ঢাকার অদূরে সাভারে চতুর্থবারের মতো গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (গকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে বেলা তিনটা পর্যন্ত। নির্বাচন উপলক্ষে নিরাপত্তা বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাত বছর পর ভোটের মধ্য দিয়ে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।

গকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদ ও অনুষদ সংসদ দুটি ভাগে ভোট হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংসদের ১১টি পদে ৪৬ জন ও পাঁচটি অনুষদের মোট ১০টি পদসহ সর্বমোট ২১টি পদে ৬৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদের এক প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়ের পর নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনে ভোট দেবেন ৪ হাজার ৭৬১ জন শিক্ষার্থী।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীরা। একাডেমিক ভবনের মূল ফটকে নারী ও পুরুষের আলাদা সারি করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ওই ভবনের ১৯টি কেন্দ্রের ১৯টি বুথে ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। এসব কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রিজুয়ানা আফরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জীবনে এটিই প্রথম ভোট। আমাদের ভোটে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তাঁরা যেন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে আমরা ভোট দিয়েছি।’

ভোট দিতে আসা বিবিএ বিভাগের সাকিব হাসান বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে খুবই শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রার্থীরাও একে অপরের সঙ্গে বেশ আন্তরিক। নির্বাচনে যাঁরা জয় পাবেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কাজ করবেন বলে তাঁদের প্রত্যাশা।

ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তৃশা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র আমাদের ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। অনেকটা পাবলিক ইউনিভার্সিটির মতো নিয়ম মেনে এখানে নির্বাচন হচ্ছে। এমন সুন্দরভাবে নির্বাচন হবে, এটা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশি। সত্যিই খুব ভালো লাগছে।’

বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো.

আবুল হোসেন একাডেমিক ভবনের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তবে তিনি কোনো কেন্দ্রে প্রবেশ করেননি। এ সময় গকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল আলমসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রফিকুল আলম বলেন, আগামী সপ্তাহে পূজার ছুটি। যে কারণে ভোটার সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। সারা দিনই ভোট চলবে। বিকেলে ভোটার বেশি হলে নির্দিষ্ট সময়ের পরও কেন্দ্রে যাঁরা উপস্থিত থাকবেন, তাঁদের ভোট নেওয়া হবে। কোনো রাজনৈতিক প্রভাব নেই। আশা করছেন ভোট গ্রহণ হওয়ার পর তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

উপাচার্য মো. আবুল হোসেন বলেন, শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচন কমিশনার ভেতরে গিয়েছেন। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিচ্ছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু গণ বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর কোভিড ছিল। এখন সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আশা করছেন, নির্বাচনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচনে ভিপি পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৪ জন এবং এজিএস পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া কোষাধ্যক্ষ পদে চারজন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে তিনজন, দপ্তর সম্পাদক পদে ছয়জন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে চারজন, সহক্রীড়া সম্পাদক পদে চারজন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে তিনজন, সহসাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে দুজন, সমাজকল্যাণ ও ক্যান্টিন সম্পাদক পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন।

গকসুর অনুষদ নির্বাচনে কৃষি অনুষদের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে দুজন, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেসে চারজন, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে চারজন, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী অনুষদে সাতজন, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান অনুষদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। গত ১১ আগস্ট গকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন প র র থ পর ব শ করছ ন চ রজন

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুরে মেতেছে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা

দিনাজপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিজয়া দশমীতে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলা। 

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা বিসর্জন কেন্দ্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু ও প্রবীণ সবাই অংশ নেন এই আনন্দঘন উৎসবে।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন

বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন, সদরঘাটে ভক্তদের ঢল

শঙ্খধ্বনি, ঢাক-ঢোলের তালে প্রতিমার সামনে একে অপরের মুখে, কপালে ও গালে সিঁদুর লেপন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ভক্তরা। লাল রঙে রঙিন হয়ে ওঠে চারপাশ, সৃষ্টি হয় এক অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশ। সিঁদুর খেলাকে কেন্দ্র করে শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।

দিনাজপুর শহরের বড় মণ্ডপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিমা বিসর্জনের আগে এভাবেই মা দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা।

পণ্ডিতদের মতে, বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা মূলত মা দুর্গাকে বিদায়ের আগে তাকে শুভকামনা ও আশীর্বাদ জানানোর একটি প্রতীকী রীতি। বিশেষত বিবাহিত নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে স্বামীর দীর্ঘায়ু ও পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন।

দিনাজপুর শহরের রাজবাটি, কালীতলা, বড় মণ্ডপসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছিল এই উৎসবের প্রাণবন্ত আয়োজন। ছোট-বড় সবাই লাল সিঁদুরে রঙিন হয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

শেষ বিকেলে ঢাক-ঢোলের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়। দিনাজপুরে সিঁদুর খেলার এ উৎসব শুধু ধর্মীয় আবেগ নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের এক রঙিন প্রকাশ।

স্থানীয় পূজারী সুবর্ণা রায় বলেন, “মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে মন খারাপ লাগে। তবে সিঁদুর খেলা আনন্দের মধ্য দিয়ে সেই বিষাদকে কিছুটা কমিয়ে দেয়।”

অর্পিতা এক কলেজ ছাত্রী জানান, সারা বছর অপেক্ষা করি দুর্গাপূজার জন্য। আজকের দিনটা আবেগের, আবার আনন্দেরও। মা-কে বিদায় জানালেও সিঁদুর খেলায় মন ভরে যায়।

দিনাজপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “সিঁদুর খেলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এই খেলায় আমরা শুধু আনন্দই পাই না, বরং ঐক্যের বার্তাও ছড়িয়ে যায়।”

আরেক তরুণ ভক্ত রুবেল দেবনাথ বলেন, “সিঁদুর খেলা শুধু একটি আচার নয়, এটি আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও আনন্দ ভাগাভাগি করার এক বিশেষ উপলক্ষ।”

ঢাকা/মোসলেম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দিনাজপুরে মেতেছে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা
  • কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন
  • ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা
  • পূজার ছুটির পর গকসুর অভিষেক