বোর্ড ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধভাবে চলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেন্ট্রাল কলে
Published: 17th, August 2025 GMT
নতুন বেসরকারি কলেজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেন্ট্রাল কলেজ। কলেজটির অনুমোদিত ঠিকানা শহরের ভাদুঘর এলাকায়। কিন্তু বাস্তবে ক্লাস চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কলেজপাড়ায়, যা মূল ঠিকানা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা সরাসরি লঙ্ঘন করে বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রাথমিক পাঠদানের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ মার্চ পৌর ভূমি কার্যালয়ে ‘ভূমির অখণ্ডতা সনদ’ চেয়ে আবেদন করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাহাদাত সরকার, যিনি নিজেকে কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় দেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি বিএস ৭২৯৪ দাগে ৯০ শতক এবং বিএস ৭৩২২ দাগে ১০ শতক জমি কলেজের নামে দানপত্র দলিলের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছে।
পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদনে দেখা যায়, জমিগুলো সদর উপজেলার ভাদুঘর মৌজায়, অখণ্ড ও বিরোধমুক্ত। এর ভিত্তিতে ‘ভূমির অখণ্ডতা সনদ’ ইস্যু হয়। এই নথি জমা দিয়েই কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ভাদুঘরে কলেজ স্থাপনের প্রাথমিক অনুমতি দেয়।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ভাদুঘরের জমিতে কোনো একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়নি। এর পরিবর্তে সাহাদাত সরকার ও তার লোকজন শহরের কলেজপাড়ায় সরকারি কলেজের পেছনে একটি ভাড়া বাসায় অস্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করেছেন। এখানেই চলছে ভর্তি কার্যক্রম, লিফলেট বিতরণ ও পাঠদান।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান নীতিমালা ২০২২-এর ৬(৪)(ক) ও (খ) ধারা অনুযায়ী, প্রস্তাবিত জমি ও স্থাপনা সরেজমিন পরিদর্শনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া নীতিমালার ৬(৮) ধারায়ও স্পষ্ট বলা আছে। কিন্তু এই নীতিমালা উপেক্ষা করে সেন্ট্রাল কলেজটি ভাড়া বাসায় তার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
গত এপ্রিল মাসে কলেজপাড়ার এক বাসিন্দা লিখিত অভিযোগ করেন, এখানে কোনো স্থায়ী অবকাঠামো ছাড়াই কলেজের কার্যক্রম চলছে, যা নীতিমালার পরিপন্থি। অভিযোগের ভিত্তিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহাদাত সরকারকে ২৩ এপ্রিল শুনানির জন্য হাজির হতে বলেন। শুনানিতে সাহাদাত সরকার ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবেন না’ মর্মে মুচলেকা দেন।
কলেজপাড়ার বাসিন্দা কয়েকজন বলেন, একটি কলেজ থেকে আরেকটি কলেজের দূরত্ব দুই থেকে তিন কিলোমিটার হওয়ার কথা। অথচ সরকারি কলেজের পেছনেই ভাড়া বাড়িতেই এর কার্যক্রম চলছে।
তারা দাবি করেন, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামালের মাধ্যমে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করেই এ অনুমতি আদায় করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, এ ধরনের অনিয়ম শুধু শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও বিভ্রান্ত করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেন্ট্রাল কলেজের পরিচালক সাহাদাত সরকার বলেন, “ডিসি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) স্যারের সঙ্গে আমার মিটিং আছে। এ বিষয়ে আমি পরে কথা বলবো। ঢাকা আমার অনেক সাংবাদিক আছে, ওনারা আপনার সঙ্গে কথা বলবে।”
শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে রাজি হননি।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা একাডেমি সুপারভাইজার পাপিয়া আক্তার বলেন, “আমি এ বিষয়ে অবগত নই। আমার অফিসে এমন কোনো তথ্য আসেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমনটা করার কোনো অধিকার নেই। আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মো.
এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শামসুল আলমকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/রুবেল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স হ দ ত সরক র স ন ট র ল কল ব র হ মণব ড কর মকর ত র সদর উপজ ল কল জ র ভ দ ঘর
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মেঘনা গ্রুপের কর্মকর্তাসহ দুজন নিহত
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী ও কবিরহাট উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মেঘনা গ্রুপের এক কর্মকর্তাসহ দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে দুর্ঘটনা দুটি ঘটে।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় নিহত দুই ব্যক্তি হলেন মেঘনা গ্রুপের (ফ্রেশ) আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক গোলাম ছারওয়ার (৪৫)। তিনি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার আবদুস সাত্তার মণ্ডলের ছেলে। নিহত অপরজন হলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিরাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা বেলাল হায়দার (৫২)।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টার দিকে শহরের পশ্চিম মাইজদী এলাকায় মাইজদী-রাজগঞ্জ-ছয়ানী সড়কের নাহার কটেজের মোড়ে মোটরসাইকেল আরোহী মেঘনা গ্রুপের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক গোলাম ছারওয়ারকে পেছন থেকে চাপা দেয় একটি পণ্যবাহী গাড়ি। এ সময় তিনি মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে ওই গাড়ির পেছনের চাকার নিচে পড়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন। পরে সুধারাম থানার পুলিশ গিয়ে নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে এবং গাড়িটি আটক করে।
সুধারাম থানার উপরিদর্শক (এসআই) লন্ডন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের মোড় ঘুরতে গিয়ে সম্ভবত পণ্যবাহী গাড়িটি মোটরসাইকেলকে চাপা দিয়েছে। এতে মোটরসাইকেল থেকে আরোহী গোলাম ছারওয়ার ছিটকে গাড়ির পেছনের চাকার নিচে পড়ে যান। গাড়িটি আটক করা হয়েছে। চালক পালিয়ে গেছেন। নিহত ব্যক্তির পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অপর দিকে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কবিরহাটের গ্রামের বাড়ি থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস করানোর জন্য জেলা শহরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে যাচ্ছিলেন বেলাল হায়দার (৫২) নামের এক ব্যক্তি। পথে সুন্দলপুর ইউনিয়নের হাতাইল্লা পোল নামের স্থানে বিপরীত দিক হতে আসা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে বেলালকে বহনকারী অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারের পর বেলাল হায়দারকে জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত হন বেলালের স্ত্রী, অটোরিকশার চালক, প্রাইভেট কারের চালক, আরোহীসহ কমপক্ষে আরও পাঁচজন। তাঁরা জেলা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে কবিরহাট থানার পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। নিহত ব্যক্তির লাশ পরিবার বাড়িতে নিয়ে গেছে।