যাঁদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে
Published: 23rd, September 2025 GMT
আগামী অক্টোবর–নভেম্বরে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার মৌসুম থাকে। এই সময়ে আয়কর রিটার্ন জমার যাবতীয় কাগজপত্র সংগ্রহ, ফরম পূরণ, রিটার্ন জমা—এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকেন কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীরা (টিআইএন)।
এ দেশে টিআইএনধারীদের মধ্যে কারা রিটার্ন দেবেন, তা ঠিক করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ দেশে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখের মতো টিআইএনধারী আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর গড়ে ৪০ লাখের মতো টিআইএনধারী সারা বছরের আয়–ব্যয়ের খবর জানিয়ে এনবিআর রিটার্ন দেন।
এবার দেখা যাক কারা রিটার্ন দেবেনকারা রিটার্ন দাখিল করবেন, তা দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১.
২. আয় যা–ই হোক না কেন, যাঁদের আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আয়ের ভিত্তিতে যাঁদের রিটার্ন বাধ্যতামূলক
ছয় ধরনের করদাতাদের করযোগ্য আয়ের ভিত্তিতে যাঁদের রিটার্ন জমা দিতে হবে। এগুলো হলো—
১. কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়।
২. নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ টাকার বেশি হয়।
৩. তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা ও প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার আয় যদি বছরে পৌনে পাঁচ লাখ টাকার বেশি হয়।
৪. গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে পাঁচ লাখ টাকার বেশি হয়।
৫. কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাতা–পিতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বেশি হলে। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যেকোনো একজন এই সুবিধা ভোগ করবেন।
৬. বাংলাদেশে অনিবাসী (অনিবাসী বাংলাদেশি ব্যতীত) করদাতার জন্য এই বাধ্যবাধকতা প্রযোজ্য হবে না।
পেশা ও কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে যাঁদের রিটার্ন বাধ্যতামূলকএ ছাড়া আয় যা–ই হোক না কেন, এনবিআর কিছু বিশেষ ধরনের করদাতার জন্য রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করেছে। পেশা ও কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে কিছু শ্রেণির টিআইএনধারীর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এনবিআরের নির্দেশনায় ৪৫ ধরনের এমন টিআইএনধারীর কথা বলা হয়েছে। এসব হলো—
১. করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে।
২. সংশ্লিষ্ট আয় বর্ষের পূর্ববর্তী তিন বছরের যেকোনো বছর করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকে বা তাঁর আয় করযোগ্য হয়ে থাকে।
৩. কোম্পানি, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার কর্মচারী হলে।
৪. ফার্ম, ফার্মের অংশীদার বা কোনো ব্যক্তিসংঘ হলে।
৫. কোনো ব্যবসায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হলে।
৬. গণ কর্মচারী (সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী) হলে।
৭. কোনো অনিবাসী যাঁর বাংলাদেশে স্থায়ী স্থাপনা আছে।
৮. কর অব্যাহতি পাওয়া বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় থাকলে।
৯. ধারা ২৬১ অনুসারে করদাতা হিসেবে নিবন্ধনযোগ্য কোনো ব্যক্তি।
১০. করারোপযোগ্য আয় না থাকা সাপেক্ষে ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে।
১১. আমদানি নিবন্ধন সনদ বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ পেতে ও নবায়ন করতে।
১২. সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য।
১৩. সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার লাইসেন্স নবায়ন করতে।
১৪. সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় বা লিজ বা হস্তান্তর বা বায়নানামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করতে।
১৫. চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি, আইনজীবী ও কর আইনজীবী, অ্যাকচুয়ারি, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার হিসেবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ নবায়ন করতে।
১৬. মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন অধীনে নিকাহ রেজিস্ট্রার, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনের অধীন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক ও স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অধীন রেজিস্ট্রার হিসেবে লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করতে।
১৭. কোনো বাণিজ্যিক সংগঠনের সদস্যপদ পেতে ও বহাল রাখতে।
১৮. স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডার বা দলিল লেখক হিসেবে লাইসেন্স নবায়নে।
১৯. ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স, কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্স, ফ্রেট ফরওয়ার্ডিং লাইসেন্স ও বায়িং হাউস নিবন্ধন পেতে ও নবায়নে।
২০. যেকোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ পেতে ও বহাল রাখতে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাসের সংযোগ পেতে।
২১. সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে।
২২. লঞ্চ, স্টিমার, কার্গো, কোস্টার ও ডাম্ব বার্জসহ যেকোনো প্রকারের ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট পেতে ও বহাল রাখতে।
২৩. পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইট উৎপাদনের অনুমতি পেতে ও নবায়নে।
২৪. সিটি করপোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে।
২৫. কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেতে ও বহাল রাখতে।
২৬. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে ও বহাল রাখতে।
২৭. আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়।
২৮. ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত খোলায় ও বহাল রাখতে।
২৯. ১০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনায়।
৩০. পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে।
৩১. ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা উৎপাদন কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানকারী পদমর্যাদায় কর্মরত ব্যক্তির বেতন–ভাতা পেতে।
৩২. স্বাভাবিক ব্যক্তি ব্যতীত অন্যান্য করদাতার ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে।
৩৩. অ্যাডভাইজরি বা কনসালট্যান্সি সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ, নিরাপত্তাসেবা সরবরাহ বাবদ নিবাসী কর্তৃক কোনো কোম্পানি থেকে কোনো অর্থ পেতে।
৩৪. বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট নিবন্ধন বা নবায়নে।
৩৫. দ্বি–চক্র বা ত্রি–চক্র মোটরযান ব্যতীত অন্যান্য মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নের সময়।
৩৬. এনজিও–বিষয়ক ব্যুরোয় নিবন্ধিত এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি থেকে লাইসেন্স পাওয়া ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার অনুকূলে বিদেশি অনুদানের অর্থ ছাড় করতে।
৩৭. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ই–কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং অথরিটির কাছ থেকে লাইসেন্স নবায়নে।
৩৮. কোম্পানি আইন ও সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ লাভ ও নবায়নের ক্ষেত্রে।
৩৯. পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের উদ্দেশ্যে নিবাসী কর্তৃক টেন্ডার ডকুমেন্টস দাখিলের সময়।
৪০. পণ্য আমদানি বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের সময়।
৪১. রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক গঠিত অনুরূপ কর্তৃপক্ষ অথবা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য ভবন নির্মাণের নকশা জমা দেওয়ার সময়।
৪২. কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ গ্রহণের সময় বাড়ির মালিকের।
৪৩. কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণের সময় সরবরাহকারীর বা সেবা প্রদানকারীর।
৪৪. হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স পেতে ও নবায়নের সময়।
৪৫. সামাজিক অনুষ্ঠান, করপোরেট প্রোগ্রাম, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রশিক্ষণসহ সমজাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া বা অন্য সেবা গ্রহণের সময় সেবা গ্রহণকারীর।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করয গ য র করদ ত এনব আর সরবর হ কর ত ক ন বন ধ র জন য এল ক য় গ য আয় গ রহণ ব যবস প রসভ র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
আচরণবিধি সম্পর্কে অধিকাংশ পোলিং অফিসারের ন্যূনতম ধারণা ছিল না: ছাত্রদল
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ১১টি অনিয়মের অভিযোগ দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব, নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে অধিকাংশ পোলিং অফিসারের ন্যূনতম ধারণা না থাকা, ভোটারদের নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ, ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর না থাকা, ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি।
আজ সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের পক্ষ থেকে অভিযোগগুলো তুলে ধরা হয়।
৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ ভিপি–জিএস–এজিএসসহ ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জিতেছে। ডাকসুর কোনো পদে জিততে পারেনি ছাত্রদল।
ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে একটি বিশেষ মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে তাঁদের (ছাত্রদল) শিক্ষার্থীদের সামনে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর তাঁরা নানা অনিয়ম দেখেন। তাঁরা নিয়ম মেনে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জানান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেসবের সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়।
১১ অভিযোগসংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশাসন নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের (ছাত্রদল) জায়গা থেকে নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। এ সময় তিনি ১১টি অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন।
অভিযোগগুলো হলো—১. ভোটারকে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ, ভোটার উপস্থিত হওয়ার আগেই ভোটার তালিকায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দিয়ে দেওয়াসহ নানা জালিয়াতির সংবাদ নির্বাচন চলাকালে গণমাধ্যমে এসেছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রদানের হারে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাসহ অধিকাংশ প্যানেল ও একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটার উপস্থিতির তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। ঢাবি প্রশাসন সে বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কালক্ষেপণ করছে।
আরও পড়ুনভুল বলেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, নিয়ম ভাঙেননি ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫২. ২০১৯ সালের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর ছিল না। ফলে ছাত্রলীগ নীরবে ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল। এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারেও কোনো ক্রমিক নম্বর ছিল না। এ ছাড়া ছাপানো ব্যালট পেপারের সংখ্যা, ভোটকেন্দ্রে সরবরাহকৃত-ব্যবহৃত-বাতিল হওয়া ব্যালট পেপারের সংখ্যা এবং ভোট গ্রহণ শেষে ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। বারবার জানতে চাওয়ার পরেও এ-সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রে দায়িত্বরত পোলিং এজেন্টদের জানানো হয়নি। ফলাফল প্রকাশের পর উল্লিখিত অভিযোগগুলো নিয়মানুযায়ী চিফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর দায়ের করতে গেলে তিনি ঢাবি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরবর্তী সময়ে ব্যালট পেপার–সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক প্রার্থী ও পোলিং এজেন্ট যথাযথ প্রক্রিয়ানুসারে অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু ঢাবি প্রশাসন তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করছে।
৩. নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার কোন প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অনিরাপদ ছাপাখানা থেকে ফাঁস হওয়া নকল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির অভিযোগ ইতিমধ্যে এসেছে। ৭ সেপ্টেম্বর নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে ঢাবি প্রশাসনের কোনো নজরদারি ছিল না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
৪. ডাকসু নির্বাচনের চার দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভোট গণনা মেশিনসহ সফটওয়্যার নির্ভুলতা-বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের সময় নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষক-টেকনিশিয়ান উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ভোটার ও প্রার্থীদের এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। ভোট গণনার বিষয়ে ইতিমধ্যে নানান অভিযোগ ও বিতর্ক সামনে এসেছে। কিন্তু একটি কার্যকর গণনা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের বিতর্ক তৈরি হতো না।
আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের এমন ভরাডুবির কারণ কী১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫৫. প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভোটের আগের মধ্যরাতে পোলিং এজেন্টদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় প্রার্থীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন কেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের বাদ দেওয়া হয়। কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পোলিং এজেন্টদের বাছাই করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
৬. ভোট গ্রহণের আগে পোলিং এজেন্টদের আইডি কার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু তা যথাসময়ে সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে অনেক পোলিং এজেন্ট যথাসময়ে উপস্থিত হয়েও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। অনেক ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের অনুপস্থিতিতে পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
৭. একটি নির্দিষ্ট প্যানেল বাদে সব প্রার্থী ও প্যানেলকে জানানো হয়, ৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। কিন্তু ভোটের দিন দেখা যায়, ৮টি ভোটিং এরিয়ায় মোট ১৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। যে কারণে নির্দিষ্ট প্যানেলটি ছাড়া আর কোনো প্রার্থী বা প্যানেল ১৮টি কেন্দ্র অনুসারে পোলিং এজেন্ট দিতে পারেনি।
৮. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক পোলিং অফিসার নিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের ঢাবি প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি (চিফ রিটার্নিং অফিসার) জানিয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা ছিল না অধিকাংশ পোলিং অফিসারের। ফলে নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে তাঁরা সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছেন।
আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনে শিবিরের জয়ের কারণ দীর্ঘ প্রস্তুতি১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫৯. নিরাপত্তাসহ ভোটসংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা কতিপয় অতি উৎসাহী বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্ল গাইডস সদস্যের ভূমিকা ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কতিপয় বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্ল গাইডস সদস্যের সহায়তায় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযোগ এসেছে। একাধিক বহিরাগত শিবিরকর্মীকে শিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করা হয়েছে।
১০. ভোট গণনার সময়ে পোলিং এজেন্টদের কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে বাধ্য করা হয়েছে। ভোট গণনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে পোলিং এজেন্টদের যথাযথভাবে যুক্ত করা হয়নি। এ ছাড়া গণনা প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল। এর প্রতিবাদে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের সব পোলিং এজেন্টসহ অধিকাংশ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদে শীর্ষ ৫৪ পদের ৫৩টিতেই ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী জয়ী১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫১১. ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করায় বিভিন্ন অভিযোগ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া অধিকাংশ বুথে নির্বাচনের দিন বেলা ১১টা ৩০ মিনিটের পর থেকে মার্কারপেন ছিল না। ফলে ভোটারদের বলপেন দিয়ে ব্যালট পেপারে ক্রস চিহ্ন দিতে হয়েছে। বলপেনে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ভোটগুলো ওএমআর মেশিন সঠিকভাবে রিড করতে পারেনি। তাই অনেক ভোট গণনা করা হয়নি বলে পোলিং এজেন্টরা লক্ষ করেছেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরের ভোটগুলোতে বলপেন ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে ভোট নষ্ট করার হীন চেষ্টা ছিল কি না, তা নিয়ে অধিকাংশ প্রার্থীর মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ভোটার চিহ্নিত করার জন্য আঙুলে যে মার্কারের কালি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি অস্থায়ী কালি হওয়ায় একই ব্যক্তি একাধিক ভোট দিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
আবিদুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইন ও বিধি অনুসারে এই অনিয়ম-অসংগতিগুলোর বিষয়ে বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সমাধানের অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে কালক্ষেপণ করেছে। যার ফলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ ইতিহাসের পাতায় একটি নেতিবাচকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে ঠাঁই পাওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন।
ছাত্রশিবিরের অভাবনীয় জয় যেসব কারণেডাকসুর ২৮ পদে কার সঙ্গে কার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো, জয়ের ব্যবধান কতডাকসুর ২৮ পদে কারা কোনটিতে জয়ীফলাফল বিশ্লেষণের পর আমরা আমাদের জবাব দিব: ছাত্রদল সভাপতি রাকিব