আইডিএলসি ফাইন্যান্সের তিনটি প্রধান লক্ষ্য। এগুলো হলো পরিবেশের ওপর ব্যবসার নেতিবাচক প্রভাব কমানো, সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রবৃদ্ধি তথা উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি। এই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য ২০২১ সালে আইডিএলসি পাঁচ বছর মেয়াদি একটি পথনকশা তৈরি করে। এতে ১০টি স্তম্ভ (মূল দিক) ও ৩০টি অঙ্গীকার রয়েছে। এই পথনকশা অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। 

আইডিএলসির এই প্রচেষ্টার স্বীকৃতিও মিলেছে। নীতিনির্ধারণী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিচারে দেশের পরিবেশ, সমাজ ও মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স। আমরা সব সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনে (ইএসজি) ভালো উদাহরণ গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। 

টেকসই ও পরিবেশবান্ধব (গ্রিন) অর্থায়নেও ভালো করছে আইডিএলসি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ন্যূনতম ২০ শতাংশ হতে হবে টেকসই অর্থায়ন খাতে। সেখানে ২০২৪ সালে আমাদের মোট ঋণের ৪৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ছিল টেকসই অর্থায়নভিত্তিক। এ ছাড়া গত বছর পরিবেশবান্ধব খাতে আমাদের ঋণ ছিল ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এটিও বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ শতাংশের ন্যূনতম সীমার দ্বিগুণের বেশি। 

২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক, এফএমও (নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি উন্নয়নমূলক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) এবং এফআই কনসাল্টের (পরামর্শক প্রতিষ্ঠান) সহায়তায় আইডিএলসি ফাইন্যান্স ‘গ্রিন ব্যাংকিং’ নীতিমালা ও ‘গ্রিন অফিস’ নীতিমালা চালু করে। এটি আমাদের পরিবেশবান্ধব ও দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক যাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর মাধ্যমে আমরা শুধু আর্থিক সেবা প্রদানের ধরনে পরিবর্তন আনিনি; বরং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি জোরদার করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে গড়ে তোলা হয় সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইউনিট (এসএফইউ)। এই ইউনিট পরিবেশ ও সামাজিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ, কার্বন নিঃসরণ পরিমাপ, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সাসটেইনেবিলিটি প্রতিবেদন প্রণয়ন এবং উদ্ভাবনী পরিবেশবান্ধব আর্থিক পণ্য উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ফলে আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম শুধু মুনাফা অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা দেশের টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখছে। 

আইডিএলসির নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও পরিবেশের প্রতি নিবেদিত আচরণের প্রভাব লক্ষ করা যায়। যেমন আমাদের বিভিন্ন কার্যালয়ে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী লাইট, স্বয়ংক্রিয় সেন্সরযুক্ত পানি ও বিদ্যুৎব্যবস্থা রয়েছে। 

বর্তমানে পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে কাজ করে যাচ্ছে আইডিএলসি। এনজেডবিএর আওতায় ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা প্রতিবছর নিয়মিত স্কোপ ওয়ান ও স্কোপ টু নিঃসরণের মাত্রা পরিমাপ করছি। ২০২২ সালের নির্গমন তথ্যকে ভিত্তি ধরে খাদ্য, টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, কৃষি, মোটরযান এবং বিদ্যুৎ—এই পাঁচ প্রধান খাতে ধাপে ধাপে নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। 

আমাদের বিভিন্ন করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম এই প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দেয়। যেমন চট্টগ্রাম মা ও শিশু ক্যানসার হাসপাতালে আইডিএলসির সহযোগিতায় ২০ শয্যার কেমোথেরাপি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি আর্থিকভাবে অসচ্ছল ক্যানসার রোগী চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন। এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করছে আইডিএলসি। এভাবে টেকসই উন্নয়নের পথে দায়িত্বশীল অর্থায়ন ও সামাজিক দায়িত্বের দারুণ সব গল্প লিখে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আইডিএলসি।

আসিফ সাদ বিন শামস
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইড এলস র ফ ইন য ন স আম দ র পর ব শ লক ষ য আর থ ক ট কসই ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিলটন হোটেল, সেরা তালিকায় আছে মেটলাইফ

আধুনিক মানুষের দিনের বড় একটা সময় যায় কর্মস্থলে। ফলে সেই কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কর্তৃপক্ষ কর্মীদের কথা কতটা ভাবছে—এ সবকিছু এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।

সম্মান, নিরাপত্তা, উন্নতির সুযোগ ও কাজের অর্থবহতা আছে—মানুষ সাধারণত এমন কর্মস্থলই চায়। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। তারা মূলত বিশ্বের সেরা ২৫ কর্মস্থলের তালিকা করে। সেই তালিকায় সবার ওপরে আছে হিলটন হোটেল। মূলত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এই জরিপ ও তালিকা করা হয়েছে।

এবারের তালিকায় ২৫টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যগুলো বিভিন্ন দেশের, মূলত ইউরোপের। কোম্পানিগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে—২৫টি কোম্পানির মধ্যে ৮টি এই খাতের। এ ছাড়া নির্মাণ, জৈব ওষুধ, উৎপাদন, কুরিয়ার, আর্থিক ও পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোও তালিকায় আছে।

সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানি হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীবনবিমা কোম্পানি মেটলাইফ। ২০২৫ সালে দশম স্থান অর্জন করে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ধরে রাখল কোম্পানিটি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম রয়েছে।

৯০ লাখের বেশি উত্তরের ওপর ভিত্তি করে ফরচুনের সেরা ২৫টি কর্মক্ষেত্রের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি কর্মীর কাজের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে মেটলাইফের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মিশেল খালাফ বলেন, ‘টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় স্থান পাওয়া কর্মীদের নিষ্ঠা ও উদ্যোগের প্রমাণ।’

কারা আছে তালিকায়

দেখে নেওয়া যাক এবারের তালিকায় কোন কোন দেশের কোম্পানি আছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কুরিয়ার ও যাতায়াত খাতের কোম্পানি ডিএইচএল। তৃতীয় স্থানে আছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সিসকো। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রে। চতুর্থ স্থানে আছে পেশাদার সেবা দেওয়া আইরিশ কোম্পানি অ্যাক্সেনচিউর, পঞ্চম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিশ্বখ্যাত হোটেল ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল। ষষ্ঠ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি অ্যাব ভিয়ে, সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের পেশাদার সেবা দেওয়া কোম্পানি টিপি। অষ্টম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনভিত্তিক কোম্পানি স্ট্রাইকার, নবম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সেলস ফোর্স।

দশম স্থানে আছে মার্কিন বিমা কোম্পানি মেটলাইফ, ১১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি সার্ভিস নাউ। ১২তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি স্পেকসেভার্স। ১৩তম স্থানে আছে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি সিমেন্স হেলদিনেস; ১৪তম স্থানে আছে আইরিশ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এক্সপেরিয়েন। ১৫তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি এনভিডিয়া, ১৬তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কেডেন্স। ১৭তম স্থানে আছে জার্মানির বিমা ও আর্থিক কোম্পানি আলিয়াঞ্জ এবং ১৮তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতের কোম্পানি ডাও।

১৯ থেকে ২১তম স্থানে আছে তিনটি মার্কিন কোম্পানি। ১৯তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈব ওষুধ কোম্পানি ভিয়াট্রিস, ২০তম স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডোবি, ২১তম স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক।

২২ ও ২৩তম স্থানেও আছে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি কোম্পানি—উৎপাদন খাতের এসসি জনসন ও খুচরা বিক্রয় খাতের ট্রেক বাইসাইকেল। ২৪তম স্থানে আছে লিচেনস্টাইনের নির্মাণ কোম্পানি হিলতি ও ২৫তম স্থানে আছে যুক্তরাজ্যের বিমা ও আর্থিক খাতের কোম্পানি অ্যাডমিরাল গ্রুপ।

কীভাবে এই মূল্যায়ন

৩০ বছর ধরে এই জরিপ পরিচালনা করছে ফরচুন ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছ থেকে তারা জানতে চায়, কর্মস্থলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কেমন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা কিছু মানদণ্ড তৈরি করে। সেই মানদণ্ডের ভিত্তিতে বোঝা যায়, কোনো কর্মস্থল প্রকৃত অর্থেই ‘দারুণ’ কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা সে প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান কি না, প্রতিষ্ঠান কত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে ও তার সামগ্রিক ব্যবসায়িক সাফল্য কতটা মিলবে—এসব বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায় জরিপে।

ফরচুন ম্যাগাজিন নিজস্ব ট্রাস্ট ইনডেক্স বা আস্থাসূচক তৈরি করেছে। ব্যবস্থাপনার প্রতি কর্মীদের আস্থা কতটা, সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ও কোম্পানির প্রতি কর্মীদের আনুগত্য কতটা—এসব আস্থাসূচকের মাধ্যমে এসব বিষয় পরিমাপ করা হয়।

এ জরিপে কর্মীরা গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। ৬০টি বিষয়ের ওপর ৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে উত্তর দিতে হয়, সঙ্গে থাকে ২টি উন্মুক্ত প্রশ্ন।

কর্মীদের কাছ থেকে যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়, সেগুলো হলো নেতৃত্বের কাছে কি সহজে যাওয়া যায়, নেতৃত্ব সততা ও স্বচ্চতার সঙ্গে কথা বলেন ও কাজ করেন কি না, নেতৃত্বের কথা ও কাজে মিল আছে কি না। সেই সঙ্গে কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত বোধ করেন কি না এবং তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কতটা। নেতৃত্ব কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানান কি না এবং কর্মীদের সুস্থতা বজায় রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না। এ ছাড়া কর্মীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে কি না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়।

জরিপে কর্মীদের কাছে আরও যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয় সেগুলো হলো:

বেতন, মুনাফা, পদোন্নতি, স্বীকৃতি ও সুযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কতটা ন্যায়সংগত;

কর্মীরা নিজেদের কাজ, কর্মদল ও প্রতিষ্ঠানের জন্য গর্ব বোধ করেন;

কাজ অর্থবহ এবং তা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করে;

সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে;

কর্মীরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিন্নতা কতটা, তা–ও জরিপে পরিমাপ করা হয়। কর্মীদের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা ও গুণগত মানও মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে প্রতিটি ধাপে কঠোর মানদণ্ড মেনে এই তালিকা করা হয় বলে জানিয়েছে ফরচুন ম্যাগাজিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ