মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। কেউ আবার নতুন খামার করেছেন। তবে সঠিক সময়ে মুরগির রোগ নির্ণয় করতে না পারার কারণে বিপদে পড়েন খামারিরা। এ সমস্যা সমাধানে বিষ্ঠার রং, ঘনত্ব ও অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা করে দ্রুত রোগের ধরন জানাতে সক্ষম অ্যাপ উন্মুক্ত করেছে দেশীয় আইটি স্টার্টআপ ‘নেভরোনাস সিস্টেমস’। তাদের তৈরি ‘পোলট্রি পাল’ নামের মোবাইল অ্যাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মুরগির বিষ্ঠার ছবি বিশ্লেষণ করে কক্সিডিওসিস, সালমোনেলোসিস এবং নিউক্যাসল ডিজিজ-এর মতো মারাত্মক রোগের প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে। ফলে আগে মুরগির যে রোগ নির্ণয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো বা মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হতো, সেই জটিল কাজ এখন স্মার্টফোনেই সম্ভব।

উদ্ভাবনের পেছনের কথা

গত শনিবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা হয় নেভরোনাস সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাজিব মোস্তাফিজের সঙ্গে। তিনি জানান, দেশের পোলট্রি খামারির কাছে সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও কার্যকর মুরগির রোগ নির্ণয়ের প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে নেভরোনাস সিস্টেমসের আকরাম হোসেন ও তিনি অ্যাপটি তৈরি করেছেন। অ্যাপটির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পোলট্রি খামারে কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়া মানে খামারিদের মাথায় হাত। অনেক সময় রোগের লক্ষণ বোঝার আগেই ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। আমরা চেয়েছি এমন একটি টুল তৈরি করতে, যা রোগের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে খামারিকে সতর্ক করতে পারবে। পোলট্রি পাল অ্যাপ সেই কাজটিই করে। অ্যাপটি তৈরি করতে আমাদের দেড় বছরের বেশি সময় লেগেছে, খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা।’

যেভাবে কাজ করে পোলট্রি পাল

পোলট্রি পাল অ্যাপের ব্যবহার ব্যবহার পদ্ধতি বেশ সহজ। খামারিকে শুধু মুরগির বিষ্ঠার একটি পরিষ্কার ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করতে হয়। এরপর অ্যাপের শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যালগরিদম ছবিটি বিশ্লেষণ করে বিষ্ঠার রং, ঘনত্ব ও অন্যান্য সূক্ষ্ম বায়ো-মার্কারগুলো পরীক্ষা করে। এর ওপর ভিত্তি করে অ্যাপটি একটি সম্ভাব্য রোগের নাম বা মুরগিটি সুস্থ আছে কি না, সে–সম্পর্কিত একটি প্রাথমিক ফলাফল জানায়। এ বিষয়ে রাজিব মোস্তাফিজ বলেন, ‘অ্যাপটি মূলত প্রাথমিক রোগ শনাক্তকারী টুল, কোনোভাবেই বিশেষজ্ঞ পশুচিকিৎসকের বিকল্প নয়। আমরা সব সময় ব্যবহারকারীদের যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগে একজন নিবন্ধিত ভেটেরিনারিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করার সুপারিশ করি।’

খামারিদের জন্য আশীর্বাদ

বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে পোলট্রিশিল্প অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে, সেখানে রোগের প্রাদুর্ভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রচলিত ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলো বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ও মাঝারি খামারিদের পক্ষে সব সময় দ্রুত পশুচিকিৎসকের সেবা পাওয়া বা ল্যাবে নমুনা পাঠানো সম্ভব হয় না। পোলট্রি পাল ঠিক এখানেই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে।

অ্যাপটির উল্লেখযোগ্য সুবিধা

• অফলাইন কার্যকারিতা: অ্যাপটি একবার ডাউনলোড হয়ে গেলে রোগ নির্ণয়ের জন্য আর ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় না। এটি সরাসরি মোবাইলের প্রসেসিং ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজ করে, যা গ্রামীণ পরিবেশে ব্যবহারের জন্য আদর্শ।

• খরচ ও সময় সাশ্রয়: তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়ায় খামারিরা দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন, যা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে তাদের বাঁচায়।

• খামারিদের ক্ষমতায়ন: অ্যাপটি শুধু রোগ নির্ণয়ই করে না, পাশাপাশি রোগ-সম্পর্কিত বিভিন্ন জেনেরিক ও বাণিজ্যিক ওষুধের তথ্যও প্রদান করে। এতে খামারিরা আরও সচেতন ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

• পশুচিকিৎসকদের সহায়ক: অ্যাপটি পশুচিকিৎসকদের জন্য একটি ‘এক্সপার্ট সেকেন্ড অপিনিয়ন’ বা দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ মতামত হিসেবে কাজ করতে পারে, যা তাদের রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ করে তুলতে সহায়ক হবে।

অ্যাপটি বর্তমানে গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই অ্যাপটি অ্যাপস্টোর ব্যবহারকারীদের জন্যও উন্মুক্ত করা হবে। অ্যাপটি নামানো যাবে এই ঠিকানা থেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ম রগ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ