পোশাক খাতের বড় চ্যালেঞ্জ বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংকট
Published: 14th, August 2025 GMT
তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের বড় চ্যালেঞ্জ বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংকট। সেই সঙ্গে অবকাঠামো, পশ্চাৎসংযোগ শিল্পের দুর্বলতা, নীতি সমন্বয়ে ঘাটতি, উৎপাদনশীলতায় দুর্বলতা ও উচ্চ উৎপাদন ব্যয় এই খাতের সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে এই খাতে পণ্য বৈচিত্র্য, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও নতুন বাজার সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স (অ্যামচেম) আয়োজিত ‘তৈরি পোশাক খাতের অগ্রযাত্রার পথ’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা তুলে ধরেন। সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো.
মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংকট তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে গ্যাসনির্ভর শিল্পে। দেশে বর্তমানে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল চালু রয়েছে। এই অবকাঠামো উন্নয়নে আমাদের আরও গুরুত্ব দিতে হবে। উৎপাদন কমায় মধ্যম ও ছোট অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিজিএমইএর প্রায় ৭ হাজার ১০০ সদস্যের মধ্যে বর্তমানে ৩ হাজারেরও কম সদস্য রপ্তানিতে সক্রিয় রয়েছেন।’
সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা রপ্তানি আয়ের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক খাত মোট রপ্তানির ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রেক্ষাপট পরিবর্তন আমাদের অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’ এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, পোশাক খাতে নিম্নমূল্য থেকে উচ্চমূল্যের পণ্যের দিকে যেতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণ ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এই খাতের উৎপাদনশীলতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের ফলে নতুন রপ্তানি সুযোগ তৈরি হয়েছে। রপ্তানির সহায়তায় আরএমজি এক্সপোর্ট সেল গঠন করা হচ্ছে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক গাজী এ কে এম ফজলুল হক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব মো. নাজিউর রহমান মিয়াও বক্তব্য দেন। উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর পল ফ্রস্ট, লেবার অ্যাটাশে লিনা খান, অ্যামচেমের ট্রেজারার আল-মামুন এম রাসেলসহ অ্যামচেমের সদস্য, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইন সংস্কারে তাগিদ ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের
বাংলাদেশের শ্রম আইন সংস্কারে তাগিদ দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে বৈঠকে দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল বলেছে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) সবার চাওয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের শ্রম আইন সংস্কার করা হবে।
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে আজ বুধবার সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রম আইন সংস্কারে এই তাগিদ দেয় মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদল। শ্রম অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে দেশের আইনি সংস্কারের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিনিধিদলকে অবহিত করেন বিজিএমইএর সভাপতি। মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদলে ছিলেন লেবার অ্যাটাশে লীনা খান, ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অ্যাটাশে পল জি ফ্রস্ট ও ফরেন অ্যাগ্রিকালচারাল সার্ভিস অ্যাটাশে এরিন কোভার্ট।
বৈঠকে বিজিএমইএর সভাপতি ছাড়াও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান, সহসভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম, মিজানুর রহমান, ভিদিয়া অমৃত খান, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, পরিচালক ফয়সাল সামাদ, শেখ হোসেন মোহাম্মদ মোস্তাফিজ উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
মাহমুদ হাসান খান বলেন, তৈরি পোশাক খাতের শ্রম পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা বিজিএমইএর অন্যতম অগ্রাধিকার। তাঁর নেতৃত্বে পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ৮১টি শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন পাল্টা শুল্কের নির্বাহী আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা তৈরি পোশাকে যদি কমপক্ষে ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তবে সেই পণ্যের ওপর নতুন আরোপ শুল্ক থেকে আনুপাতিকভাবে অব্যাহতি পাওয়া যাবে। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএ নেতারা মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে জানতে চান, রপ্তানি পণ্যে কী ফর্মুলায় বা প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহারের মূল্যায়ন এবং স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি নির্ণয় করা হবে। এ ব্যাপারে দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়াতে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে একটি গুদাম স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। তাঁরা বলেন এটি বাংলাদেশি উদ্যোগ বা মার্কিন উদ্যোগ বা যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এই গুদাম তৈরি পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইম কমাতে ভূমিকা রাখবে।
বিজিএমইএ নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পাশাপাশি পলিয়েস্টার, নাইলনের মতো ম্যান মেইড ফাইবার আমদানি করতে আগ্রহী। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে তাঁরা মার্কিন দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন। বিষয়টি নিয়ে ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অ্যাটাশে পল জি ফ্রস্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা বিস্তারিত জানাবেন।
মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়াতে আগামী মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যোগের সিলেক্ট ইউএসএর সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বিজিএমইএ নেতাদের পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, এটি বাংলাদেশি তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিং তৈরিতে সহায়তা করবে।