জুলাই অভ্যুত্থানের পর এ দেশের নিপীড়িত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা অধিকার ফিরে পাবে বলে মনে করেছিল; কিন্তু তাদের সেই আশা ভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি। তাদের ওপর নিপীড়ন কমেনি। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে একটি গোষ্ঠী।

‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কথাগুলো বলেন বক্তারা। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আজ রোববার এ সভা হয়। এর আয়োজন করে আইপিনিউজ বিডি।

সভায় অংশ নেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ছাত্র-যুব সংগঠনের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি। আইপিনিউজ বিডির সম্পাদক আন্তনী রেমার সভাপতিত্বে সভাটি সঞ্চালনা করেন নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা।

সভায় আইপিনিউজের যুগ্ম সম্পাদক অমর শান্তি চাকমা বলেন, দেশের ৫৪টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তাদের স্বতন্ত্র রীতি, ঐতিহ্য ও প্রথাগত আচার-বিশ্বাস নিয়ে সুপ্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে বসবাস করছে। কিন্তু ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশেও তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এবং নিরীহ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর নিপীড়ন ও ভূমি বেদখলের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পরও মূলধারার গণমাধ্যমে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের খবর গুরুত্বসহকারে উঠে আসছে না। একটি গোষ্ঠী সব সময় তাদের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।

বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সহসাধারণ সম্পাদক হেলেনা তালাং বলেন, ‘যেখানে বন, সেখানে আদিবাসী। বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে লিখতে হবে। শুধু সাংস্কৃতিক বিষয় নয়, তাদের দুঃখ-দুর্দশাও মিডিয়ায় উঠে আসা জরুরি।’

ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকারবিষয়ক সংগঠন অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ভূমি অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা না হলে তারা প্রান্তিক অবস্থায় থেকেই যাবে। ভুয়া দলিল ও ভূমিদস্যুরা তাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। মিডিয়া এ বিষয়গুলো তুলে আনতে পারে। জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি ইউজিন নকরেকও মিডিয়ার সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, মিডিয়া যদি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবরগুলো প্রকাশ ও নিয়মিত ফলোআপ না করে তাহলে সাধারণ মানুষ ভুল ধারণার শিকার হয়। সিভিল সোসাইটি ও মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক বৃদ্ধি জরুরি।

সভায় ছয় দফা দাবিনামা তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্মপরিচয় ও গণমাধ্যম স্বীকৃতি নিশ্চিত করা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর সংবেদনশীল ও বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রচার করা, পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং ভূমি কমিশন ও পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন।

পরিশেষে আইপিনিউজের সম্পাদক আন্তনী রেমা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সমর্থন ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে আলোচনা সভা সমাপ্ত করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের ওপর একের পর এক হামলা, হত্যা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা এক গভীর সংকটের জন্ম দিয়েছে। গত আড়াই মাসে অন্তত পাঁচজন চালককে খুন করে অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়েছে, যা স্থানীয় চালকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামা এই মানুষগুলোর নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অটোরিকশার যাত্রী সেজে বা অনুসরণ করে নির্জন স্থানে চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাই করা হচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনায় রুবেল হোসেনের মতো একজন চালক ছিনতাই ঠেকাতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, পাশ দিয়ে পথচারীরা হেঁটে গেলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। এটি আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কেও তুলে ধরে।

অটোরিকশাচালকদের এই ঝুঁকির পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, বেশির ভাগ চালকই ভাড়া করা রিকশা চালান। রিকশা চুরি হলে মালিককে তাঁর দামের প্রায় পুরোটাই শোধ করতে হয়। এই বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের থাকে না, ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা ছিনতাইকারীদের মোকাবিলা করতে বাধ্য হন। দ্বিতীয়ত, অনেক চালক কিস্তিতে রিকশা কেনেন, যা ছিনতাই হলে তাঁদের ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যায়। এই অর্থনৈতিক চাপই তাঁদের জীবন হাতে নিয়ে ছিনতাই ঠেকানোর মতো ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।

এই অপরাধী চক্রের সঙ্গে কিছু গ্যারেজমালিকের জড়িত থাকার অভিযোগও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এ ধরনের যোগসাজশ প্রমাণ করে যে অপরাধের শিকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টহল জোরদারের কথা বলা হলেও, তা পর্যাপ্ত নয়। শুধু টহল দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, পুলিশকে আরও সক্রিয় ও কৌশলী হতে হবে। ছিনতাইকারী চক্রগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা উদ্ধার এবং গ্যারেজমালিকদের ভূমিকা তদন্ত করে দেখতে হবে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা উচিত, যাতে অটোরিকশাচালকেরা সহজ শর্তে ঋণ বা কিস্তিতে রিকশা কিনতে পারেন। যাতে রিকশা ছিনতাই হলে চালকের ওপর বিশাল ঋণের বোঝা না চাপে। তবে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সবচেয়ে যেটি কার্যকর তা হচ্ছে, পুলিশকে আরও তৎপরতা বাড়াতে হবে এবং কোনো অপরাধী চক্রকে ছাড় দেওয়া যাবে না। গ্রেপ্তারের পর সহজে জামিন পেয়ে আবার অপরাধের সঙ্গে যাতে জড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে