১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর সেনানিবাসে কী ঘটেছিল
Published: 14th, August 2025 GMT
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সকাল পৌনে ছয়টা বাজে। দরজার কলবেলের একটানা শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।
ড্রয়িংরুমের দরজা খুলে দেখি ২য় ফিল্ডের সিও মেজর রশিদ এবং সেনাসদরের একজন স্টাফ অফিসার মেজর আমীন আহম্মেদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। আমীন সিভিল ড্রেসে কিছুটা উদ্ভ্রান্ত, বিমর্ষ। শান্ত-নিরুত্তাপ গলায় রশিদ বললেন, ‘উই হ্যাভ ডান ইট। শেখ মুজিব হ্যাজ বিন কিলড।’
সদ্য ঘুম থেকে উঠে এ ধরনের ভয়াবহ সংবাদ শুনে বিস্ময়ে বিমূঢ় দৃষ্টিতে আমীনের দিকে তাকালাম। এঁরা দুজন বন্ধু, পিএমের কোর্সমেট এবং আমার সিনিয়র। আমীন নিশ্চুপ রইলেন। বাইরে তাকিয়ে দেখি এক গাড়ি ভর্তি আর্টিলারি সৈনিক রশিদের সঙ্গেই আমার বাসার গেট খুলে প্রবেশ করেছে। ড্রয়িংরুমের বাইরেই তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
রশিদ আদেশের সুরে বললেন, ‘আমি কমান্ডারের (কর্নেল শাফায়াত) কাছে যাচ্ছি। তোমাকেও আমার সঙ্গে যেতে হবে।’ ইতিমধ্যে রাইফেলধারী দুজন সৈনিক আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আমার ড্রয়িংরুমে ঢোকে। রশিদের নির্দেশ পেলেই তারা আমাকে গুলি করবে কিংবা বন্দী করবে, এমনটি মনে হলো। রশিদের কথা শুনে আমি হতভম্ব, বলে কী! প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে এমনভাবে বলছে, যেন কিছুই হয়নি। আমি একটু সময় নিয়ে ধাতস্থ হওয়ার জন্য বললাম, ‘ঠিক আছে, আমি ইউনিফর্ম পরে আসছি।’
দ্রুত ইউনিফর্ম পরে নিলাম। ভাবলাম এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমার প্রথম কাজ ব্রিগেড কমান্ডারকে ঘটনা সম্পর্কে জানানো। সুতরাং তাঁর কাছেই যাব। রশিদের প্রস্তাবে রাজি না হলে এরা যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে। আমি একেবারেই নিরস্ত্র, বাসায় কোনো গার্ডও নেই। স্ত্রী ঘুমিয়ে আছে। তাকেও জানালাম না।
আমার বাসা সেনানিবাসের মেইন রোডের পাশেই। রাস্তার উল্টো দিকেই ডেপুটি চিফ জেনারেল জিয়ার বাসা। জিয়ার বাসার পেছনের রাস্তার ওপারেই ৫০ গজ দূরে কমান্ডার কর্নেল শাফায়াতের বাসা। রশিদের কথামতো বাসা থেকে বেরিয়ে আমি ও আমীন আহম্মেদ তাঁর জিপে উঠলাম। গাড়িভর্তি সৈনিকেরাও আমাদের ফলো করে।
মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ব্রিগেড কমান্ডারের বাসায় পৌঁছে গেলাম। রাস্তায় কোনো জনপ্রাণী নেই, সবাই তখনো সুখনিদ্রায় বিভোর। কমান্ডারের বাসায়ও ২য় ফিল্ডের সৈনিকেরা গার্ড ডিউটি করছে। আমি কলবেল বাজাতেই ব্যাটম্যান দরজা খুলে দিল। আমরা ড্রয়িংরুমে সোফায় বসলাম। মিনিট দুয়েকের মধ্যে লুঙ্গি-শার্ট পরা কর্নেল শাফায়াত ড্রয়িংরুমে এসে বললেন, ‘কী ব্যাপার?’
‘স্যার, উই হ্যাভ কিলড প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অ্যাকশনে যাবেন না। গেলে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে।’ বলেই কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করে রশিদ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
মিনিট দশেকের মধ্যে ১ম ইস্ট বেঙ্গলের সব অফিসার সিওর অফিসে সমবেত হলেন। সবার চোখেমুখে উত্তেজনা। একজন বললেন, তিনি সৈনিক ব্যারাকের পাশ দিয়ে হেঁটে আসার সময় রেডিওতে মেজর ডালিমের ঘোষণা শুনেছেন, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে এবং দেশে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে। কমান্ডার জিজ্ঞেস করলেন, ‘সৈনিকদের রিঅ্যাকশন কী?’ ‘তারা উল্লাসধ্বনি দিচ্ছে, আনন্দ প্রকাশ করছে,’ অফিসারের সংক্ষিপ্ত জবাব।শাফায়াতও হতভম্ব। আমাকে ও আমীনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘রশিদ এসব কী বলছে?’এমন সময় তাঁর বেডরুমে রেড ফোন বেজে ওঠে। তিনি ফোন ধরতে গেলেন। মিনিট দুয়েক পর ফিরে এসে আমাকে বললেন, ‘চিফ (জেনারেল সফিউল্লাহ) ফোন করেছেন। তিনি জানতে চাচ্ছেন কিছুক্ষণ আগে ৩২ নম্বরে প্রেসিডেন্টের বাড়িতে কারা হামলা করেছে। প্রেসিডেন্ট তাঁকে ফোর্স পাঠিয়ে উদ্ধার করতে বলেছেন। আমি কমান্ডারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘চিফ কোনো নির্দেশ দিয়েছেন?’
‘না, উনি শুধু কাঁদছেন আর বলছেন, প্রেসিডেন্ট তাঁকে বিশ্বাস করলেন না।’ শাফায়াত বললেন।
‘স্যার, ইউনিফর্ম পরে আসুন, তাড়াতাড়ি অফিসে যাওয়া দরকার।’ আমি বললাম।
‘ওকে।’ বললেন শাফায়াত।
কয়েক মিনিট পরই আমি ও কমান্ডার বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। আমীন গেলেন তাঁর অফিসার মেসে। এত ভোরে কারও গাড়ি আসেনি। তাই পায়ে হেঁটে ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের উদ্দেশে যাত্রা করলাম। রাস্তার মোড়েই জেনারেল জিয়ার শহীদ মইনুল রোডের বাসার পূর্ব পাশের দেয়াল। শাফায়াত বলে উঠলেন, ‘চলো, জেনারেল জিয়ার বাসায় যাই, ঘটনাটি তাঁকে জানাই।’
আরও পড়ুন১৫ আগস্ট ১৯৭৫: কেন সেদিন প্রতিরোধ হলো না২৯ আগস্ট ২০২২আমরা দুজন দ্রুত হেঁটে জিয়ার বাসায় গেলাম। সেখানে ১ম ইস্ট বেঙ্গলের সৈনিকেরা গার্ড ডিউটি করছে, সবাই আমার পরিচিত। তারা গেট খুলে দিলে আমরা দুজন দ্রুত হেঁটে জিয়ার বাসায় গেলাম। সেখানে ১ম ইস্ট বেঙ্গলের বাসার ভেতরে ঢুকি।
কলবেল টিপলে জিয়া নিজেই দরজা খুলে দিলেন। তাঁর পরনে সাদা পায়জামা, সাদা হাফহাতা গেঞ্জি। শেভ করছিলেন, মুখে সাদা শেভিং ক্রিম, কাঁধে তোয়ালে। আমাদের দেখে বললেন, ‘হোয়াট হ্যাপেন্ড?’
‘স্যার, প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড। একটু আগে মেজর রশিদ এসে আমাকে জানিয়ে গেল।’ শাফায়াত বললেন।
‘সো হোয়াট? প্রেসিডেন্ট হ্যাজ বিন কিলড, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। উই উইল আপহোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন। (আমরা সংবিধান মেনে চলব) গো অ্যান্ড গেট ইউর ট্রুপস রেডি।’ জিয়ার মন্তব্য। আমরা গেট দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় জিয়াকে নেওয়ার জন্য একটি জিপ বাসায় ঢুকছিল। আমরা ড্রাইভারকে বললাম আমাদের অফিসে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। ড্রাইভার রাজি হয়ে গাড়ি ঘোরাল আমাদের তুলে নেওয়ার জন্য।
চিত্রশিল্পীর অঙ্কনে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ন ড র অফ স র আম দ র স করল আগস ট বলল ন
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে