জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ও পরে দেশে ফেরা ১০ জনের বিষয়ে পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) অতিরিক্তি মহাপরিদর্শক মো. রেজাউল করিম বলেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছেন, তাঁরা ও রকম ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বারিধারার কূটনৈতিক পাড়ায় এটিইউর সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে নবনিযুক্ত এটিইউ প্রধান রেজাউল করিম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককে আমরা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সবাই শ্রমিকশ্রেণির মানুষ। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জেনেছি, তারা কেউ ওই রকমভাবে জড়িত ছিল না। তারা মনে করেছিল, দুস্থ ও অসহায় মানুষজনকে সহযোগিতা করতে হবে। সেই জন্য মালয়েশিয়ার সরকারও তাদের ক্লিয়ার করে দিয়েছে। তবে এর পেছনে কেউ জড়িত কি না, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলমান।’

প্রশ্নের জবাবে এটিইউ প্রধান রেজাউল করিম বলেন, ‘বর্তমানে দেশে জঙ্গিবাদ নেই। তবে ভবিষ্যতে কেউ জঙ্গিবাদে জড়াবেন না—এর নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তাই থেমে থাকার সুযোগ নেই, আরও গুরুত্বসহকারে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয়, সহনশীল মুসলিম দেশ, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী বলে উল্লেখ করেন পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল করিম। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, মাদক এবং বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অনলাইন ও সাইবার অপরাধ থেকে দেশকে মুক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

রেজাউল করিম বলেন, দেশের মাটি ও মানুষ সবার। তাই এসব সমস্যা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে বিশেষায়িত ইউনিটের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জনসাধারণের সহযোগিতা, বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে ‘ইনফোমেট’ অ্যাপ এবং একটি যোগাযোগ নম্বর চালু করা হয়েছে, যেখানে তথ্যদাতার গোপনীয়তা সর্বোচ্চ গুরুত্বে রাখা হবে।

রেজাউল করিম বলেন, একটিমাত্র সন্ত্রাসী ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। স্বল্পশিক্ষিত ও বিভ্রান্ত মানুষ কীভাবে ভুল আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার উদাহরণ দিয়ে তিনি তা ব্যাখ্যা করেন। তাঁর ভাষ্যে, সব ধর্মই শান্তির শিক্ষা দেয়, কোনো ধর্মই উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। এ প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমকে সঠিক বার্তা প্রচার এবং ধর্মকে অপব্যবহারকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার আহ্বান জানান তিনি।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এটিইউর অতিরিক্ত আইজিপি রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়। তবে কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে বা ভেজাল কোনো ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে কিংবা দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পড়ে কেউ কেউ বিচ্যুত হতে পারেন। এই আশঙ্কা তো থেকেই যায়। সে কারণে এসব বিষয়কে আমরা নজরদারিতে রাখব, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের সৃষ্টি না হতে পারে। আগামীতে যাতে কোনোভাবেই কোনো সন্ত্রাস–উগ্রবাদ জন্ম না নিতে পারে, সেই জায়গায় অবশ্যই আমরা জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করব।’

বর্তমান সরকার বলছে, বিগত সরকারের আমলে জঙ্গি দমনের নামে নাটক হতো। এটিইউর অনেক কর্মকর্তা পলাতক। এসব কারণে দেশে জঙ্গিবাদ বর্তমানে আসলেই আছে কি না, প্রশ্ন করা হলে অতিরিক্ত আইজিপি রেজাউল করিম বলেন, ‘পেছনে কী হয়েছে না হয়েছে, আপনারাও (সাংবাদিক) জানেন, আমরাও জানি। আমরা বলতে চাচ্ছি, সত্য সত্যই আর মিথ্যা মিথ্যাই। সেই জায়গায় আমরা অবিচল থাকব। কেউ অপরাধ করে থাকলে সেই অপরাধের কোনো ছাড় নেই। আমরা জঙ্গিবাদ নিয়ে দেশে এ রকম কিছু এখনো দেখিনি। কেউ যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিপথে চলে যায়, সে জায়গায় আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে। সেটাই আমরা নজরদারি করব কেউ হঠাৎ করে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে কি না। পেছনে না গিয়ে আমরা ভবিষ্যতের দিকে এগোতে চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সন ত র স

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি উপলক্ষে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শান্তিপূর্ণভাবে এই উৎসব শেষ করার জন্য পুলিশ, র‍্যাব, এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

আরো পড়ুন:

ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা

বুড়িগঙ্গায় চলছে প্রতিমা বিসর্জন

পুলিশ জানায়, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা এবং বিসর্জন স্থানসমূহে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। শুধু ঢাকাতেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য এবং অতিরিক্ত আরো প্রায় ২ হাজার ৪০০ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র‍্যাবের ৯৪টি টহল টিম সাদা পোশাকে নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছে।

বিশেষ নজরদারি
প্রতিমা বিসর্জনের মূল ঘাটগুলো, যেমন—পলাশীর মোড়, রায়সাহেব বাজার ও ওয়াইজঘাট এলাকায় অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ঘাটকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত
যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত, বোম ডিসপোজালও কে-নাইন ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

নৌ-নিরাপত্তা:
নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সাঁতার না জানা ব্যক্তিদের নৌকায় উঠতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার অনুরোধ করা হয়েছে। বিসর্জনস্থলে প্রশিক্ষিত ডাইভার (ডুবুরি দল) প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যদের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ:
শোভাযাত্রার পথ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রার সময় যান চলাচলের জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পূজা কমিটির প্রতি নির্দেশনা:
পূজামণ্ডপগুলোতে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মণ্ডপে ব্যাগ, থলে বা পোঁটলা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সব নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত ও কঠোর তৎপরতায় প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে আশা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করা বাংলাদেশিরা নজরদারিতে: আইজিপি