আলোচনা সভা: ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ওপর নিপীড়নের ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর একটি গোষ্ঠী
Published: 17th, August 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানের পর এ দেশের নিপীড়িত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা অধিকার ফিরে পাবে বলে মনে করেছিল; কিন্তু তাদের সেই আশা ভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগেনি। তাদের ওপর নিপীড়ন কমেনি। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে একটি গোষ্ঠী।
‘বাংলাদেশের আদিবাসীদের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কথাগুলো বলেন বক্তারা। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আজ রোববার এ সভা হয়। এর আয়োজন করে আইপিনিউজ বিডি।
সভায় অংশ নেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও ছাত্র-যুব সংগঠনের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি। আইপিনিউজ বিডির সম্পাদক আন্তনী রেমার সভাপতিত্বে সভাটি সঞ্চালনা করেন নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা।
সভায় আইপিনিউজের যুগ্ম সম্পাদক অমর শান্তি চাকমা বলেন, দেশের ৫৪টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তাদের স্বতন্ত্র রীতি, ঐতিহ্য ও প্রথাগত আচার-বিশ্বাস নিয়ে সুপ্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে বসবাস করছে। কিন্তু ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশেও তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে উপেক্ষিত থেকে গেছে। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এবং নিরীহ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর নিপীড়ন ও ভূমি বেদখলের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পরও মূলধারার গণমাধ্যমে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের খবর গুরুত্বসহকারে উঠে আসছে না। একটি গোষ্ঠী সব সময় তাদের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সহসাধারণ সম্পাদক হেলেনা তালাং বলেন, ‘যেখানে বন, সেখানে আদিবাসী। বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে লিখতে হবে। শুধু সাংস্কৃতিক বিষয় নয়, তাদের দুঃখ-দুর্দশাও মিডিয়ায় উঠে আসা জরুরি।’
ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকারবিষয়ক সংগঠন অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ভূমি অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা না হলে তারা প্রান্তিক অবস্থায় থেকেই যাবে। ভুয়া দলিল ও ভূমিদস্যুরা তাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। মিডিয়া এ বিষয়গুলো তুলে আনতে পারে। জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি ইউজিন নকরেকও মিডিয়ার সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, মিডিয়া যদি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবরগুলো প্রকাশ ও নিয়মিত ফলোআপ না করে তাহলে সাধারণ মানুষ ভুল ধারণার শিকার হয়। সিভিল সোসাইটি ও মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক বৃদ্ধি জরুরি।
সভায় ছয় দফা দাবিনামা তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্মপরিচয় ও গণমাধ্যম স্বীকৃতি নিশ্চিত করা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর সংবেদনশীল ও বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রচার করা, পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং ভূমি কমিশন ও পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন।
পরিশেষে আইপিনিউজের সম্পাদক আন্তনী রেমা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সমর্থন ও সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে আলোচনা সভা সমাপ্ত করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে বারবার সাম্প্রদায়িক উসকানি, বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর দেবালয় আক্রমণ-ভাঙচুরসহ নানা অপ্রীতিকর সাজানো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তাদের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর।
শারদীয় দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই বাণী দেওয়া হয়।
বাণীতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমী। এ উপলক্ষে আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন। তাঁদের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করছি।’
শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর সব মানুষের জীবনে এক আলোকদীপ্ত বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশসহ বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর এই ধর্মীয় উৎসব এক ঐশ্বর্যময় ঐতিহ্য মহিমামণ্ডিত। দেবী দুর্গা শক্তি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক।
পৃথিবীতে অঞ্চলভেদে যেকোনো উৎসবই মানুষের মধ্যে স্বর্গীয় আনন্দ ও শুভেচ্ছার বার্তা নিয়ে আসে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, উৎসবের প্রাঙ্গণে কোনো বিধিনিষেধ নেই। সেটি প্রত্যেক মানুষেরই মিলনক্ষেত্র। বাংলাদেশের মৃত্তিকার গভীর থেকে যে ইতিহাস-ঐতিহ্য উৎসারিত হয়, সেটি ধর্মীয় স্বাধীনতা-মূল্যবোধকে অন্তর্ভুক্ত করে। দুর্গাপূজার মূল বাণী হচ্ছে, অশুভের ওপর শুভের জয়। দুর্গা তাঁর গৌরবময় লক্ষ্য অর্জনের জন্য মন্দকে উপলব্ধি করেন, তা প্রতিহত করেন।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তবে অশুভ চক্রের চক্রান্ত ঠেকাতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে পূজামণ্ডপে পাহারা দিচ্ছে। যাতে শান্তি ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে। তাদের প্রতিহত করতে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ।
ধর্মীয় উৎসব সাম্প্রদায়িক কোনো বৃত্তে আবদ্ধ থাকে না বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, উৎসব বৃত্ত অতিক্রম করে সব মানুষকে নিয়ে উদ্যাপিত হয়। মানুষের আত্মাকে মিলনের বোধে উদ্দীপ্ত করে।
অপশক্তির অশুভ তৎপরতা দুর্গাপূজার উৎসবে যাতে কোনোভাবেই বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। আমরা সবাই বাংলাদেশি এটিই আমাদের গর্ব, এটিই আমাদের একমাত্র পরিচয়।’