রাজনীতিবিদেরা ইচ্ছা করে স্থানীয় ক্ষমতাকে খর্ব করেন: বদিউল আলম মজুমদার
Published: 25th, September 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে, যা উন্নয়নের পথে বড় সংকট। নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে গুরুত্ব দিতে চায় না। রাজনীতিবিদেরাও ইচ্ছাকৃতভাবে স্থানীয় ক্ষমতাকে খর্ব করেন। ফলে জনগণের প্রত্যাশিত জবাবদিহি গড়ে ওঠে না।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) আয়োজিত ‘বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া কি বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলে বদিউল আলম মজুমদার। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বনানীতে পিআরআইয়ের কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আজকের আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানেই বলা আছে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্থানীয় শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু বাস্তবে কর্মকর্তাদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা মূল দর্শনের পরিপন্থী।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, বিকেন্দ্রীকরণ মানে হলো সমস্যা যেখানে, সেখানে সমাধান করা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ বা আইনের সমস্যা স্থানীয় পর্যায়েই বেশি প্রকট। তাই ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করেই সমাধান সম্ভব। এর জন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষমতাও দিতে হবে। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার ভূমিকা শুধু পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা বা জাতীয় ইস্যুতে থাকা উচিত। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ কার্যকর স্থানীয় সরকার গড়ে তোলাই টেকসই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের মূল শর্ত।
‘বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া কি বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব?’ শীর্ষক আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের পরিচালক আহমেদ হাসান। তিনি বলেন, বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ স্থানীয় পর্যায়ে দায়বদ্ধতা না থাকায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে গুণগত মান কমে গেছে। সাধারণ মানুষ এর ফল সরাসরি ভোগ করছে।
আহমেদ হাসান বলেন, পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের দ্রুত উন্নয়নের পেছনে বিকেন্দ্রীকরণের বড় ভূমিকা ছিল। আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত দেশ। এখানে উন্নয়নে গতি আনতে আর্থিক ক্ষমতায়নসহ সঠিক কাঠামোয় বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো ইতিবাচক হলেও এখনো অনেক কাজ বাকি। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চেয়ারম্যান পদে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
আলোচক ছিলেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর রিয়াজ। টেকসই উন্নয়নে বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আশির দশকের শেষভাগে ও নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫০ শতাংশের বেশি। এর হার কমে একসময় ২০ শতাংশের নিচে নেমেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে দারিদ্র্য বেড়ে ২৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আঞ্চলিক বৈষম্যও বেড়েছে। চট্টগ্রামে দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশ, বরিশালে ২৬ শতাংশ। উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় এরও বেশি। গ্রামে দারিদ্র্যের হার ৩১ শতাংশ, শহরে ১৯ শতাংশ। তাই বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া এ বৈষম্য মোকাবিলা সম্ভব নয়।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও বিনিয়োগও ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি বলছে, দেশের ৪৪ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঢাকাসহ চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত। বাকি ছয় বিভাগ মিলে রয়েছে ৫৬ শতাংশ। এই অতি কেন্দ্রীকরণ অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট করছে।
উন্মুক্ত আলোচনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও নদী-পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশে শত বছর আগেও স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ মোকাবিলা ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখানকার সমস্যা হলো ক্ষমতা স্থানীয় সরকারের হাতে না থেকে সংসদ সদস্যদের দখলে চলে গেছে। যেখানে কাবিখা-কাবিটার মতো বরাদ্দে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। দুর্যোগ ও জলবায়ু–সংকট মোকাবিলায়ও স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করা জরুরি বলেও জানান তিনি।
পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান বলেন, বিকেন্দ্রীকরণ কার্যকর হবে তখনই যখন স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তৈরি হবে। সক্ষমতা ছাড়া স্বায়ত্তশাসন দিলে দুর্নীতি ও নৈরাজ্য বাড়বে। যেমন এলজিএসপি ফান্ডের টাকায় উন্নয়ন না করে অনেক চেয়ারম্যান শহরে ফ্ল্যাট কিনেছেন। তিনি স্থানীয় সরকারকে বাস্তবে ‘এতিম সরকারব্যবস্থা’ অভিহিত করে শক্তিশালী করার দাবি জানান।
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক খুরশিদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক ন দ র করণ ছ ড় স থ ন য় সরক র ব যবস থ ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নারী নিহত
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের রাজৈরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খাদে পড়ে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
নিহত নিলুফা ইয়াসমিন নিলা (৩০) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রুনসী গ্রামের আবুল বাসারের স্ত্রী।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত
অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, মা-মেয়ে নিহত
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল চন্দ্রা পরিবহনের বাসটি। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিলার মরদেহ উদ্ধার করে। আহত হন অন্তত ২০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মাদারীপুরের মস্তফাপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, বাস খাদে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ