Prothomalo:
2025-10-03@02:41:27 GMT

বাড়াতে হবে ভোজ্যতেলের উৎপাদন

Published: 26th, September 2025 GMT

দেশে বছরে প্রায় ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়। অথচ ভোজ্যতেলের উচ্চ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয়ভাবে তেলবীজ (যে বীজ থেকে তেল হয়) উৎপাদনের পরিমাণ খুবই কম। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে হলে দেশে তেলবীজের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সঠিক বীজ, প্রযুক্তি ও নীতিসহায়তা। অন্যদিকে ভোক্তারাও শুধু এক ধরণের তেল না খেয়ে কয়েক ধরনের তেল খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথ অন্বেষণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথাগুলো জানান বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গোলটেবিল বৈঠকটি যৌথভাবে আয়োজন করে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও প্রথম আলো। সহযোগিতা করেছে ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাস।

গোলটেবিল সভায় বক্তারা জানান, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি করা হয়, পরিমাণে তা প্রায় ৩০ লাখ টন। এর মধ্যে ১৫ লাখ টন পাম তেল ও ১০ লাখ টন সয়াবিন তেল। ২০৩০ সালের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়ে ৩৫ লাখ টন হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও সম্মিলিত প্রচেষ্টার অভাব রয়েছে।

সভায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো.

আবদুল মুঈদ বলেন, ধান চাষকে কৃষকেরা সব সময়েই অগ্রাধিকার দেবেন। কিন্তু বোরো ও আমনের মধ্যবর্তী সময়ে পতিত জমিতে উচ্চফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি শর্ষে বা সয়াবিন চাষ করা যায়। বর্তমানে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে যেভাবে সয়াবিন চাষ হচ্ছে, সেভাবে সারা দেশেই চাষ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

দেশে শর্ষে দানা প্রক্রিয়াজাতের সময় ভালো যন্ত্র ব্যবহার করলে তেলের উৎপাদন আরও ১০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, অনেক সময় বাজারে শর্ষের দাম পড়ে যায়। তাই ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে তেল কেনা হলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। শর্ষের তেলের পাশাপাশি সয়াবিন, সূর্যমুখী ও কুঁড়ার তেলেরও ভালো বাজারের সম্ভাবনা রয়েছে, যা কাজে লাগানো প্রয়োজন।

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সফিউল ইসলাম আফ্রাদ বলেন, কৃষকদের জোর করে কোনো কিছু ধরিয়ে দেওয়া যাবে না। তেলবীজের উৎপাদন বাড়াতে, বিশেষ করে জমি ও উপযোগী বীজ বাছাই, সেচ প্রভৃতি বিষয়ে কৃষকদের নির্দেশনা দিতে হবে। অন্যদিকে ফসল সংরক্ষণের জন্য গুদামের ব্যবস্থা করা ও আধুনিক যন্ত্রে তা প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশে ভোজ্যতেলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক। তাদের সহায়তা করছে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। তারা সারা দেশে ৭০ হাজারের বেশি কৃষককে জলবায়ু-সহনশীল কৃষি পদ্ধতি ব্যবহারে প্রশিক্ষিত করেছে। সরবরাহ করছে উন্নত মানের তেলবীজ।

এ প্রসঙ্গে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান বলেন, ‘দেশেই ভোজ্যতেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে আমরা করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও কৃষকদের নিয়ে একটি টেকসই ব্যবসা মডেল তৈরি করতে পেরেছি। তবে বিভিন্ন এলাকা ও মৌসুমভেদে উন্নত প্রজাতির বীজ উদ্ভাবন ও বীজের সুরক্ষা জরুরি। এ জন্য আমাদের একটা উপযুক্ত বীজনীতি থাকা উচিত।’

এইচএসবিসির সাসটেইনেবিলিটি বিভাগের প্রধান সৈয়দা আফজালুন নেসা বলেন, ‘যেসব ফসল মাটি ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভালো, সেগুলোর বিস্তার বাড়াতে আমরা সহযোগিতা করে থাকি। আমরা চাই এসব ফসল চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা নিজেরাই যেন টেকসই ও লাভজনক ফসল উৎপাদনে যেতে পারেন।’

স্থানীয় পর্যায়ে সয়াবিন বা শর্ষে চাষ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভালো বীজের সংকটকে বড় সমস্যা বলে মনে করছেন গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল করিম। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বীজ কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসতে পারে। বিশেষ করে কৃষকের মাঝে কম তাপ ও লবণসহনীয় বীজ সরবরাহ করা গেলে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপক রীনা রানী পাল বলেন, বর্তমানে দেশে একজন মানুষ খাবার হিসেবে দৈনিক গড়ে ৩১ গ্রাম তেল গ্রহণ করেন। এর বেশির ভাগই মূলত সয়াবিন তেল। তবে রান্নায় শুধু এক ধরনের তেল ব্যবহার না করে একাধিক ধরনের তেল খেলে সেটি শরীরের জন্য বেশি নিরাপদ ও পুষ্টিকর হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান জানান, ভোজ্যতেলে শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়ানো সম্ভব নয়, তবে অবশ্যই উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, বীজের বৈচিত্র্য বাড়ানো ও সেগুলো কৃষক পর্যন্ত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।

গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে শর্ষে চাষের জমির পরিমাণ চার গুণ বেড়েছে বলে সভায় জানান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটোমলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, শর্ষের মতো সয়াবিন চাষও আশার আলো দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও নীতিসহায়তা দিয়ে এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার অ্যাগ্রিকালচারের (বিনা) গবেষণা পরিচালক মো. হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আবহাওয়ায় ও জমিতে চাষ উপযোগী বীজ নিয়ে কাজ করছি। এ ধরনের কিছু প্রজাতি কৃষকের কাছে পৌঁছানো গেলে সেটি ফলনে প্রভাব ফেলবে। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।’

গোলটেবিল সভায় আরও বক্তব্য দেন গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন আবদুল বাসেত মিয়া, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ মান্নান, সুপারশপ ইউনিমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) গাজী মাহফুজুর রহমান, নারিশ ফুডের উপমহাব্যবস্থাপক (পণ্য উন্নয়ন) মোহাম্মদ ফসিউল আলম ভূঁইয়া, চেঞ্জ মেকার ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক সৈয়দ তামজিদুর রহমান, ফৌজিয়া ফুডসের স্বত্বাধিকারী আফরোজা সুলতানা ও নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সয়াবিনচাষি মো. নিজাম উদ্দিন জাহাঙ্গীর।

সভার শুরুতে ভোজ্যতেল নিয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপনা করেন সলিডারিডাড নেটওয়ার্কের প্রাইভেট সেক্টর এনগেজমেন্টের হেড অব সাপ্লাই চেইন মো. মুজিবুল হক।

গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ জ যত ল র ব যবস থ ল খ টন র জন য ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব  প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি  এখন সারানো  হয়েছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।  

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।

ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।  পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’

ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ