিভক্ত যুগে জনমতে এত বড় পরিবর্তন অস্বাভাবিক ঘটনা বটে। সাধারণত যুদ্ধ বা বিপর্যয়ের মতো বড় ঘটনা ছাড়া জনমত ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।

আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ব্ল্যাকফুট শহরের ডেমোক্র্যাট সমর্থক অস্টিন মাগলস্টন বলেন, সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি দুর্বল হয়ে পড়েছে।

যোগাযোগ খাতে কাজ করা ৩৩ বছর বয়সী মাগলস্টন বলেন, ‘আমি আসলে কয়েক বছর ধরে বেশ ইসরায়েলপন্থী ছিলাম, বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের সেই বিধ্বংসী হামলার রাতের কথা শোনার পর। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাউকে যাওয়া উচিত নয়। কিন্তু এটি যত দীর্ঘ হচ্ছে এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা করছে, তা দেখে এটিকে আর কোনোভাবেই সমান ক্ষেত্র বলে মনে হচ্ছে না।’

এই জরিপ ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের জন্যও চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্যের বৃহত্তম প্রাপক, যারা এ পর্যন্ত শত শত বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে।

দল-মতনির্বিশেষে তরুণ ভোটাররা ইসরায়েলের প্রতি এই সমর্থন অব্যাহত রাখার পক্ষে কম আগ্রহী। ৩০ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭ জন অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বা সামরিক সাহায্যের বিরোধিতা করেছেন।

ইসরায়েলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ভোটারদের সমর্থন ব্যাপক হারে কমে যাওয়া। রিপাবলিকানরা মূলত ইসরায়েলকে সমর্থন করে চলেছে। তবে তাঁদের মধ্যেও ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সামান্য কমেছে।

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা আর খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় গাজায় দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মধ্য গাজা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন নিয়ে জনমত জরিপ: পুরো সত্যি নয়, কিন্তু সত্যির খুব কাছাকাছি
  • ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনদের সমর্থন নাটকীয়ভাবে কমছে: টাইমস/সিয়েনা জরিপ