পাকিস্তান এখন যুক্তরাষ্ট্রের সুদৃষ্টিতে আছে, কিন্তু সেটা কত দিন
Published: 14th, August 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে পাকিস্তানের প্রতি আক্রমণ করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মিথ্যা আর প্রতারণা ছাড়া কিছুই দেয়নি’ এই দেশটি।
পরে অবশ্য ট্রাম্প পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে নরম মনোভাবের জন্য সেই দেশের নেতাদের অভিযুক্ত করতেই থাকেন।
এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী অংশীদারত্বকে ‘দারুণ’ বলে উল্লেখ করছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর প্রধান হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়েছেন।
আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, খনিজ ও তেল খাতে তাদের সঙ্গে বড় মুনাফার চুক্তি করবেন। যদিও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা নিশ্চিত নন, ট্রাম্প যে জ্বালানির ‘বড় মজুতের’ কথা বলছেন, তা আদৌ কোথায় আছে।
তবে একটা বিষয় পরিষ্কার, পাকিস্তান আবারও ওয়াশিংটনের প্রিয় তালিকায় উঠে এসেছে। বহু দশক ধরে দুই দেশের সম্পর্কের এই পারদ ওঠা-নামা করছে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।
ভারত একসময় ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা হয়েছে ১৯ শতাংশ।
ভারত একসময় ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা হয়েছে ১৯ শতাংশ।যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি বলেন, ‘হঠাৎ করেই দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে উষ্ণতা এসেছে, যা কেউই আশা করেনি।’
এই উষ্ণতার আংশিক কারণ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে পাকিস্তান দুটি দ্রুত সাফল্য দেখিয়েছিল।
গত মার্চে পাকিস্তান ইসলামিক স্টেটের এক শীর্ষ নেতাকে আটক করেছে। ওই নেতার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বোমা হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। ওই হামলায় ১৮০ জনের বেশি নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে ১৩ জন মার্কিন সেনা ছিলেন। ওই ব্যক্তিকে আটকের জন্য ট্রাম্প কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের নামোল্লেখ করেন।
গেল বসন্তে পাকিস্তান ঘোষণা দিয়েছিল, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবে। কারণ, তিনি ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে মধ্যস্থতা করেছেন। অবশ্য নয়াদিল্লি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি বারবার নাকচ করে বলেছে, তাদের যুদ্ধবিরতিতে ওয়াশিংটনের কোনো ভূমিকা ছিল না।
গেল বসন্তে পাকিস্তান ঘোষণা দিয়েছিল, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবে। কারণ, তিনি ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে মধ্যস্থতা করেছেন। অবশ্য নয়াদিল্লি ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি বার বার নাকচ করে বলেছে, তাদের যুদ্ধবিরতিতে ওয়াশিংটনের কোনো ভূমিকা ছিল না।যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাতের পর থেকে আরও প্রকাশ্য ভূমিকা নিয়ে সামনে এসেছেন তিনি। এই সপ্তাহে ফিল্ড মার্শাল মুনির মার্কিন জেনারেল মাইকেল কুরিলার অবসরে যাওয়ার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। কুরিলার মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।
দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এটি ছিল পাকিস্তানি ফিল্ড মার্শালের যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় উচ্চপর্যায়ের সফর। (অথচ পাকিস্তানের বেসামরিক নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এখনো ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।)
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নত করার ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে এমনটা দাবি করে আসছিলেন।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে পাকিস্তান উঠে আসে। কিন্তু দুই দেশের সম্পর্ক ছিল উত্থান-পতনে ভরা। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। আল–কায়েদার এই শীর্ষ নেতা দীর্ঘদিন পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লুকিয়ে ছিলেন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ আরও বৃদ্ধি পায় যে পাকিস্তান দ্বিমুখী খেলা খেলছে।
আবার পাকিস্তানের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষুব্ধ। কারণ, তারা মনে করে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করেছে। তারাই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের নিশানা বানিয়েছে, যার ফলে দেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তবে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে সম্পর্ক গড়ার সুযোগ এনে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র কি কারও নির্ভরযোগ্য মিত্র হতে পারে? ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে মোদি বিনিয়োগ করেছিলেন। আর এখন দেখুন মোদির কী অবস্থা। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কেন আলাদা হবে?—হুসেইন হাক্কানি, পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূতপাকিস্তানি কর্মকর্তারা দেশটিকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজের উৎস এবং বিটকয়েন খনির কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প-সমর্থিত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানের ক্রিপ্টো কাউন্সিলের সঙ্গে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতারা পাকিস্তান সফরকালে ওই চুক্তি করেন।
পাকিস্তান আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি বেশি পণ্য আমদানি করবে, যার মধ্যে তুলাও রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের খনির প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দেবে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নতুন সম্পর্ক দীর্ঘ মেয়াদে কতটা ফল দেবে, তা স্পষ্ট নয়। যেকোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুরুত্বপূর্ণ খনিজের চুক্তি বাস্তবায়ন করতে বছরের পর বছর লেগে যাবে।
ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ থ্রেলকেল্ড বলছিলেন, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা ছাড়া নিকট–ভবিষ্যতে পাকিস্তান আসলে যুক্তরাষ্ট্রকে কী দিতে পারবে, তা পরিষ্কার নয়।
ট্রাম্প পাকিস্তানের তেল মজুত উন্নয়নের ঘোষণা দিয়ে আরও নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন।
ইসলামাবাদভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর রিজিওনাল স্টাডিজের সভাপতি জওহর সেলিম বলেন, ট্রাম্প যদি এমন কিছু সম্পর্কে সচেতন না হন, যা সম্পর্কে আমরা জানি না—তাহলে তিনি আসলে কোন ধরনের মজুতের কথা বলছেন, তা একেবারেই পরিষ্কার নয়।
পাকিস্তানের চীন ঘনিষ্ঠতাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের পথে বাধা হতে পারে। চীন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। গত মাসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির চীন সফরে গেলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই দুই দেশকে ‘অটুট বন্ধুত্বের’ দেশ বলে অভিহিত করেন।
চীন–পাকিস্তানের অংশীদারত্ব এখন আরও ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতার দিকে এগোচ্ছে। পাকিস্তান এখন চীনের তৈরি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে। বলা হচ্ছে, গত মে মাসে চীনের তৈরি বিমান ও ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করে তারা অন্তত একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ওয়াশিংটনে উড়াল দেওয়ার কয়েক দিন আগে ফিল্ড মার্শাল মুনির চীন থেকে ১০টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার পেয়েছেন।
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি বলছিলেন, ‘পাকিস্তানে চীনের বিনিয়োগ বা আমাদের প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ পূরণের ক্ষমতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পাল্লা দিতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক কখনোই ধারাবাহিক ছিল না।’
আরও কিছু বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলছেন, দুই দেশের এই উষ্ণতা কত দিন টিকে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি বলেন, ‘ট্রাম্পের খাতায় ভালো থাকার সুবিধা আছে। আপনি তাঁর প্রশংসা করুন, তিনিও আপনার প্রশংসা করবেন।’
হাক্কানি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কি কারও নির্ভরযোগ্য মিত্র হতে পারে? ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে মোদি বিনিয়োগ করেছিলেন। আর এখন দেখুন মোদির কী অবস্থা। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কেন আলাদা হবে?’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র স কর মকর ত র ঘন ষ ঠ কর ত র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ
আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।
সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।
এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।
সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।
৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’
কারা আছে তালিকায়দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।
দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।
১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।
২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।
কীভাবে এই মূল্যায়ন৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।
ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।
এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।
জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;
কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;
কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;
সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;
কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।