আমরা শাসক নয়, সেবক হব: জামায়াত আমির
Published: 25th, September 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে চাইনিজ পিপলস ইনস্টিটিউট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, রাষ্ট্রদূত মি. ঝৌ পিং জিয়ানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জামায়াতের মগবাজার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাক্ষাতে আসন্ন নির্বাচন, বিগত সময়ে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর শাসক দলের অত্যাচার নির্যাতন, দলীয় নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া, দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচারসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। তারা আন্তরিকতার সঙ্গে মতবিনিময়ে মিলিত হন।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
বাকৃবির ননী ফল সুপার ফুড নাকি লিভারের জন্য হুমকি?
চাইনিজ পিপলস ইনস্টিটিউট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ঝৌ পিংজিয়ানের সঙ্গে ছিলেন এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা বিষয়ক বিভাগের পরিচালক (সিপিআইএফএ) মি.
জামায়াত আমিরের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং জামায়াত আমিরের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।
বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সম্মানিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়েছি। আমিরের সঙ্গে তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় হয়েছে।”
“আমির জামায়াত অসুস্থ হওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে এই প্রথম কেন্দ্রীয় অফিসে বিদেশি কোনো ডেলিগেশনের সামনে উপস্থিত হতে পেরে তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন এবং সম্মানিত অতিথিবৃন্দকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।”
৭৫-এর পর বাংলাদেশের সঙ্গে চায়নার কূটনৈতিক ও বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের কথা স্মরণ করা হয়েছে। বৈঠকে জামায়াত আমির চীনরে নেতাদের বলেছেন, “চীন ও বাংলাদেশ পরস্পর উন্নয়ন সহযোগী। আমরা একত্রে উভয় দেশের কী কী উন্নয়ন করতে পারি এবং বন্ধুত্বের চেয়ে প্রতিবেশীর ঘনিষ্ঠ ব্রাদারলি রিলেশনকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। অর্থনীতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ নিজেদের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছি।”
গোলাম পরওয়ার বলেন, “পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামীর ওপর অকথ্য জুলুম-অত্যাচার চালানো হয়েছে। আমাদের নেতাদেরকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের অফিসগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। আমাদের কষ্টের এই স্মৃতিগুলো জামায়াত আমির চায়না নেতাদের নিকট তুলে ধরেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার বিদায় নিয়েছে। কিন্তু বিদায় নেওয়ার পরও ষড়যন্ত্র থেকে তারা থেমে থাকেনি। একটি দেশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমান গ্লোবাল পরিস্থিতি ও পলিটিক্স, গ্লোবাল সিকিউরিটিসহ নানা বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কীভাবে ভবিষ্যতে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি এবং দুই দেশের মধ্যে সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ, সম্প্রীতিপূর্ণ আলোচনা কীভাবে এগিয়ে নিতে পারি তা আমিরে জামায়াত চায়না প্রতিনিধিদলের সামনে তুলে ধরেছেন।”
“বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে লুট হয়ে গেছে। করাপশন, অর্থপাচারে আমাদের অর্থনীতি একেবারে শেষ হয়ে গেছে সেটা আমিরে জামায়াত তুলে ধরেছেন।”
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “জামায়াতে ইসলামী সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল। একটি নির্বাচনমুখী দল। উনাদের প্রশ্নের জবাবে আমিরে জামায়াত বলেছেন,সব গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ইতোপূর্বে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেছে এবং আমরা প্রত্যেক পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। জামায়াতে ইসলামী ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমান মর্যাদা এবং মানবিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকসহ সব অধিকারকে আমরা মেইনটেইন করে পথ চলি।”
দেশের জনগণ যদি জামায়াতে ইসলামীকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন, এ ব্যাপারে জামায়াত আমির বলেন, “আমরা শাসক হব না, আমরা সেবক হব। সবাই সমতার ভিত্তিতে অধিকার ভোগ করবেন। আমাদের দেশটা বিপুল জনসংখ্যার দেশ। উন্নয়নের জন্য চায়নার এক্সপোর্ট প্রসেসিংসহ নানান অর্থনীতি উন্নয়নের বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করছি। আমাদের সামনে সেই সম্ভাবনা আছে।”
সম্প্রতি চায়না অ্যাম্বাসির আয়োজনে চায়নার ৫০তম বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করায় চায়নার প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, “চায়নাসহ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতে চাই। একবিংশ শতাব্দীতে নতুন উন্নত বিশ্ব গড়ার জন্য চায়না কী ধরনের কাজ করছে এবং চায়না কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চায়নার কী পরিমাণ অগ্রগতি হয়েছে তা উল্লেখ করে চায়নার প্রতিনিধি দল আমিরে জামায়াতকে বলেন যে, আপনি ও আপনার প্রতিনিধিদল সম্প্রতি চীন সফরের সময় নিশ্চয়ই সেই দৃশ্য আপনারা দেখে এসেছেন।”
“চীনে আধুনিকীকরণের জন্য চীনা বিপ্লবের ১৯৪৯ থেকে ২০৪৯ শতাব্দীজুড়ে এবং বাকি অংশ অতিবাহিত করার জন্য প্রতি ৫ বছরে তারা ডেভেলপমেন্ট এবং মডার্নাইজেশনের করার জন্য চীন যে উদ্যোগ নিয়েছে; তা তারা জামায়াত নেতাদের অবহিত করেছেন। এর প্রেক্ষিতে আমিরে জামায়াত বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিবেশে আমরা যৌথ পার্টনারশিপের ভিত্তিতে উন্নয়ন ও অগ্রগতি করতে চাই।”
অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, “আঞ্চলিক ও বিশ্ব পরিবেশের বিবেচনায় বাংলাদেশ-চায়না ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য “অগ্রগতি যৌথভাবে রাখবে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে শুধু কৌশলগত প্রয়োজন অনুভব করেন (পার্টি টু পার্টি)। জামায়াতে ইসলামী ও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সুসম্পর্ক, মতবিনিময় এবং স্ট্র্যাটেজিক্যাল ডায়ালগ উনারা অনুভব করেন। আমিরে জামায়াত উনাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সরকারের সঙ্গে সরকার (জিটুজি), পার্টি টু পার্টি উভয় রিলেশন মেইনটেইন হবে চায়নার।”
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “উনারা জানতে চেয়েছেন যে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণে আমাদের প্রস্তুতি কেমন? আমিরে জামায়াত বলেছেন, আমরা সবসময় নির্বাচনমুখী দল। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।”
বিশ্ব মানবাধিকার প্রশ্নে জামায়াত আমির বলেন, “সারা দুনিয়ায় মানবাধিকার যেখানে যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে বিশেষ করে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি, গাজার মুসলমানদের প্রতি অবর্ণনীয় অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন চলছে। সিরিয়া, ইরাক ও মিয়ানমারেও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়াতেও যুদ্ধ চলছে। এসব ক্ষেত্রে চায়নার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখা উচিত।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ম য় ত আম র র জন য চ পরওয় র আম দ র র বল ন বল ছ ন পর ব শ ইসল ম গ রহণ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
১২ দিনের নতুন কর্মসূচি দিল জামায়াত
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে ১ থেকে ১২ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর আগে একই দাবিতে সেপ্টেম্বর মাসে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল দলটি।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে ছাত্রলীগ কর্মীর ছুরিকাঘাতে জামায়াতের যুব বিভাগের নেতা নিহত
ক্ষমতায় গেলে কাউকে দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না: জামায়াতের আমির
পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জামায়াত ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো-
৫ দফা দাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে গণসংযোগ। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা। গোলটেবিল বৈঠক। সেমিনার ইত্যাদি।
এছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ।
যে পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হলো-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি' হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াত ইতোমধ্যে সরকারের কাছে দুটি প্রস্তাব করেছে।
প্রথমত, জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ' জারি করা। দ্বিতীয়ত, এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, সেটা না হলে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ছাড়া ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করতে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে জানিয়েছে জামায়াত।
জামায়াতের এর আগে ঘোষণা করা পাঁচ দফা জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। তাই জনগণের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাইফুল আলম খান, মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ