উপকূলীয় এলাকায় ২৮,৮০০টি গাছ লাগিয়েছে পূবালী ব্যাংক
Published: 14th, August 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর দেশের শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব বা সাসটেইনেবল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে আসছে। পূবালী ব্যাংক প্রথম ২০২১ সালে এই তালিকায় স্থান পায়। দুই বছর পর ২০২৪ সালে আবারও ব্যাংকটি এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। নতুন করে আবারও পূবালী ব্যাংকের স্থান করে নেওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নেওয়া নানা ধরনের পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়ন।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদ—উভয় ক্ষেত্রেই সুশাসনের চর্চা রয়েছে। ব্যাংকের টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করতে একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ‘সাসটেইনেবল ফিন্যান্স কমিটি’ কাজ করে। এ ছাড়া প্রতিটি খাতের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে একাধিক উপকমিটি। এই কমিটিগুলো ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করে থাকে। কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেয়। সার্বিকভাবে কাজগুলো দেখভাল করে ব্যাংকের ‘সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ইউনিট’।
গত বছরের শুরু থেকে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পূবালী ব্যাংক টেকসই অর্থায়ন, করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়নে মনোযোগ বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সূচক; যেমন আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, খেলাপি ঋণ কমানো ও মূলধন পর্যাপ্ততা বজায় রাখতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাংকিং সেবার বিস্তারেও কাজ করছি আমরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ডেটাবেজ তৈরি করা। পূবালী ব্যাংক নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করে কোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ জন্য সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ডেটাবেজকে মূল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। গ্রাহক সংখ্যা ও দেশব্যাপী যোগাযোগের কারণে পূবালী ব্যাংক বর্তমানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম অনলাইন ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে পূবালী ব্যাংক। যেমন ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আগামী অ্যাপারেলসে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছেন। বর্তমানে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করা এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে অ্যাকর্ড স্ট্রাকচারাল সেফটি সনদ এবং মার্কিন গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের ‘লিড গোল্ড’ সনদ পেয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে টেকসই খাতে ঋণ দিয়েছে পূবালী ব্যাংক।
টেকসই খাতে আরও নানা উদ্যোগ রয়েছে পূবালী ব্যাংকের। ২০২৪ সালে সৌরবিদ্যুৎ সম্প্রসারণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয় ব্যাংকটি। তার অংশ হিসেবে পূবালী ব্যাংকের ৫৬৬টি এটিএম বুথের মধ্যে ৩০০টি এবং ৫০৮টি শাখার মধ্যে ৩২০টি শাখায় সোলার পাওয়ার সংযোগ স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সব শাখায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ‘থ্রি আর’ নীতি (রিডিউস, রিইউস, রিসাইকেল) বাস্তবায়ন, অনলাইনে ঋণ প্রস্তাব প্রেরণ, অনুমোদনসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমেও ব্যাংকটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। গত বছর উপকূলীয় এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৮ হাজার ৮০০টি গাছ লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি ৬৬ হাজার ১৬৮ জন উপকারভোগীর মধ্যে সিএসআর তহবিল থেকে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। গ্রিন রি-ফিন্যান্সের প্রতিটি প্রকল্পেই পূবালী ব্যাংকের গ্রাহক পোর্টফোলিও রয়েছে।
বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকেরা ব্যাংকে না গিয়েই অর্থ স্থানান্তর, আরটিজিএস, বিইএফটিএন, বিভিন্ন পরিষেবা বিল পরিশোধ, এফডিআর ও ডিপিএস ব্যবস্থাপনা, ঋণের আবেদনসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা নিতে পারছেন।
সর্বোপরি শীর্ষ সাসটেইনেবল ব্যাংকের তালিকায় পূবালী ব্যাংকের অবস্থানের পেছনে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দূরদর্শী নির্দেশনা, গ্রাহকের আস্থা, সুশাসন, কোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে ধারাবাহিক সাফল্য ও শক্তিশালী টেকসই অর্থায়ন কাঠামো প্রভৃতি বিষয় কাজ করেছে।
চৌধুরী আবদুল ওয়াহীদ
প্রধান, সিএমএসএমই বিভাগ ও সাসটেইনেবল ফিন্যান্স ইউনিট, পূবালী ব্যাংক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক জ কর গ র হক ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।